‘মুফতি হান্নানরা প্রাণভিক্ষার জন্য ৭দিন সময়’

  23-03-2017 01:14PM


পিএনএস, গাজীপুর: মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়েছে মুফতি হান্নানসহ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিনজনকে। এখন কারাবিধি অনুযায়ী তারা সাতদিন সময় পাবেন বলে জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন।

বৃহস্পতিবার সকালে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে ৪৯তম কারারক্ষী ও মহিলা কারারক্ষী মৌলিক প্রশিক্ষণ কোর্সের নব নিয়োগপ্রাপ্তদের শপথ গ্রহণ এবং সমাপণী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন স্বরাষ্ট্র সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।

সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেন, মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানোর পর প্রাণভিক্ষা চাওয়ার জন্য কারাবধি অনুয়ায়ী মুফতি হান্নানসহ তিনজন সাতদিনে সময় পাবেন।

এদিকে বুধবার সন্ধ্যায় কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি সেলে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিনেতা মুফতি আব্দুল হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলম বিপুলকে মৃত্যুপরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ওই সময় থেকেই দিন গণনা শুরু হওয়ার কথা।

এর আগে বুধবার ঢাকা পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি বলেছিলেন, বিচারিক আদালত থেকে মৃত্যু পরোয়ানা (ডেথ ওয়ারেন্ট) এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ফাঁসি কার্যকরের আদেশের কাগজপত্র এলে জেলকোড অনুসারে মুফতি হান্নানসহ তিন জনের ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হবে। সব সময়ই ফাঁসি কার্যকরে প্রস্তুত থাকে বলে জানান তিনি।

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের শীর্ষনেতা মুফতি হান্নান ও শরীফ বর্তমানে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি রয়েছেন। এ মামলার অন্য দণ্ডিত দেলোয়ার হোসেন রিপনকে রয়েছে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে কনডেম সেলে।

বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার পর মুফতি আবদুল হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলম বিপুলকে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে করা রিভিউ খারিজের রায় পড়ে শোনানো হলে তারা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইেবন বলে জানান। আর দেলোয়ার হোসেন রিপনও একই কথা জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে সাড়া না পেলে কারাবিধি অনুসারে প্রথম দু’জনের কাশিমপুরে এবং অন্যজনের সিলেটে ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা হতে পারে বলে জানিয়েছে উচ্চ পর্যায়ের কারা সূত্র।

কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের জেল সুপার মো. মিজানুর রহমান জানান, বুধবার সকাল ১০টার দিকে মুফতি হান্নানসহ দুই জঙ্গিকে রিভিউ আবেদন খারিজের রায় পড়ে শোনানো হয়। এসময় তারা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার কথা জানান।

তিনি আরো জানান, সকল প্রকার আইনি প্রক্রিয়া শেষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেলেই কেবল রায় কার্যকরের ব্যবস্থা নেবে কারা কর্তৃপক্ষ। আর সরকারি আদেশ বাস্তবায়নের জন্য কারা কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত রয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার দিনগত রাত ১২টার পর রিভিউ খারিজের রায় এ কারাগারে এসে পৌঁছায়। রাত গভীর হয়ে যাওয়ায় তখন তাদের পড়ে শোনানো হয়নি।

রিভিউ খারিজের রায় আদালত প্রকাশ করার পর মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে যাচাই-বাছাই শেষে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে পাঠানো হয়য়।

উল্লেখ্য, এক যুগ আগে ২০০৪ সালের ২১ মে ঢাকায় নিযুক্ত তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা।

এ সময় তিনি সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার মসজিদে জুমার নামাজ পড়ে বের হচ্ছিলেন। হামলায় পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক কামাল উদ্দিনসহ তিনজন নিহত হন।

আনোয়ার চৌধুরী, সিলেটের তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবুল হোসেন, জেলা আইনজীবী সমিতির তৎকালীন সভাপতি প্রয়াত আবদুল হাই খান, স্থানীয় সাংবাদিক মহিবুর রহমানসহ ৭০ জন আহত হন।

আনোয়ার চৌধুরী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার পাটালি ইউনিয়নের প্রভাকরপুর গ্রামে তার পৈতৃক বাড়ি। তিনি ২০০৪ সালের ১৫ মে বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনার হিসেবে নিযুক্ত হন। এর পাঁচ দিন পর সিলেটে গিয়ে গ্রেনেড হামলার শিকার হন।

ওই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় সিলেট কোতোয়ালি থানায় মামলা করে পুলিশ। তদন্তের শুরুতেই ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা ছিল বলে সে সময় অভিযোগ ওঠে। পুলিশ ঘটনার পর প্রথম নয় দিনে নয়জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে, যাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। পরে মামলাটি সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়।

মূলত ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে হুজির সিলেট অঞ্চলের সংগঠন শরীফ শাহেদুল আলমকে গ্রেপ্তারের পর এই হামলার ঘটনায় হুজি-বি ও মুফতি হান্নান জড়িত থাকার কথা জানতে পারে তদন্তকারী সংস্থা। এরপর তদন্ত গতি পায়। এরপর ২০০৫ সালের ১ অক্টোবর ঢাকায় মুফতি হান্নান গ্রেপ্তার হন।

এ ঘটনায় করা দুটি মামলার (হত্যা ও বিস্ফোরক) অভিযোগপত্র দেওয়া হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৭ জুন। ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সামীম মো. আফজাল মুফতি হান্নানসহ তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড ও দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

এরপর ২০০৮ সালে আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের আবেদন) হাইকোর্টে শুনানির জন্য আসে।

২০০৯ সালে আসামিরা আপিল করেন। ৬ জানুয়ারি হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়। নয় দিন শুনানি নিয়ে গত ১১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে বিচারিক আদালতে দেওয়া দণ্ড বহাল থাকে। গত ২৮ এপ্রিল হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।

এরপর মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা তিন আসামির মধ্যে হান্নান ও শাহেদুল ১৩ জুলাই আপিল করেন। এই আপিলের ওপর ৩০ নভেম্বর শুনানি শুরু হয়।

শুরুতে আপিল না করা আসামি দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপনের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত হিসেবে একজন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়। ৬ ডিসেম্বর আপিলের ওপর শুনানি শেষ করে গতকাল রায় দিলেন সর্বোচ্চ আদালত। রায়ে আদালত বলেন, ‘আপিল ডিসমিসড।’

আদালতে রায় ঘোষণাকালে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশির আহমেদ এবং আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. আলী ও হেলাল উদ্দিন মোল্লা উপস্থিত ছিলেন।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন