বাসায় নিয়ে ধর্ষণ : বাদীকে আইনজীবীর ‘অসহযোগিতা’, আসামির জামিন!

  20-04-2017 09:13PM

পিএনএস ডেস্ক : সকাল সাড়ে ১০টায় মামলা এজলাসে ওঠার কথা, কিন্তু আইনজীবীর কোনো খোঁজ নেই। বারবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আসছি-আসছি বলে সময়ক্ষেপণ। অতঃপর নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় এক ঘণ্টা পর আইনজীবী যখন আদালতে হাজির, ততক্ষণে জামিন পেয়ে গেছেন আসামি।

আজ বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটেছে খুলনায় ‘মা ডেকে ঘনিষ্ঠতার পর বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে’ বলে অভিযোগ ওঠা একটি মামলায়। অভিযোগকারী কলেজশিক্ষার্থী দাবি করেন, কালক্ষেপণের অজুহাতে তাঁর সঙ্গে আইনজীবী প্রতারণা করেন।

আসামি এনামুল হক টিটোর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে গত ১৫ মার্চ মামলা করেন ওই ছাত্রী। ওই দিনই এনামুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৩ এপ্রিল এনামুলকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

আজ খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতে এই মামলার আসামি এনামুল হক টিটোর জামিন আবেদনের শুনানি ছিল। কিন্তু মামলা চলাকালে খুলনায় ব্লাস্টের সমন্বয়কারী ও আইনজীবী অশোক কুমার সাহা আদালতে হাজির হননি। কলেজছাত্রীর পক্ষে আদালতে তাঁরই যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করার কথা ছিল। কিন্তু বাদীপক্ষের কোনো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত না থাকায় সহজে জামিন পেয়ে যান আসামি।

ওই শিক্ষার্থীর মা অভিযোগ করেন, সাড়ে ১০টায় মামলা আদালতে ওঠার কথা ছিল। এ কারণে মেয়েকে নিয়ে তিনি আদালত প্রাঙ্গণে যান। কিন্তু সেখানে ব্লাস্টের আইনজীবী অশোক কুমার সাহাকে না পেয়ে ফোন করেন। আইনজীবী তখন তাঁদের নিজের দপ্তরে ডেকে নেন। সেখানে তাঁদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়। মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বিভিন্ন প্রলোভনও দেখানো হয়। কিন্তু তাঁরা রাজি না হওয়ায় ও মামলা আদালতে ওঠার সময় হয়ে যাওয়ায় অশোক কুমার সাহা তাঁদের আদালতে চলে যেতে বলেন। সঠিক সময়ে তিনি আসবেন বলে জানানো হলেও তিনি আসেন প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে। ততক্ষণে জামিন হয়ে যায় আসামির।

কলেজছাত্রীর মা অভিযোগ করেন, ‘ব্লাস্টের আইনজীবী অশোক সাহাও মেয়েকে মা ডেকে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি আসামির আইনজীবীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জামিন পেতে সহযোগিতা করেছেন বলে আমাদের মনে হচ্ছে।’

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য অশোক কুমার সাহার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় শুনেই আরেকজনকে ফোনটি ধরিয়ে দেন। নিজেকে জাফর পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি দাবি করেন, অভিযোগপত্রে মেয়েটিকে ধর্ষণের কোনো আলামত নেই। এ কারণে আসামি জামিনে ছাড়া পেয়ে গেছেন। ব্লাস্টের কোনো আইনজীবী আদালতে হাজির ছিলেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সব কথা তো আর ফোনে বলা যাবে না। আপনি বারে আসেন।’ এ কথা বলেই তিনি মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন বলেন, তাঁরা এ বিষয়ে অভিযোগ শুনেছেন। এই আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। তবে এই আইনজীবীর বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে এখন পর্যন্ত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবে যেহেতু অভিযোগ এসেছে, তাই বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।

পিএনএস/জে এ মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন