জরুরি অবস্থা দিতে রাষ্ট্রপতি বাধ্য হয়েছিলেন

  18-05-2017 08:18AM

পিএনএস ডেস্ক: ওয়ান-ইলেভেনের সময়ে ব্যবসায়ীদের অর্থ ফেরত সংক্রান্ত এক মামলার রায়ে সেসময়ে সামরিক বাহিনীর কিছু সদস্যের ভূমিকা নিয়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজ উদ্দিন আহমেদ সংবিধান লঙ্ঘন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি (ওয়ান-ইলেভেন) কিছু সামরিক কর্মকর্তা রাষ্ট্রপতিকে জরুরি অবস্থা জারি করাতে বাধ্য করেছিলেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে নেওয়া ৬১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা তিন মাসের মধ্যে ফেরত দিতে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে গত ১৬ মার্চ রায় দেন আপিল বিভাগ। সেই রায়ের ৮৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা নিজে রায়টি লিখেছেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন-বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

রায়ে একদিকে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। একইসঙ্গে রায়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্যের অতীত ভূমিকার কথাও ওঠে এসেছে।

রায়ে সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা করে বলা হয়েছে, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বেসামরিক বাহিনীকে সহায়তা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে কোস্টগার্ড় চোরাচালান ও জলদস্যুতা প্রতিরোধ, সমুদ্রসীমায় সম্পদ রক্ষা, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশেষ দায়িত্ব পালনের মতো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। এ ছাড়া ১৯৮০ সাল থেকে জাতিসংঘের অধীনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তি রক্ষায় ভূমিকা রেখে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে।

সশস্ত্র বাহিনীর কিছু সদস্যের বিতর্কিত অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সশস্ত্র বাহিনীর একটি অন্ধকার দিকও রয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবার-পরিজন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকেও নৃসংশভাবে হত্যায় কিছু বিপথগামী সেনা সদস্যের জড়িত থাকার বিষয়টি রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

রায়ে আরো বলা হয়েছে, ১৯৭৫ এবং ১৯৮২ সালে কিছু বিপথগামী, ক্ষমতালোভী উচ্চ পদস্থ সেনা কর্মকর্তা সামরিক আইন জারি করে। এসব বিপথগামী কর্মকর্তা ও জোয়ানদের দায় জাতীয় এ বাহিনীটির নেওয়া উচিত না।

এরপর আসে ওয়ান-ইলেভেনের প্রসঙ্গ। রায়ের এ অংশে বলা হয়েছে, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজ উদ্দিন আহমেদ সংবিধান লঙ্ঘন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর একইভাবে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি কিছু সেনা কর্মকর্তা রাষ্ট্রপতিকে জরুরি অবস্থা জারি করাতে বাধ্য করেন। কিন্তু সে অবস্থায় এটিই তাদের একমাত্র দায়িত্ব ছিল না। এই অবৈধ ক্ষমতা গ্রহণ রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ মানুষকে বিক্ষুব্ধ করেছে।

ওই সরকারের দুর্নীতি বিরোধী অভিযান সম্পর্কে রায়ে বলা হয়েছে, কিছু উচ্চাভিলাষী সেনা কর্মকর্তা রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করার মধ্য দিয়ে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। আইন বহির্ভুতভাবে কিছু সেনা কর্মকর্তা নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা প্রয়োগ করে। এর ফলে জনসাধারণের কাছে সশস্ত্র বাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।

গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় সশস্ত্র বাহিনী কিভাবে প্রতিষ্ঠিত ও নিয়ন্ত্রিত হবে সে বিষেয়ে রায়ে ৬টি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়।এর মধ্যে রাষ্ট্র ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে মৌলিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ আইনি ও সাংবিধানিক কাঠামো, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা, জাতীয় কৌশল প্রণয়নে আইন সভার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, সরকারের তত্ত্বাবধানে বেসামরিক কর্তৃপক্ষের অধীনে সশস্ত্র বাহিনীর তদারকের মতো বিষয় উল্লেখযোগ্য।

রায়ের শেষাংশে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীও সে ধরনের গৌরব, সম্মান ও আস্থার সঙ্গে জাতিকে নেতৃত্ব দেবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন