নরসিংদীতে সামসুল হত্যা মামলায় ৭ জনের মৃত্যুদন্ড

  22-05-2017 09:04PM

পিএনএস, (খন্দকার শাহিন) নরসিংদী : নরসিংদীর পলাশে চাঞ্চল্যকর কাঠ মিস্ত্রি সামসুল হক হত্যা মামলায় একই পরিবারের চার জন সহ ৭ জনকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আদালত। একই সাথে প্রত্যেক আসামীকে বিশ হাজার টাকা করে অর্থদন্ডে দন্ডিত করা হয়। সোমবার (২২ মে) দুপুরে নরসিংদী অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন এই রায় প্রদান করেন। একই সাথে বিচারক মৃত্যু হওয়ার আগ পর্যন্ত আসামীদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার কথা উল্লেখ করেন।

এ হত্যার সাথে সংশ্লিষ্টতা না থাকায় ১৩ জন আসামিকে বেকুসুর খালাশ দেন আদালত। এছাড়া সামসুল হকের ছেলেকে কুপিয়ে গুরুত্বর জখম করার অপরাধে ৫ জনকে সশ্রম কারাদন্ড ও দশ হাজার টাকা করে প্রত্যেককে অর্থদন্ডে দন্ডিত করা হয়। নিহত সামসুল হক পলাশ উপজেলার গালিমপুর গ্রামের বাসিন্দা। সাজা প্রাপ্ত আসামীরা হল মহব্বত আলী মুন্সির ছেলে আব্দুল গাফফার, সিরাজ মিয়ার ছেলে মারফত আলী, মইজ উদ্দিনের ছেলে আলেক মিয়া ও তার সহধর্মিনী মোসা: রুপবান, তার ছেলে শরীফ মিয়া ও অপর ছেলে আরিফ মিয়া, মুল্লুক চাঁনের ছেলে তোতা মিয়া। আসামীরা সবাই পলাশ উপজেলার গালিমপুর গ্রামের বাসিন্দা।

আদালত সূত্রে জানা যায়, জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে নিহত সামসুল হকের সাথে পার্শ¦বতী প্রতিবেশী আলেক মিয়া ও গাফফারদের সাথে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এনিয়ে উভয় পক্ষ এক অপরের বিরুদ্ধে মামলা-পাল্টা মামলা দায়ের করেন। এরই জের ধরে বিভিন্ন সময় মামলার আসামীরা অব্যাহত ভাবে নিহত সামসুল হককে দেখে নেয়ার হুমকি দিত। এরই মধ্যে ২০০৯ সালে ৩১ আগষ্ট রাতে নিহত সামসুল হকের ছেলে জহিরুল ইসলাম বাড়ী আসছিল। বাড়ীর অদূরে পথি মধ্যে আসামী মারফত, শরীফ ও আরিফ, জহিরুলকে মারপিট করতে থাকে। তার চিৎকারে বাবা সামসুল হক এগিয়ে যায়। ওই সময় আসামীরা বাবা ছেলেকে ধারালো অস্ত্রও দিয়ে এলোপাথারী কুপাতে থাকে । এসময় আসামীরা তাদের উপর্যুপরি কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিতের পর তাদের পার্শ্ববর্তী একটি গর্তে ফেলে রাখে। খবর পেয়ে নিহতের স্বজন ও আশপাশের লোকজন সামসুলকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে। সঙ্গাহীন অবস্থায় পড়ে থাকে জহিরুল। পরে তাদের স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার সামসুলকে মৃত ঘোষনা করেন। মুমুর্ষ অবস্থায় জহিরুলকে ঢাকায় প্রেরন করে। পরে এক মাস পর তার জ্ঞান ফিরে। এঘটনায় নিহতের স্ত্রী নূরজাহান বাদী হয়ে ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত নামা আরো কয়েকজনকে আসামী করে পলাশ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পলাশ থানা পুলিশ আদালতে ২২জনের বিরুদ্ধে চার্জসিট দাখিল করেন। উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক ও মামলায় সাক্ষ্য প্রমান শেষে অভিযুক্ত সাত আসামীর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সন্দেয়াতিত ভাবে প্রমানিত হওয়ায় সোমবার দুপুরে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক সাত জনের মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন। একই সাথে প্রত্যেকে বিশ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড প্রদান করেন।

অপর দিকে নিহতের ছেলে জহিরুলকে কুপিয়ে গুরুত্বর জখম করার অপরাধে আব্দুল গাফফার, শরীফ মিয়া ও আরিফ মিয়া, আলেক মিয়া,ফারুক মিয়া ও বাছির মিয়াকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করে। আসামীরা সাবাই পলাশ উপজেলার গালিমপুর গ্রামের বাসিন্দা।

রাষ্ট্র পক্ষে আইনজীবি ছিলেন এম এ এন অলিউল্লাহ। আসামী পক্ষে আইনজীবি ছিলেন এড শওকত আলী পাঠান।

রায় পেয়ে সস্তি প্রকাশ করেছেন নিহতের ভাই আনোয়ারুল হক বলেন,আসামীরা আমার ভাইকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি। গত এক বছর পূর্বে তারা আমার ভাতিজা জহিরুলকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে। স্বামী সন্তান হারিয়ে আমার ভাবী ও মামলার বাদী নূরজাহানও অকাল সময়ে মারা যায়। তারা যে ক্ষতি করেছে,তা পূরন হওয়ার নয়। আমার স্বজনরা আর ফিরে আসবে না। দ্রুত তাদের ফাঁসিতে কার্যকর হলে কিছটা শান্তি পাওয়া যাবে।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন