গভীর রাতে ভাস্কর্য সরল সুপ্রিম কোর্ট থেকে

  26-05-2017 08:25AM


পিএনএস ডেস্ক: অবশেষে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে সরানো হলো ‘গ্রিক দেবী’র ভাস্কর্য। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ভাস্কর্যটি সরানোর কাজ শুরু হয়। রাত ৩টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় সেই কাজ চলছিল। রমজানের আগেই ভাস্কর্যটি সরানোর দাবিতে গত ১৮ মে বিবৃতি দিয়েছিল হেফাজতে ইসলাম।

এর আগে ভাস্কর্যটি অপসারণের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মত দিয়েছিলেন। বেশ কিছুদিন ধরেই এটি অপসারণ হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। একদিন আগে হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত আসে অপসারণের। গতকাল রাত ১২টার দিকে দেখা যায়, একদল শ্রমিক ভাস্কর্যটির পাটাতন আলগা করার কাজ করছে। এ সময় পাশে কয়েকটি ছোট ট্রাক ও গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল।

ভাস্কর্যটি ভাঙার সময় সুপ্রিম কোর্টের সব কটি ফটক বন্ধ রাখা হয়। কাদের তত্ত্বাবধানে ভাস্কর্যটি ভাঙা হচ্ছে, তা জানা যায়নি। ভেতরে এই ভাস্কর্যের নির্মাতা শিল্পী মৃণাল হককেও দেখা গেছে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর তত্ত্বাবধানেই ভাস্কর্যটি সরানো হচ্ছে। তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীদের কাছে হার মানতে হচ্ছে। আমরা স্বাধীনতা ভোগ করতে পারছি না। তবে কার নির্দেশে ভাস্কর্য সরানো হচ্ছে, তা তিনি বলতে রাজি হননি। মৃণাল হককে এ সময় অশ্রুসিক্ত দেখা যায়। তিনি বলেন, এটি তিনি বিভিন্ন চাপে বাধ্য হয়ে সরিয়ে নিচ্ছেন। বিভিন্নভাবে বেশ কিছুদিন ধরে তাঁর ওপর ভাস্কর্য সরিয়ে নিতে চাপ সৃষ্টি করা হয়। এটি আপাতত সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তবে সুপ্রিম কোর্টের বর্ধিত ভবনের পাশে এটি বসানো হতে পারে।

সুপ্রিম কোর্টের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে রাতে ফোন দেওয়া হয়। সব ফোনই বন্ধ পাওয়া গেছে। এর আগেও ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেওয়া হবে নাকি, সুপ্রিম কোর্টের অন্য কোনো স্থানে স্থাপন করা হবে—তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা করা হয়। তাঁরা কখনোই এ বিষয়ে কিছু বলেননি। তবে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক কয়েক দিন আগে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ভাস্কর্য অপসারণ করা হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান বিচারপতি।

প্রধান বিচারপতির ইচ্ছায় এই ভাস্কর্যটি গত ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে বসানো হয়। এটিকে জাস্টিশিয়া নামে অবহিত করা হয়। এটি রোমান শব্দ। এর অর্থ বিচারক। পৃথিবীর অনেক দেশের সর্বোচ্চ আদালতে জাস্টিশিয়ার ভাস্কর্য রয়েছে। এই ভাস্কর্যকে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। আদালতের প্রতি মানুষের আস্থাকে অটুট রাখার জন্য বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টসহ সারা দেশের আদালতে সৌন্দর্য বৃদ্ধির কার্যক্রম শুরু করা হয়। সুপ্রিম কোর্টে এই জাস্টিশিয়া তৈরি করে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়, যেখানে উপস্থিত হলে এ স্থানের পবিত্রতা জনমনকে প্রভাবিত করবে। এরই অংশ হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের সামনে স্থাপন করা হয় একটি দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য। কিন্তু কয়েকটি ধর্মীয় সংগঠন এই ভাস্কর্যকে ‘গ্রিক দেবীর মূর্তি’ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করছে। ভাস্কর্যটি স্থাপন করার পরই কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম এই ভাস্কর্যকে গ্রিক দেবীর সঙ্গে তুলনা করে তা অসারণের দাবি জানিয়ে আসছে। বাংলাদেশে খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী আন্দোলনসহ ধর্মীয় কয়েকটি সংগঠন ভাস্কর্য অপসারণের দাবি করে। তারা বিভিন্ন সময় বিক্ষোভেরও চেষ্টা করে। সরকারের কাছে স্মারকলিপি দেয়। আগামী ১৪ জুন প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার কথা। গত এপিলে হেফাজত নেতা আমির শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলাম নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে বৈঠক করেন। এ সময় তাঁরা ভাস্কর্য অপসারণের দাবি জানালে প্রধানমন্ত্রী ভাস্কর্য সরানো হবে বলে তাঁদের কথা দেন। এরপর থেকে ধর্মীয় সংগঠনগুলো আবারও আন্দোলনের হুমকি দেয়। হেফাজতে ইসলাম ৫ জানুয়ারির মতো কর্মসূচি দেওয়ার হুমকি দেয়।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রাতে গণমাধ্যমকে জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সিনিয়র আইনজীবীসহ অ্যাটর্নি জেনারেলকে ডাকেন। সেখানে তিনি ভাস্কর্য সরানোর ব্যাপারে সবার মতামত জানতে চান। সবাই মত দেন, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এটা সরানো প্রয়োজন।

এদিকে ভাস্কর্য অপসারণের প্রতিবাদে গতকাল রাতে সুপ্রিম কোর্টের বাইরের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে গণজাগরণ মঞ্চ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং সাধারণ জনতা।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্টের বর্ধিত ভবনের পাশে এটি নতুন করে বসানোর জন্য প্রস্তুতি চলছিল।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন