ডিমলায় অন্তঃসত্বা গৃহবধুকে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা দায়ের

  07-08-2017 09:13PM

পিএনএস, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি : নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খালিশাচাঁপানী ইউনিয়নের বাইশপুকুর কোলনঝাড় গ্রামে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধু শেফালী বেগমকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় রবিবার গভীর রাতে সংশ্লিষ্ট থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে (মামলা নম্বর-১৬)।

মামলার বাদী করা হয়েছে নির্যাতনের শিকার শেফালীর মামা ভটভটি চালক সহিদুল ইসলাম। ওই মামলায় আসামী করা হয়েছে খালিশাচাঁপানী ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুর কাদের, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের হাতে আটক উক্ত ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ রশিদুল ইসলাম সর্দার, শেফালীর বড় বোন আকলিমার স্বামী রফিকুল ইসলাম ও শাশুড়ি অপেয়া বেগম সহ নামীয় ১৯ জন ও অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনকে আসামী করা হয়। মামলার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটককৃত তিনজনকে পুলিশ গ্রেফতার দেখায়। এদের রবিবার বিকালে পুলিশ আটক করছিল। সোমবার দুপুরে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে প্রেরন করে। তবে নতুন করে কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

এদিকে এই মামলায় খালিশাচাঁপানী ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক তামজিদার রহমান, ইউনিয়নের শ্রমিক লীগের সাধারন সম্পাদক শিমুল ইসলাম, সদ্য বিএনপি হতে আওয়ামী লীগে যোগদানকারী মোসলেম উদ্দিনের ছেলে আশরাফুল ও সামছুলের ছেলে বিএনপি কর্মী মজনুর রহমান মঞ্জুকে আসামী না করায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শেফালী বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তিনি সেখানে সাংবাদিকদের অভিযোগ করে বলেন ঘটনার জড়িতদের নাম বাদ দিয়ে ডিমলা থানার ওসি আমার মামা সহিদুল ইসলাম, আমার ছোটবোন শিউলি আক্তার মনিকে থানায় নিয়ে গিয়ে মামলা দায়ের করেন।

ঘটনার সময় আমার মামা সহিদুল ইসলাম সেখানে উপস্থিত ছিল না। শেফালী আরো জানায়, আমি জানতে পেরেছি ডিমলা থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন ওদের নাম বাদ দিয়ে উল্টো খালিশাচাঁপানী ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক তামজিদার রহমানকে মামলার এক নম্বর সাক্ষি করেছে। এমন কি ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় গ্রামের অনেক মানুষের নাম জড়িয়ে দিয়েছে ওসি। শেফালী আরো জানান, তিনি সুস্থ্য হয়ে ফিরলে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল কিন্তু মামলায় তাদের নাম বাদ দিয়েছে ওসি আমি তাদের আসামী করে নিজে বাদী হয়ে মামলা করব। আর যারা জড়িত নয় তাদের মামলা হতে বাদ দিবো। কারন ডিমলা থানার ওসি আমার গ্রামবাসীকে আমার উপর ক্ষিপ্ত করে তুলতে চক্রান্ত করছে।

নীলফামারী সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল ডিমলা ও ডোমার) জিয়াউর রহমান বলেন, সংবাদপত্র ও অনলাইন নিউজ পোটালে প্রকাশিত ঘটনার সুত্রে পুলিশ তদন্ত করে সত্যতা পেয়ে থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনায় কয়েকজন প্রভাবশালী নাম বাদ দেয়ার প্রসঙ্গে বলেন, ঘটনাটি তদন্তে কারা জড়িত বের হয়ে আসবে। কারন মামলায় ১৯জন নামীয়সহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন রয়েছে।

ডিমলা থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন সাংবাদিকদের উপর যে চরম ক্ষিপ্ত হয়ে আছেন তার ক্ষোভ তিনি সোমবারও দেখিয়েছেন। সাংবাদিকরা মামলার কপি চাইতে গেলে ওসি পরিস্কার ভাবে জানিয়ে দেন মামলার কপি শুধু মাত্র বাদী ও বিবাদী পাবে। থানা হতে সাংবাদিকদের মামলার কপি দেয়া হবে না। প্রয়োজনে সাংবাদিকরা মামলার কপি আদালত থেকে সংগ্রহ করবে। পরে সাংবাদিকরা মামলার কপি বিকল্প ব্যবস্থায় সংগ্রহ করতে বাধ্য হয়।

মামলার এজাহারে দেখা যায় সংবাদপত্রে প্রকাশিত ঘটনার চিত্র রেখে আরো কিছু যোগ করা হয়। প্রভাবশালীদের মধ্যে যারা জরিত ছিল তাদের আসামীর নামের তালিকায় রাখা হয়নি।

মামলা দায়েরের ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থল গ্রামে গিয়ে দেয়া যায় গ্রামটি পুরুষ শুন্য হয়ে পড়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার অনেক জানায়, আমরা বারবার বলেছিলাম মামলা করতে হলে নির্যাতনের শিকার শেফালীকে বাদী করা হোক। কিন্তু আমাদের কথা ডিমলা থানার ওসি কর্ণপাত করেনি। এখন ডিমলা থানার ওসি উদরপিন্ডি বুদোর ঘারে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। এতে জড়িত অনেকে বাদ পড়েছে। মামলায় শেফালী বাদি হলে প্রকৃত আসামীদের নাম চলে আসতো।

মামলার বাদী শেফালীর মামা ভটভটি চালক সহিদুল ইসলামের বলেন, ঘটনার দিন আমি সকালে গ্রামের বাহিরে ছিলাম। আমাকে খালিশাচাঁপানী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক তামজিদার রহমান মোবাইলে ডেকে আনে ঘটনাস্থলে। সেখানে আমার ভাগনিকে গাছে বেধে নির্যাতন করা হচ্ছিল সেখানে মাটিতে শেফালী পড়ে ছিল। আমার হাতে শেফালীকে তারা তুলে দিয়ে চিকিৎসা করতে বলে। কিন্তু আমি ওই অবস্থায় আমার ভাগনিকে আমরা জিম্মায় নেইনি। আমি তাদের বলেছি তোমরা চিকিৎসা করে ওকে সুস্থ্য করে দিলে আমি নিবো। এরপর আমি ঘটনাস্থল হতে চলে আসি।

খালিশাচাঁপানী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক তামজিদার রহমানকে মামলার সাক্ষি করার বিষয়ে তিনি বলেন, ওই নেতাইতো আমাকে মোবাইলে ডেকে আনে ঘটনাস্থলে। তিনি সব জানেন তাই তাকে সাক্ষি করেছি।

মামলা দায়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রবিবার বিকালে পুলিশ আমাকে ও শেফালীর ছোট বোন শিউলীকে থানায় ডেকে নিয়ে যায়। শেফালীর ছোট বোন ও আমার কথা শুনে পুলিশ এজাহার তৈরী করে। সেখানে আমরা দুইজনে স্বাক্ষর করি।

মামলায় কারা কারা আসামী তাদের সকলের নাম বলতে পারেনি শেফালীর মামা মামলার বাদী সহিদুল ইসলাম। এদিকে তার দায়েরকৃত মামলায় আসামীদের নাম দেখা যায় খালিশাচাঁপানী ইউনিয়নের বাইশপুকুর কোলনঝাড় গ্রামের দেবারু মামুদের দুই ছেলে অপিয়ার রহমান (২৩) ও রফিকুল ইসলাম (৪২), দবির উদ্দিনের তিন ছেলে আলী হোসেন (৩৫), আবু বক্কর সিদ্দিক(৩০) ও মনোয়ার হোসেন (২৮), মৃত. আলাপু মামুদের দুই ছেলে দবির উদ্দিন (৫৫) ও আহেদুল ইসলাম (৩৮), হামিদুর রহমানের ছেলে আতাউল রহমান (১৯), আবু বক্কর সিদ্দিকের স্ত্রী তহমিনা বেগম (২৩), আলী হোসেনের স্ত্রী রূপালী বেগম (২৮), মনোয়ার হোসেনের স্ত্রী মনছুরা বেগম (২৪), অপিয়ার রহমানের স্ত্রী তুলি বেগম (২১), হামিদুল ইসলামের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৪০), মাহাবুর রহমানের স্ত্রী সূলতানা বেগম (২৪), দেবারু মামুদের স্ত্রী অপিয়া বেগম (৬০), মৃত. খটেয়া মামুদের ছেলে খালিশাচাঁপানী ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের (৬০), মৃত. আবুল হোসেনের ছেলে ওই ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ রশিদুল ইসলাম (৪০), সফিয়ার রহমানের স্ত্রী রাজিয়া বেগম (২৭) ও দবির উদ্দিনের স্ত্রী খালিকুন বেগম (৫০)সহ ৪/৫ জন অজ্ঞাত।

উল্লেখ যে, একটি পারিবারিক ঘটনাকে পুঁজি করে এলাকার কিছু প্রভাবশালী মহল শেফালীকে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে গত শুক্রবার গ্রামে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করেছিল। পুলিশ গিয়ে শেফালীকে উদ্ধার করে চিকিৎসা করার পরামর্শ দেয়।

উল্লেখ যে, উক্ত গ্রামে জমিজমা সংক্রান্ত এক বিবাদে শেফালীর বাবা মবিয়ার রহমানকে ২০১২ সালের ২৯ জুলাই ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে প্রতিপক্ষরা হত্যা করেছিল। মামলায় এলাকার ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে পুলিশ চার্জশীট প্রদান করেন। মামলাটি বর্তমানে নীলফামারী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আগামী ২২ আগষ্ট হত্যার মামলা সাক্ষ্য রয়েছে। প্রভাবশালীরা ওই মামলা মিমাংসার জন্য চাপ দিয়ে আসছে।

তারা পিতার হত্যা মামলা আপোষ না করায় প্রতিপক্ষরা সম্প্রতি ডিমলা থানায় একটি মিথ্যা মামলা করেছে। ফলে শেফালীর একমাত্র ভাই রমজান পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এলাকায় কোন ঘটনা ঘটলেই শেফালী ও তার ভাইয়ের উপর নির্যাতনে খড়ক নেমে আসে। শেফালী ওই গ্রামের লালন মিয়ার স্ত্রী। তার স্বামী ঢাকায় রিক্সাচালায়। খবর পেয়ে তিনি রংপুরে স্ত্রী শেফালীর কাছে রয়েছে।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল



@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন