‘কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়’

  18-08-2017 08:15AM

পিএনএস ডেস্ক: বেসিক ব্যাংকের দুটি ঋণ জালিয়াতির মামলায় ব্যাংকটির তৎকালীন চেয়ারম্যান ও পরিচালনা পর্ষদকে আসামি না করে মামলা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

আদালত বলেছেন, আমরা চাই না এ ধরনের মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আসামি করার ক্ষেত্রে ‘পিক অ্যান্ড চুজ’ পদ্ধতি অবলম্বন করা হোক। কারণ কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।

বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই মামলার শুনানির জন্য আগামী ৮ অক্টোবর পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করে আদেশ দেন। শুনানিতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

আপিল বিভাগ বলেন, কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তা যেন গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হয়। তদন্তে গাফিলতি পরিলক্ষিত হলে তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

৭৫ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় ২০১৫ সালে নগরীর মতিঝিল থানায় দুটি মামলা দায়ের করে দুদক। ওই মামলায় আসামি করা হয় ১৬ জনকে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, অসৎ উদ্দেশে পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণার আশ্রয়ে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ করে আসামিরা অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এই মামলার অন্যতম আসামি হলেন বেসিক ব্যাংকের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক ও ব্র্যাঞ্চ ইনচার্জ জয়নাল আবেদীন চৌধুরী। হাইকোর্ট দুটি মামলায় তাকে অন্তবর্তী জামিন দেন। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই জামিন স্থগিত করে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত। গত ১০ আগস্ট দুদকের জামিন বাতিলের আবেদনের শুনানির এক পর্যায়ে মামলা দুটির নথি তলব করেন আপিল বিভাগ।

বৃহস্পতিবার মামলা দুটির তদন্ত সংক্রান্ত নথি আদালতে উপস্থাপন করেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

শুনানির শুরুতে প্রধান বিচারপতি বলেন, মামলা দুটিতে কারা আসামি হিসেবে রয়েছেন? এ পর্যায়ে দুদকের আইনজীবী এজাহার থেকে আসামিদের নাম পড়ে শোনান।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ব্যাংকের চেয়ারম্যান বা পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের কি আসামি করা হয়েছে? জবাবে দুদকের আইনজীবী বলেন, একজন পরিচালককে আসামি করা হয়েছে।

এসময় প্রধান বিচারপতি বলেন, চেয়ারম্যানসহ বাকিরা কোথায়? দুদকের আইনজীবী আদালতকে জানান, তদন্ত চলছে। এর সঙ্গে অন্যদের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেলে অবশ্যই তাদের নাম আসবে।

এসকে সিনহা বলেন, আমরা চাই না ‘পিক অ্যান্ড চুজ’ ভিত্তিতে আপনারা মামলায় আসামি করেন। এ পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আইন সবার জন্য সমান। আর সুপ্রিম কোর্ট হচ্ছে জনগণের শেষ আশ্রয়স্থল। এটার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হবে।

প্রধান বিচারপতি দুদকের আইনজীবীকে বলেন, আপনারা এই টাকা আদায় করুন। আইনজীবী বলেন, টাকা আদায় করা তো আমার আওতার বাইরে। আমি অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা ও তদন্ত করতে পারি। প্রধান বিচারপতি বলেন, তদন্তে যেন কোনো গাফিলতি না হয়। মামলাগুলো আমরা মনিটরিংয়ের মধ্যে রাখছি।

এ পর্যায়ে আসামির আইনজীবী এ এম আমিনউদ্দিন বলেন, আমি তো শুধু ঋণ দেয়ার জন্য একটি সাদা কাগজে সুপারিশ করেছি। এতে আমার অপরাধ কোথায়?

প্রধান বিচারপতি বলেন, কেন আপনি সুপারিশ করেছেন? দুদকের আইনজীবী বলেন, শুধু সুপারিশই নয় তার বিরুদ্ধে এজাহারে সুনির্দ্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। পরে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত মামলারি শুনানি মুলতবি করেন আদালত।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন