বীরগঞ্জেরে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা

  22-08-2017 09:44PM

পিএনএস, দিনাজপুর প্রতিনিধি : দিনাজপুরের বীরগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় প্রসুতির মৃত্যুর ঘটনায় বিচারের দাবিতে লাশ নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ, প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ন্যায় বিচারের আশ্বাসে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহারের পর মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আপোষের নামে ১টি পক্ষের দৌড়ঝাপ শুরুহয়ে যায়, ভ্রাম্যমান আদালত ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

বীরগঞ্জ পৌর শহরের ঢাকা-পঞ্চগড় মহাসড়ক সংলগ্ন কলেজমোড় এলাকার সিটি নাসিং হোম এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে প্রসুতি নুরেজা বেগম (৩৫) কে ভুল চিকিৎসায় মেরে ফেলার অপরাধে ২২ আগষ্ট মঙ্গলবার ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আলম হোসেন ক্লিনিকের পরিচালক ফিসারীমোড় এলাকার হাফিজ ভেন্ডারের পুত্র মোঃ নুরে সিদ্দিকীকে ২ লক্ষ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাসের জেল এবং ক্লিনিকে আটককৃত ৪ জনকে ২০ হাজার টাকা করে ৮০ হাজার টাকা সহ মোট ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

উলেক্ষ, ২০ আগষ্ট রবিবার বিকালে উপজেলার ভোগনগর ইউনিয়নের ভোলানাথপুর গ্রামের বাসিন্দা সিদ্দিক হোসেন তার ৯ মাসের সন্তান সম্ভবা স্ত্রী নুরেজা বেগম (৩৫)কে ২০ আগষ্ট রবিবার বিকালে সিটি নাসিং হোম এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে আল্টাসনোগ্রাম করতে নিয়ে গেলে ক্লিনিকের পরিচালকের নির্দেশে ম্যানাজার মানিক ভয় দেখিয়ে দ্রুত ভর্তি হতে বলে। এবং রাতেই পরিচালকের স্ত্রী দিনাজপুর এম রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নার্স ফাহিমা আক্তার প্রসুতিকে নিজেরাই সিজারের মাধ্যমে অপারেশন করে ১টি কন্যা শিশু প্রসব করায়। রাত ৩টায় প্রসুতি শারিরিক অবস্থা খারাপ হলে তাকে দিনাজপুর এম রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিলে ভর্তি করলে ভোরে চিকিৎসাধিন অবস্থায় নুরেজা বেগম মারা যায়। ঐ ঘটনার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে প্রসুতির বাবার বাড়ী মোহনপুর ইউনিয়নের চৌধুরীহাট এলাকা, স্বামীর বাড়ী ও স্থানীয় জনগন বিচারের দাবিতে ক্লিনিকের সামনে ঢাকা-পঞ্চগড় মহাসড়কে লাশ রেখে ২১ আগষ্ট দুপুরে আবরোধ করে।

মহাসড়ক অবরোধের সংবাদ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আলম হোসেন, পৌর মেয়র আলহাজ্ব মাওঃ মোহাম্মদ হানিফ, থানার ওসি তদন্ত মছিউল গনির নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ন্যায় বিচারের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ক্লিনিকের মালিক পক্ষ পালিয়ে গেলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ক্লিনিকে অবস্থানরত প্রসুতিদের সঠিক চিকিৎসা প্রদানের লক্ষে বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. নুরুল কবির ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার মাহমুদুল ইসলাম পলাশকে নিয়ে এসে ৪ জন প্রসুতিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে। এসময় প্রশাষন জনগনের সামনে ক্লিনিকে তালা লাগিয়ে দিয়ে ক্লিনিক পক্ষের আয়া আরমিনা (৩০), নাইটগার্ড আজিজার (২৮), সালাম (৩২) ও মালিকের বোন হুসনেয়ারা বেগম সহ ৪ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় উপস্থিত জনতা জানায়, ইতিপূর্বেও এই ক্লিনিকে ভুল চিকিসায় অনেক রোগি মেরে ফেলার ঘটনা ঘটলেও প্রতিবারে টাকার বিনিময়ে ধরাছোয়ার বাইরে থাকে।

মৃত প্রসুতি নুরেজা বেগমের স্বামী ও বাবার বাড়ীর লোকজন বিকালে লাশ নিয়ে থানায় গিয়ে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়ে এজাহার লিখার সময় ক্লিনিক কর্তপক্ষের হয়ে টাকার বিনিময়ে আপোশের জন্য দৌড় ঝাপ শুরু করে ১টি পক্ষ। পরিশেষে রাত্রী ১০টার দিকে মোহনপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়ার নেতৃত্বে পৌর শহরের বলাকা মোড়ের ১টি মিলে ২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে হত্যার ঘটনাটি আপোষ করে।

বীরগঞ্জ থানা সুত্রে জানাজায়, প্রসুতির মৃত্যুর ঘটনায় একটি ইউডি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার নং-৩৩ এবং ময়না তদন্তের জন্য লাশ মর্গে প্রেরন করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয় সুত্রে জানাজায়, আটককৃত ৪ জন ২০ হাজার টাকা করে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে মুক্তি পায়। তবে কাগজপত্র যাচাই বাছাই পর্যন্ত বীরগঞ্জ সিটি নার্সিং হোম এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল





@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন