নওগাঁর ৪ আসামির তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত

  01-12-2017 08:04AM



পিএনএস ডেস্ক: একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নওগাঁ জেলার জামায়াতের সাবেক আমীর মো. রেজাউল করিম মন্টুসহ চারজনের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করেছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

মামলার আসামিরা হলেন- নওগাঁর মো. রেজাউল করিম মন্টু (৬৮), মো. নজরুল ইসলাম (৬৪), মো. শহিদ মণ্ডল (৬২) ও মো. ইসহাক (৬২)। এদের মধ্যে মো. ইসহাক (৬২) তদন্ত চলার সময়ই গ্রেফতার অবস্থায় মারা যান। বাকি তিন আসামির মধ্যে নজরুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন।

শিগগিরই এই প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান। বৃহস্পতিবার ধানমন্ডির তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত প্রতিবেদনের সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান, জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হক ও মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিনসহ তদন্ত সংস্থার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সাতজনকে হত্যাসহ অবৈধভাবে আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগে ধ্বংস করার অভিযোগ আনা হয়েছে এ আসামিদের বিরুদ্ধে। পাঁচটি ভলিউমে মোট ৬১৩ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানায় তদন্ত সংস্থা।

সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল হান্নান খান বলেন, এ প্রতিবেদনটি তদন্ত সংস্থার ৫৫তম প্রতিবেদন। মামলাটি তদন্ত করতে এক বছর সময় লেগেছে। এর মধ্যে এ মামলার গ্রেফতার এক আসামির মৃত্যুও হয়েছে।

আসামিদের রাজনৈতিক পরিচয় তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আসামি মো. রেজাউল করিম মন্টু ১৯৮৬ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী জয়পুরহাট জেলার আমীর ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। ওই সময় থেকেই তিনি জামায়াতের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি নিজ বাড়িতে চলে আসেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য সশস্ত্র রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। এরপর ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলে তিনি আত্মগোপন করেন।’

বাকি আসামিরাও জামায়াতের সমর্থক বলে জানান তদন্ত সংস্থার প্রধান হান্নান খান। পরে জ্যেষ্ঠ সদস্য সানাউল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আসামিরা নওগাঁর (সাবেক রাজশাহী জেলার নওগাঁ মহকুমা) বদলগাছী থানায় অপরাধ সংঘটন করে।
গত বছরের ১৮ অক্টোবর মামলাটির তদন্ত শুরু হয়। এক বছর ধরে চলা তদন্তে মোট ৩১ সাক্ষির সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

তদন্ত চলাকালে মো. ইসহাক আলীর মৃত্যু হওয়ায় অভিযোগ থেকে তাকে বাদ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আসামি রেজাউল করিম মন্টুকে ২০১৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার করে জয়পুরহাট দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয়।

আসামি শহিদ মণ্ডলকে গ্রেফতার করা হয় ১২ ফেব্রুয়ারি, আসামি ইসহাক আলীকেও ওইদিন গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালে হাজির করে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

আসামি রেজাউল করিম মন্টুর বর্তমান জয়পুর হাট সদরের বাসিন্দা। জেলা শহরের প্রফেসর পাড়ার রাজাকার বিল্ডিং নামে পরিচিত বাসায় থাকতেন। আর পলাতক নজরুল ইসলাম ঢাকায় তেজগাঁওয়ে থাতেন। শহীদ মণ্ডলের বাড়ি নওগার বদলগাছী থানার চাঁপাডাল গ্রামে।

আসামিদের বিরুদ্ধে আনা তিন অভিযোগ হচ্ছে-
অভিযোগ-১: এ অভিযোগে বলা হেয়েছে, ১৯৭১ সালের ৭ অক্টোবর বিকেল আনুমানিক চারটা থেকে রাত সাড়ে সাতটা পর্যন্ত সময়ে আসামিরা নওগাঁর বদলগাছী থানার পাহাড়পুর ইউনিয়নের রানাহার গ্রামে হামলা চালিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের নিরীহ-নিরস্ত্র সাহেব আলী, আকাম উদ্দিন, আজিম উদ্দিন মণ্ডল, মোজাফফর হোসেনকে হত্যাসহ ওই সময় ১০-১২টি বাড়ি লুট করে অগ্নিসংযোগ করে।

অভিযোগ-২: এ অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৮ অক্টোবর দুপুর আনুমানিক দেড়টা থেকে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত সময়ে আসামিরা নওগাঁর বদলগাছী থানার পাহাড়পুর ইউনিয়নের খোজাগাড়ী গ্রামে হামলা চালিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের নিরীহ-নিরস্ত্র মো. নুরুল ইসলামকে হত্যা করে। এসময় তারা ১৫-২০টি বাড়ি লুণ্ঠনের পর অগ্নিসংযোগ করে।

অভিযোগ-৩: এ অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৮ অক্টোবর বিকেল আনুমানিক পাঁচটা থেকে পরদিন অর্থাৎ ৯ অক্টোবর আনুমানিক বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সময়ে নওগাঁর বদলগাছী থানার পাহাড়পুর ইউনিয়নের মালঞ্চা গ্রামে হামলা চালিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের মো. কেনার উদ্দিন এবং মো. আক্কাস আলীকে অবৈধভাবে আটক করে নির্যাতন করে। পরে অপহরণ করে জয়পুরহাটের কুঠিবাড়ি ব্রিজে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। এই সময়ের মধ্যে আসামিরা ৪০-৫০টি বাড়ি লুণ্ঠনের পর অগ্নিসংযোগ করে।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন