কোচিংবাজ শিক্ষকরা দুদকের জালে

  05-12-2017 09:43AM


পিএনএস ডেস্ক: রাজধানীর বাসাবো খেলার মাঠের পশ্চিম পাশে ১৮০ মধ্য বাসাবোতে কোচিং করান মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক সুবীর কুমার সাহা। গতকাল সোমবারও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখন অন্যান্য ক্লাসের বার্ষিক পরীক্ষা চলায় শুধু নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন এই শিক্ষক।

এ ছাড়া ১৪৫ মধ্য বাসাবোতে পড়ান একই স্কুলের বাসাবো শাখার ডে শিফটের সহকারী প্রধান শিক্ষক এনামুল হক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ের কোচিং করান। একই ভবনে পড়ান ইংরেজির শিক্ষক মেজবাহুল ইসলাম, কমার্সের মোহন লাল ঢালী ও আবুল খায়ের। ১৭৮ মধ্য বাসাবোতে পড়ান বাসুদেব সমাদ্দার এবং ১৬৬ মধ্য বাসাবোতে পড়ান রুহুল আমিন-২ ও মো. কামরুজ্জামান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনেক শিক্ষার্থীই একই ভবনে একাধিক শিক্ষকের কাছেও কোচিং করছে। প্রত্যেক শিক্ষক কমপক্ষে ১০০ শিক্ষার্থী পড়ান। কোনো কোনো শিক্ষক ৩০০ পর্যন্ত শিক্ষার্থীও পড়ান। অভিযোগ রয়েছে, স্কুলের শিক্ষকের কাছে কোচিং না করলে স্কুলে নানা ভয়ভীতি দেখানো হয়। নম্বর কম দেওয়া হয় পরীক্ষায়।

কোচিংবাজ ওই শিক্ষকদের কেউ কেউ গভর্নিং বডির কাউকে কাউকে টাকার বিনিময়ে হাত করে রেখেছেন, যাতে কোনো চাপ না আসে। কোচিং বাণিজ্যের মাধ্যমে ওই শিক্ষকরা এরই মধ্যে বহু কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক সুবীর কুমার সাহা গত রাতে বলেন, ‘আমি আগে পড়াতাম। এখন আর পড়াই না। তার পরও যে আমার নাম কিভাবে দুদকের তালিকায় এলো, তা বুঝতে পারছি না। আমি গণিতের শিক্ষক তাই সবার আগে আমার নামই আসে। অনেক শিক্ষক আছেন যাঁরা কোনো দিন কোচিং করাননি, তাঁদের নামও দুদকের তালিকায় আছে। ’

একই স্কুলের শিক্ষক মেজবাহুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাইভেট পড়ানো দুই-তিন শ বছরের ইতিহাস। যে শিক্ষক ক্লাসে ভালো পড়ান, সেই শিক্ষকের কাছেই সবাই প্রাইভেট পড়তে চায়। আমি বড়জোর ২০টা বাচ্চা পড়াতাম। সেটা দুই মাস আগে বাদ দিয়ে দিয়েছি। তার পরও অভিভাবকরা অনুরোধ করেন। আসলে ভালো ফলের জন্য প্রাইভেটের দরকার আছে কি না, তা আরো স্টাডি করে দেখা উচিত। ’

মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২৪ জন শিক্ষকসহ রাজধানীর আটটি স্কুলের কোচিংবাজ ৯৭ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত রবিবার দুদক সচিব মো. শামসুল আরেফিনের সই করা এসংক্রান্ত চিঠি মন্ত্রিপরিষদসচিব বরাবর পাঠানোহয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এমপিওভুক্ত চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৭২ জন শিক্ষক এবং সরকারি চারটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২৫ জন শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে যুক্ত বলে দুদক প্রমাণ পেয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো ওই চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, ওই শিক্ষকরা বছরের পর বছর একই স্কুলে শিক্ষকতা করার পাশাপাশি বড় ধরনের কোচিং বাণিজ্য করে আসছেন। কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতে যুগোপযোগী আইন করা, জড়িত শিক্ষকদের বদলি করাসহ পাঁচটি সুপারিশ করা হয়েছে।

দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘কোচিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধেও অচিরেই অভিযানে নামবে দুদক। বছরের পর বছর অবৈধভাবে কোচিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের সম্পদের হিসাব চেয়ে চিঠি পাঠাবে কমিশন। সারা দেশ থেকে কোচিং ব্যবসা বন্ধ করতেই কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ’

দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য গতকাল জানান, কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়াসহ বেশ কয়েকটি সুপারিশ গত রবিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

দুদক সূত্রে জানা যায়, যেসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে তাদের মধ্যে আছেন আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মতিঝিলের ৩৬ জন, মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২৪ জন, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাতজন, রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাঁচজন, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২ জন, মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চারজন, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের আটজন এবং খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো দুদকের চিঠিতে বলা হয়েছে, কোচিং বন্ধ করার কোনো আইন না থাকায় সাধারণত কোচিং বা টিউশনি থেকে উপার্জিত আয়ের ওপর কোনো ভ্যাট বা ট্যাক্স দেওয়া হয় না। ফলে এভাবে উপার্জিত আয় অনুপার্জিত আয়ে পরিণত হয়। কোচিং বাণিজ্যের ফলে যেভাবে অনৈতিক আয় ভোগ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে, তেমনি এটি বুদ্ধিবৃত্তিমূলক মেধা সৃষ্টির প্রয়াসের পরিবর্তে অবৈধ অর্থ উপার্জনের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া কোচিংয়ের কারণে শিক্ষার্থীরা বিশেষ সাজেশন অনুসারে স্বল্পসংখ্যক প্রশ্ন পড়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। ফলে পূর্ণাঙ্গ বই সম্পর্কে তারা ধারণা পাচ্ছে না।

দুদক সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন একই প্রতিষ্ঠানে থেকে ওই শিক্ষকরা কোচিং বাণিজ্যে জড়িয়েছেন এবং অনৈতিকভাবে অর্থ উপার্জন করে আসছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ‘কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২’ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতে সরকারকে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে বলেছে দুদক। এ ছাড়া কোচিং বাণিজ্য ঠেকাতে ওই শিক্ষকদের এক বিদ্যালয় থেকে অন্য বিদ্যালয়ে, এক শাখা থেকে অন্য শাখায়, এক শিফট থেকে অন্য শিফটে নির্দিষ্ট সময় পর পর বদলি করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছে দুদক।

এর আগে নভেম্বরের শুরুতেও ২৪টি সরকারি বিদ্যালয়ের ৫২২ জন শিক্ষককে একই কারণে বদলি করার সুপারিশ করেছিল দুদক। সে সময় দুদকের এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই শিক্ষকরা ১০ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৩৩ বছর পর্যন্ত এক বিদ্যালয়েই রয়েছেন। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতার পাশাপাশি কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে অর্থ উপার্জন করছেন।

কিন্তু দুদক সুপারিশ করলেও ওই সব শিক্ষকের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান গত রাতে বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের এখন পর্যন্ত দুদকের তালিকার ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। আমরা তাদের নির্দেশের অপেক্ষায় আছি। যত দূর জেনেছি, কোচিংয়ের জন্য শাস্তি দিতে হলে একটা আইন দরকার। আর সেটা শিক্ষা আইনে থাকবে। মন্ত্রণালয় এই শিক্ষা আইন দ্রুততার সঙ্গে করার চেষ্টা করছে। ’

জানা যায়, মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞানের শিক্ষক বকুল বেগম প্রাইভেট পড়ান ৮১ মধ্য বাসাবোতে। ইংরেজির শিক্ষক আসাদ হোসেন পড়ান বাসাবোর এক্সিলেন্স কোচিং সেন্টারে। তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণির গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ের কোচিং করান প্রদীপ কুমার বসাক ও আবুল খায়ের। বাংলা বিষয়ের শিক্ষক শারমিন খানম বাংলার তিন মাসের প্যাকেজ কোর্স করান পাঁচ হাজার টাকায়।

ওই প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি আওলাদ হোসেন গত রাতে বলেন, ‘আমরা এখনো দুদকের কোনো চিঠি পাইনি। এ ব্যাপারে চিঠি পেলে বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখব। তবে আমাদের স্কুলের ভেতর কোনো কোচিং-প্রাইভেট হয় না। বাইরে কে কী করে সেটা জানা খুব কষ্টকর। অনেক শিক্ষকের বাসা দূরে। তাঁরা যদি এখন কেউ তাঁদের বাসায় প্রাইভেট পড়ান, সেটা আমরা কী করে জানব?’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিলের বেশির ভাগ শিক্ষকই কোচিং সেন্টার খুলে বসেছেন শাহজাহানপুর ও খিলগাঁওয়ে। দক্ষিণ শাহজাহানপুরের শিল্পী হোটেলের গলি, বেনজির বাগান ও উত্তর শাহজাহানপুরেই এসব কোচিং সেন্টারের আধিক্য। উত্তর শাহজাহানপুর এলাকায় দেখা যায়, খিলগাঁও ফ্লাইওভারের শাহজাহানপুর অংশের গোড়ায় পশ্চিম পাশে ৬১০ নম্বর বাড়ির দোতলায় কোচিং ব্যবসা খুলেছেন সাত-আটজন শিক্ষক। ৫০৬ উত্তর শাহজাহানপুরের দোতলায় কোচিং করান গণিতের শিক্ষক গোলাম মোস্তফা। রসায়নের মোহাম্মদ ফখরুদ্দীন পড়ান ২৬৫/২ উত্তর শাহজাহানপুরের নিচতলায়। ইংরেজির শিক্ষক তৌহিদুল ইসলাম পড়ান ৬১৮ উত্তর শাহজাহানপুরে ভাগ্যকূল মিষ্টির দোকানের ওপরের তলায়। দুদকও এই স্কুলের সর্বোচ্চ ৩৬ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে।

আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক গোলাম মোস্তফা গত রাতে বলেন, ‘আগে পড়াতাম। এখন বাদ দিয়েছি। দুদক এখন আবার কিসের ভিত্তিতে তালিকা করল তা আমার জানা নেই। ’ একই স্কুলের শিক্ষক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আগে পড়াতাম। দুই মাস ধরে বাদ দিয়েছি। ’ শিক্ষক মোহাম্মদ ফখরুদ্দিন বলেন, ‘এখানে বলার কিছু নেই। এখন আমার কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নেয় সেটাই আমি মেনে চলব। ’

আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম গত রাতে বলেন, ‘আমরা এখনো কোনো চিঠি পাইনি। কোচিংয়ে যুক্ত শিক্ষকদের বিষয়ে চিঠি পেলে আমরা গভর্নিং বডির মিটিংয়ে তুলব। তারা যে সিদ্ধান্ত নেয় সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল খালেক বলেন, ‘আমরা সব সময়ই নীতিমালার মধ্যে প্রাইভেট-কোচিং করাতে বলি। মাসখানেক আগে দুদকের একজন কর্মকর্তা আমাদের কাছে এসেছিলেন। এরপর আমি সব শিক্ষককে সতর্ক করে দিয়েছি। এর পরও যদি কেউ নিয়মের বাইরে কোচিং করায়, তাহলে সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী বদলিসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। ’

জানা যায়, দেশের প্রায় সব স্কুলেই একটি কক্ষে কমপক্ষে ৫০ থেকে ৭০ জন পর্যন্ত শিক্ষার্থীর একসঙ্গে ক্লাস হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিক্ষকদের কাজ শুধু পড়া দেওয়া এবং দু-চারজনকে তা ধরা। একটি বিষয়ে বিস্তারিতভাবে বুঝিয়ে বলা, দুর্বলদের বাড়তি যত্ন নেওয়া, কঠিন বিষয়ে বেশি সময় দেওয়ার রীতি কোনো স্কুলেই নেই। ক্লাসের সময় ৪৫ মিনিটের মধ্যে সামান্য অংশই শিক্ষার্থীদের বোঝাতে ব্যয় করেন শিক্ষক। বোর্ডে দু-একটি অঙ্ক করে দেখানো, রিডিং পড়া আর হোম ওয়ার্ক দেখায় সময় চলে যায়। ওই শিক্ষকরাই বাড়তি যত্নের নামে কোচিংয়ের ফাঁদ পেতেছেন। প্রতিটি বড় স্কুল ঘিরেই কমপক্ষে অর্ধশত কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে।

কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতে ২০১২ সালে একটি নীতিমালা প্রকাশ করেছে সরকার। তাতে একজন শিক্ষকের নিজ প্রতিষ্ঠানে বাইরে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের ১০ জন শিক্ষার্থী পড়ানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে শুধু অভিভাবকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানপ্রধান অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে প্রতি বিষয়ে মেট্রোপলিটন শহরে মাসিক ৩০০ টাকা, জেলা শহরে ২০০ টাকা এবং উপজেলা বা স্থানীয়পর্যায়ে ১৫০ টাকা করে রসিদের মাধ্যমে নেওয়া যাবে। কিন্তু ওই নীতিমালা বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, তা মনিটর করার ব্যবস্থা নেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের খসড়ায় কোচিংসংক্রান্ত নীতিমালা অনুসরণ না করলে একজন শিক্ষককে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড ও ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হলেও সেই আইন দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, কোচিং ব্যবসা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং এর উপার্জন থেকে ভ্যাট কিংবা ট্যাক্সও সরকার কোনো দিন পায় না। তিনি বলেন, ‘আমাদের অনুসন্ধান টিম মনে করেছে, যেসব শিক্ষক একই জায়গায় থেকে দায়িত্ব পালন করছেন এই সুযোগেই কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। কোচিংয়ে উপার্জিত টাকার ভ্যাট বা ট্যাক্স কেউ দেয় না। এটা না দিলে উপার্জনটিও অবৈধ হয়ে যায়। এ জন্য আমরা সরাসরি কোনো ক্রিমিনাল চার্জ আনিনি। আমরা সরকারকে বলেছি এসব দেখা দরকার। আমরা স্কুলের নাম, শিক্ষকের নামসহ তালিকা করে সুপারিশ পাঠিয়েছি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। ’ তিনি আরো বলেন, কোচিং বন্ধ করার আইন করতে হবে, বিধিমালা করতে হবে; নইলে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সেটা বন্ধ করার ব্যবস্থা করতে হবে।

দুদকের তালিকাভুক্ত ৯৭ শিক্ষক : যাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে আছেন আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নিজাম উদ্দিন কামাল (ইংরেজি), আব্দুল মান্নান (রসায়ন), উম্মে ফাতিমা (বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়), মো. আজমল হোসেন (বাংলা), গোলাম মোস্তফা (গণিত), আশরাফুল আলম (রসায়ন), বাবু সুবাসচন্দ্র পোদ্দার (রসায়ন), লাভলী আখতার, তাসমিন নাহার, মতিনুর (ইংরেজি), উম্মে সালমা (ইংরেজি), মো. আব্দুল জলিল (ব্যবসায় শিক্ষা), মোহাম্মদ ফখরুদ্দীন (রসায়ন), মনিরা জাহান (ইংরেজি), ফাহমিদা খানম পরী (গণিত), লুত্ফুন নাহার (গণিত), হামিদা বেগম (গণিত), নাজনীন আক্তার (গণিত), উম্মে সালমা (ইংরেজি), তৌহিদুল ইসলাম (ইংরেজি), সুরাইয়া জান্নাত (ইংরেজি), মো. সফিকুর রহমান-৩ (গণিত ও বিজ্ঞান), মো. শফিকুর রহমান সোহাগ (গণিত ও বিজ্ঞান), নুরুল আমিন (গণিত), মনিরুল ইসলাম (ইংরেজি), রফিকুল ইসলাম (সমাজবিজ্ঞান), গোলাম মোস্তফা (গণিত), অহিদুজ্জামান (বাংলা), মাকসুদা বেগম মালা, আলী নেওয়াজ আলম করিম, মো. আবুল কালাম আজাদ ও মো. আব্দুর রব এবং বনশ্রী শাখার মো. শফিকুল ইসলাম (ইংরেজি), মো. মাহবুবুর রহমান (পদার্থবিজ্ঞান), মো. মোয়াজ্জেম হোসেন (গণিত) ও আব্দুল হালিম (গণিত)।

মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকরা হচ্ছেন সহকারী প্রধান শিক্ষক এনামুল হক, মেজবাহুল ইসলাম (ইংরেজি), সুবীর কুমার সাহা (গণিত), মো. সাইফুল ইসলাম, মোহনলাল ঢালী, বাসুদেব সমদ্দার, বকুল বেগম, আসাদ হোসেন (ইংরেজি), প্রদীপ কুমার বসাক, আবুল খায়ের, শারমীন খানম, মো. কবীর আহমেদ, খ ম কবির আহমেদ, মো. দেলোয়ার হোসেন, মাও. কামরুল হাসান, মো. রুহুল আমিন-২, মো. কামরুজ্জামান, শেখ শহীদুল ইসলাম, শুকদেব ঢালী, হাসান মঞ্জুর হিলালী, আমানউল্লাহ আমান, হামিদুল হক খান, রমেশ চন্দ্র বিশ্বাস ও চন্দন রায়।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে আছেন প্রভাতি শাখার সহকারী শিক্ষক কামরুন্নাহার চৌধুরী (ইংলিশ ভার্সন), ড. ফারহানা (পদার্থবিজ্ঞান), সুরাইয়া নাসরিন (ইংরেজি), লক্ষ্মী রানী, ফেরদৌসী ও নুশরাত জাহান। রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এ বি এম মইনূল ইসলাম (গণিত), মো. আলী আকবর (গণিত), মো. রেজাউর রহমান (গণিত), মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম (ইংরেজি) ও মোহাম্মদ কামরুজ্জামান (রসায়ন)।

মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের আছেন প্রভাতি শাখার সহকারী শিক্ষক আবুল হোসেন মিয়া (ভৌতবিজ্ঞান), মো. মোখতার আলম (ইংরেজি), মো. মাইনুল হাসান ভূঁইয়া (গণিত), মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন (গণিত), মুহাম্মদ আফজালুর রহমান (ইংরেজি), মো. ইমরান আলী (ইংরেজি), দিবা শাখার সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ কবীর চৌধুরী, এ বি এম ছাইফুদ্দীন ইয়াহ, মো. মিজানুর রহমান, মো. আবুল কালাম আজাদ, মো. জহিরুল ইসলাম ও সহকারী শিক্ষক মো. জামাল উদ্দিন বেপারী।

মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের আছেন প্রভাতি শাখার সহকারী শিক্ষিক নূরুন্নাহার সিদ্দিকা (সামাজিক বিজ্ঞান), দিবা শাখার সহকারী শিক্ষক শাহ মো. সাইফুর রহমান (গণিত), মো. শাহ আলম (ইংরেজি), মোসা. নাছিমা আক্তার (ভূগোল)।

গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের আছেন মো. শাহজাহান সিরাজ (গণিত), মোহাম্মদ ইসলাম (গণিত), জাকির হোসেন (গণিত), মো. শাহজাহান (গণিত), মো. আবদুল ওয়াদুদ খান (সামাজিক বিজ্ঞান), মো. আলতাফ হোসেন খান (ইংরেজি), মো. আযাদ রহমান (ইংরেজি) ও রণজিৎ কুমার শীল (গণিত)।

খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের আছেন সহকারী শিক্ষক মো. নাছির উদ্দিন চৌধুরী। সূত্র: কালের কণ্ঠ

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন