আজ কি খালেদা জিয়ার জামিন হবে?

  26-02-2018 09:17AM


পিএনএস ডেস্ক: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি শেষে হাইকোর্ট বলেছেন, নিম্ন আদালতের নথি পাওয়ার পর জামিন আবেদনের ওপর আদেশ দেয়া হবে। গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালত বলেন, শুনানি শেষ। নিম্ন আদালতের নথি আসার পর জামিনের আদেশ।

খালেদা জিয়ার পক্ষে জামিন আবেদনের ওপর শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

শুনানিতে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, খালেদা জিয়া একজন সম্মানিত ব্যক্তি, বিচারিক আদালত সংক্ষিপ্ত সাজা দিয়েছেন। আদালতের রেওয়াজ আছে তিনি জামিন পেতে পারেন। এ ছাড়া তিনি বয়স্ক নারী। তিনি শারীরিকভাবেও অসুস্থ। ট্র্যাডিশন (প্রচলিত রীতি) হলো, আপিল গ্রহণ করার পর আপিল পেনডিং থাকা অবস্থায় জামিন দেয়া হয়।

তবে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, সংক্ষিপ্ত সাজায় জামিন পেতে পারেন, এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না। এ ছাড়া তিনি যে অসুস্থ, সেটার পক্ষে কোনো মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দেয়া হয়নি। এ মামলা আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত হতে পারে।

এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ২০০৮ সালের মামলা। ২৩৭ কার্যদিবসে তিনি ১০৯ বার বিভিন্ন অজুহাতে সময় নিয়েছেন। এ ছাড়া ২৬ বার উচ্চ আদালতে এসেছেন। মোট কথা নয় বছরের মতো মামলাটি চলছে। এখানেও দেরি হবে না, তা বলা যায় না। আপিল শুনানির জন্য এক মাসের মধ্যে পেপারবুক প্রস্তুত হতে পারে। যেমন বিডিআর মামলায় হয়েছিল। আমাদের কোর্টের সে প্রযুক্তি আছে।
আদালত শুনানি শেষে নি¤œ আদালতের নথি আসার পর জামিন আবেদনের ওপর আদেশের জন্য সময় নির্ধারণ করেন।

গতকাল বেলা ২টায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনটি শুনানির জন্য ছিল। তার আগেই বেলা ১টার মধ্যে আদালত কক্ষ কানায় কানায় ভরে যায়। বেলা ২টা ১০ মিনিটে যখন আদালত বসেন তখন আদালত কক্ষ এবং কক্ষের সামনে তিলঠাঁই ছিল না। বিএনপি সমর্থক কয়েক শ’ আইনজীবী আদালতে উপস্থিত হন। এ অবস্থায় আদালত মামলার কার্যক্রম শুরু না করে উপস্থিত সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি জয়নুল আবেদীনকে উদ্দেশ করে বলেন, এ অবস্থায় আমাদের উঠে যেতে হবে। এ সময় জয়নুল আবেদীন বলেন, ক্ষমা করবেন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা; এ জন্য আইনজীবীরা উপস্থিত হয়েছেন। তবে সবাই শান্ত আছেন কেউ কোর্টের পরিবেশ নষ্ট করবেন না।

এরপর আদালত বলেন, এ রকম হলে মনে হবে কোর্টের ওপর প্রেসার সৃষ্টি করা হচ্ছে। কোর্টে পরিবেশ শান্ত থাকতে হবে। এমন পরিবেশে আমরা উঠে যাবো।

এ পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম দাঁড়িয়ে বলেন, আমরা আগেই বলেছি ৩০ জন আইনজীবী থাকবে।

জয়নুল আবেদীন তখন বলেন, কোনো বিশৃঙ্খলা হবে না। সবাই শান্তভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
এ সময় আদালত বলেন, যেভাবে দাঁড়িয়ে আছে, এটা ভালো হয়নি। অ্যাটর্নি জেনারেল ও সিনিয়র আইনজীবীদের দেখা যাচ্ছে না। আদালত আরো বলেন, আমরা ১০ মিনিট পর উঠব। আপনারা পরিবেশ ঠিক করেন। এর ১৫ মিনিট পরে বেলা ২টা ২৫ মিনিটে আদালত আবার বসেন।

আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা সব সময় আদালতের পরিবেশ ঠিক রাখার চেষ্টা করি। আমাদের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী জামিন আবেদনের শুনানি করবেন। এরপর এ জে মোহাম্মদ আলী খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে সংক্ষিপ্ত শুনানি করেন।

গতকাল আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন জানান, খালেদা জিয়ার পক্ষে জামিন আবেদনের শুনানি করবেন তার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। এ সময় আদালতে প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক আইন উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ উপস্থিত ছিলেন। আদালতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, খন্দকার মাহবুব হোসেন, আবদুর রেজাক খান, জিউর রহমান খান, জয়নুল আবেদীন, শাহ মো: খসরুজ্জামান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, নিতায় রায় চৌধুরী, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, আমিনুল ইসলাম, বদরুদ্দোজা বাদল, কায়সার কামাল, ফহিমা নাসরিন মুন্নী, রাগীব রউফ চৌধুরী, জাকির হোসেন ভ‚ইয়া, সগীর হোসেন লিওন প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।

গত বৃহস্পতিবার বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার জরিমানা স্থগিত করে বিচারিক আদালতের নথি ১৫ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়।

তার আগে, খালেদা জিয়ার পক্ষে ৩৪টি যুক্তি দেখিয়ে ৮৮০ পৃষ্ঠার জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। বয়স, শারীরিক অবস্থা ও সামাজিক মর্যাদা বিবেচনায় নিতে খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুরের আরজি জানানো হয়।

জামিন আবেদনে বলা হয়, আবেদনকারীর বয়স ৭৩ বছর। তিনি শারীরিক বিভিন্ন জাটিলতায় ভুগছেন। তিনি ৩০ বছর ধরে গেঁটে বাত, ২০ বছর ধরে ডায়াবেটিস, ১০ বছর ধরে উচ্চ রক্তচাপ ও আয়রন স্বল্পতায় ভুগছেন।

১৯৯৭ সালে তার বাম হাঁটু প্রতিস্থাপন করা হয়েছে এবং ডান পায়ের হাঁটু ২০০২ সালে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। হাঁটু প্রতিস্থাপনের কারণে তার গিটে ব্যথা হয়, যা প্রচণ্ড যন্ত্রণাদায়ক। এমনকি হাঁটাহাঁটি না করার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ রয়েছে। শারীরিক এসব জাটিলতার কারণ বিবেচনায় তার জামিন মঞ্জুরের আরজি জানানো হয়।

জামিন আবেদনে যুক্তি দেখানো হয়, উপমহাদেশ এবং দেশের উচ্চ আদালতগুলোয় দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে, যখন আসামি একজন নারী হন তখন তার অনুক‚লে জামিন বিবেচনা করা হয়ে থাকে। সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আবেদনকারীর জামিন আবেদন মঞ্জুর করা হোক।

এতে আরো বলা হয়, জামিন আবেদনকারী বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপারসন। বিচারিক আদালত তার এ বিষয়টি উপেক্ষা করেছে। তা ছাড়া যে মামলায় তাকে সাজা দেয়া হয়েছে তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাকে হয়রানি করার জন্য এটা করা হয়েছে।
গতকাল দুপুরে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানির সময় আইনজীবী, সরকারি আইন কর্মকর্তা এবং সাংবাদিকদের উপস্থিতে আদালতে তিলধারণের ঠাঁই ছিল না।

আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে প্রথমে শুনানি করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। তিনি খালেদা জিয়ার জামিন প্রার্থনা করে বলেন, আপিলকারী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এটা লঘু প্রকৃতির দণ্ড। কোর্টের প্রথা রয়েছে কেউ নারী হলে এবং সাজা কম হলে আদালত জামিন দিয়ে থাকেন। তিনি খালেদা জিয়ার শারীরিক জটিলতার বিষয়গুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইনে তার (খালেদা জিয়া) বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কিন্তু এ আইনে তাকে সাজা দেয়া হয়নি। এমনকি তাকে এ আইনে অভিযুক্তও করা হয়নি। এখানে সংক্ষিপ্ত সাজা দেয়া হয়েছে। আদালতের রেওয়াজ আছে তিনি জামিন পেতে পারেন। এ ছাড়া তিনি বয়স্ক ও অসুস্থ নারী।

জামিনের বিরোধিতা করে দুদক কৌঁসুলি খুরশীদ আলম খান বলেন, আপিল বিভাগের রায় রয়েছে এ ধরনের লঘু দণ্ডের ক্ষেত্রে দ্রুত আপিল নিষ্পত্তি করতে হবে। আর জামিনও দেয়া যাবে না। তিনি বলেন, আপিলকারীর শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে জামিন চাওয়া হয়েছে। কিন্তু এর পক্ষে কোনো মেডিক্যাল সার্টিফিকেট তারা আদালতে দাখিল করেননি।

আদালত তখন বলেন, উনারা তো শারীরিক অবস্থার বিষয়টি এফিডেভিট আকারে দিয়েছেন। আপনি যদি অস্বীকার না করেন তাহলে ধরে নিতে হবে এটা ঠিক আছে। এতে দুদক কৌঁসুলি বলেন, দণ্ডবিধি এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে এই মামলার আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। কিন্তু জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্টের ২৬ ধারা বিবেচনায় নিয়ে ৪০৯ ধারায় সাজা দেয়া হয়েছে। আপিল বিভাগ সাবেক রাষ্ট্রদূত এটিএম নাজিমউল্লাহর মামলার রায়ে এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।

এ পর্যায়ে আদালত বলেন, এ বিষয়টি তো বিচারিক আদালতের আদেশের অংশে দেখতে পাচ্ছি না। যদিও বিচারক রায়ে অনেক কথাই বলেছেন। দুদক কৌঁসুলি বলেন, আগে তো দোষী সাব্যস্ত করতে হবে। এরপর আসে দণ্ড দেয়ার বিষয়টি। তিনি বলেন, আপিলকারীর জামিন আবেদন থেকে দেখতে পাচ্ছি তার কাস্টডি পিরিয়ড হচ্ছে দুই মাস পাঁচ দিন। আসামির কাস্টডি পিরিয়ড এবং অপরাধের গভীরতা দেখে তাকে জামিন দেয়া যায় না। তবে খালেদা জিয়ার বয়স নিয়ে আমাদের কোনো বিরোধিতা নেই। আর জামিন দেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে আদালতের এখতিয়ার।

খুরশীদ আলম খান শুনানিতে আপিল বিভাগের একটি রায়ের নজির তুলে ধরে বলেন, মাদক আইনে এক আসামিকে দুই বছর সাজা দেয়া হয়। আপিল বিভাগ সাজার রায় বহাল রাখেন। জামিন দেননি।

এ সময় আদালত বলেন, এটা তো কোনো নজির হতে পারে না। এটার সাথে এ মামলার কোনো সম্পর্ক নেই। খুরশিদ আলম খান তখন বলেন, সংক্ষিপ্ত সাজায় জামিন পেতে পারেন, এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না।
তিনি বলেন, উনি এ মামলায় আজ পর্যন্ত মোট দুই মাস পাঁচ দিন সাজা খেটেছেন। এ সময়ে তার সাজা থেকে বাদ যাবে। এ সংক্ষিপ্ত সময় জেল খাটার পর নথি আসার আগে তাকে জামিন দেয়া ঠিক হবে না।

এ সময় আদালত বলেন, নথি আসার আগেও দিতে পারি আবার নথি আসার পরও দিতে পারি। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানিতে বলেন, দেশের ইতিহাসে এ মামলাটি গুরুত্বপূর্ণ। কারন এখানে এতিমের টাকা খোয়া গেছে। আর রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে কেউ তার দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। খালেদা জিয়া ছিলেন সরকার প্রধানও। অরফানেজ মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বিলম্বের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, এই মামলাটি ২০০৮ সালে দায়ের করা হয়। ২০০৯ সালে মামলাটি বাতিলের আবেদন করেন খালেদা জিয়া। ওই আবেদন ২০১১ সালে নিষ্পত্তি হয়েছে। এ জন্য আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এ পর্যায়ে আদালত বলেন, নিষ্পত্তি তো দ্রæতই হয়েছে। অনেক মামলা তো বছরের পর বছর পেরিয়ে যাচ্ছে নিষ্পত্তি হচ্ছে না। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিচারিক আদালতের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ, সাক্ষ্য বাতিল, পুনরায় তদন্ত এবং বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে কয়েকবার হাইকোর্টে আসলেন আপিলকারী। মামলার বিচার বিলম্বিত করতে এমন কোনো ধাপ নেই যে তার আশ্রয় নেয়া হয়নি। এ কারণে সাড়ে ৯ বছর লেগেছে মামলাটি নিষ্পত্তি হতে। ২৩৭ কর্মদিবসের মধ্যে ১০৯ বার খালেদা জিয়া সময় নিয়েছেন। ২৬ বার দ্বারস্থ হয়েছেন উচ্চআদালতের। ফলে এই মামলায় আজকে খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া হলে এই মূল আপিলের শুনানি আর কখনই সম্ভব হবে না। আদালত বলেন, এটা আপনি কিভাবে বলেন?

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, দুর্নীতির মামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ কয়েক বছর জেল খেটে মুক্তি পেয়েছেন। এ বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। এখনই খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া হলে বৈষম্য হবে।
আদালত বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল এটা কোন উদাহরণ হলো? একজন এতদিন জেল খেটেছেন বলেই কি আরেকজনকে এতদিন জেল খাটতে হবে?

এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদেরও জনতা টাওয়ার মামলায় সাজা হয়েছে। তিনি জেল খেটেছেন।

জবাবে আদালত বলেন, এসব কথা টিভিতে টক শোর বক্তব্য হতে পারে। মামলার কোনো যুক্তি আছে কি না?
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদবের ৮৯ লাখ টাকা তছরূপের কারণে সাড়ে তিন বছর জেল হয়েছে। আর এই মামলায় দুই কোটি টাকার উপরে অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে।

এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর একটি বক্তব্যের পত্রিকা কাটিং আদালতে পড়ে শুনিয়ে বলেন, যেখানে বলা হয়েছে, রায় প্রদানকারী বিচারককেও ছাড় দেয়া হবে না। এ সময় আদালত বলেন, এসব বিষয়ে আমরা কথা বলব না। কেননা উকিলরা ও রাজনীতিবিদরা সবাই রায় পক্ষে গেলে বলে ঐতিহাসিক রায় আর বিপক্ষে গেলে বলে বিদ্বেষমূলক রায়। আর রাজনীতিবিদরা তো বলে রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছুই নেই। সুতরাং রাজনীতি বিষয়ে আমরা কিছু বলব না।

এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সবাই বলেন না। যেমন আমাদের মওদুদ আহমদ সাহেবও আছেন, জয়নুল আবেদীন সাহেবও রয়েছেন। তারা এসব কথা বলবেন না।

বিকেল সাড়ে ৩টায় শুনানি শেষে আদালতের দু’জন বিচারপতি পরামর্শ করে আদেশ দেন। আদেশে বলা হয়, জামিন আবেদনের শুনানি শেষ, নি¤œ আদালতের নথি আসার পর আদেশ।

আদালতের এ আদেশের পর সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনে আইনজীবীরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার শুনানি আজ : জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করার বিষয়ে আজ সোমবার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালত শুনানির এ দিন ধার্য করেন। একই সাথে এ মামলায় খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ সোমবার পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।

গতকাল দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করার জন্য একটি আবেদন করেন। তিনি বলেন, এ মামলায় খালেদা জিয়া ছাড়া যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা যাবে না। তাই তাকে আদালতে উপস্থিত করার জন্য জেল কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেয়া হোক।

অন্য দিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও আব্দুর রেজ্জাক খান বলেন, হাইকোর্টে অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় জামিন শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। এ জন্য আমরা মামলার কার্যক্রম আজকের জন্য মুলতবি রাখার আবেদন করছি। হাইকোর্ট যদি খালেদা জিয়াকে জামিন দেন তাহলে আর এ প্রোডাকশন ওয়ারেন্টের প্রয়োজন হবে না, তিনি আদালতে হাজির হবেন। তারা চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় তার জামিন বর্ধিত করে সোমবার পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবির আবেদন করেন।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে খালেদা জিয়ার জামিন আজ সোমবার পর্যন্ত বর্ধিত করেন আদালত। একই সাথে প্রোডাকশন ওয়ারেন্টের বিষয়ে শুনানির তারিখও সোমবার ধার্য করেন আদালত।

খালেদা জিয়ার পক্ষে ওই আদালতে আইনজীবী হিসেবে আদালতে উপস্থিত ছিলেন মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, কায়সার কামাল, জাকির হোসেন ভূঁইয়া, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন