খালেদা জিয়ার জামিন রোববার পর্যন্ত স্থগিত আপিল বিভাগের

  14-03-2018 10:07AM


পিএনএস ডেস্ক: বিএনপি খালেদা জিয়ার জামিন রোববার পর্যন্ত স্থগিত করেছে আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্ব চার সদস্যের বেঞ্চ আজ সকালে এ রায় দিয়েছে।

আজ বুধবার সকাল ৯ টার পর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত চেয়ে করা ২টি আবেদনের ওপর শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

আদালত দুদকের আইনজীবীর বক্তব্য শুনে এ রায় দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী। খালেদা জিয়ার আইনজীবী মোহাম্মদ আলী জানান, তাদের বক্তব্য শোনা হয়নি। তিনি তাদের বক্তব্য শোনার জন্য আদালতকে অনুরোধ করলে আদালত বলেন, কারো কথা শোনা, না-শোনা আমাদের এখতিয়ার। রোববার উভয় পক্ষের কথা শুনে চূড়ান্ত রায় দেয়া হবে।

এর আগে জিয়ার জামিন বহাল রেখিছিল চেম্বার বেঞ্চ।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আবেদনে কোনো আদেশ দেননি চেম্বার বিচারপতির আদালত। আবেদন দুইটির ওপর আজ বুধবার আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠানো হয়। গতকাল উভয় পক্ষের শুনানি গ্রহণ করে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালত এ আদেশ দেন।

ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আজ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন দুইটি যথাক্রমে এক ও দুই নম্বরে রাখা হয়েছে।

আর চেম্বার বিচারপতি স্থগিতাদেশ না দেয়ায় খালেদা জিয়ার জামিন আদেশ বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।

আদালতে শুনানিতে খালেদা জিয়ার পক্ষে অংশ নেন প্রবীণ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী ও জয়নুল আবেদীন। আদালতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মওদুদ আহমদ, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, আমিনুল ইসলাম, কায়সার কামাল প্রমুখ।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।

রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছাড়া খালেদা জিয়ার মামলায় আর কী আছে : খন্দকার মাহবুব হোসেন

আদেশের পর খালেদা জিয়ার অন্যাতম আইজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, চেম্বার আদালতে শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, এতিমের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। জামিন না দিয়ে দ্রুত আপিল নিষ্পত্তির আদেশ দেন। এর জবাবে আমি আদালতে বলেছি, এতিমের টাকা আত্মসাৎ হয়েছে কি না তা মূল আপিলের শুনানিতে দেখা যাবে। মামলার নথিতে দেখা যাবে দুই কোটি ৩৩ লাখ টাকা আত্মসাতের কথা বলা হয়েছে। অথচ বর্তমানে ওই অ্যাকাউন্টে ৬ কোটি টাকারও বেশি আছে। তাকে কথিত আত্মসাতের সহযোগী বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল আপিলটি দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য বলছেন, যেখানে দেশে ৩৩ লাখ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। হাইকোর্টে চার লাখ মামলা দীর্ঘদিন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছাড়া এ মামলাতে আর কী মধু আছেÑ যার জন্য এটা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।

জামিনাদেশে বিচারপতিদের স্বাক্ষর : বেগম খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া চার মাসের জামিনাদেশে স্বাক্ষর করেছেন আদেশ প্রদানকারী দুই বিচারপতি। গতকাল স্বাক্ষরের পর বিকেল পৌনে ৫টায় হাইকোর্টের আদান-প্রদান শাখা থেকে নি¤œ আদালতে আদেশটি পাঠানো হয়। আইনজীবীরা জানান, হাইকোর্ট থেকে জামিনের আদেশ বিচারিক আদালতে গেলে সেখানে জামিননামা প্রস্তুত করে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়া হলে তিনি কারামুক্ত হবেন।

গত সোমবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেন। রায় ঘোষণার পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তাৎক্ষণিকভাবে রায়টি দুই দিনের জন্য স্থগিত রাখার আবেদন জানালে আদালত তা নামঞ্জুর করেন।

খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দিয়ে হাইকোর্ট এ সময়ের মধ্যে আপিল শুনানির জন্য সংশ্লিষ্ট শাখাকে পেপারবুক প্রস্তুত করতে নির্দেশ দেন আদালত। পেপর বুক প্রস্তুত হয়ে গেলে যেকোনো পক্ষ শুনানির জন্য আপিল উপস্থাপন করতে পারবে।

যেসব যুক্তি আমলে নিয়ে খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট, সেগুলো হলো সাজার পরিমাণ, মামলাটি বিচারিক আদালতের নথি এসেছে, আপিল শুনানির জন্য পেপার বুক তৈরি হয়নি, বিচারিক আদালতে মামলা চলাকালে তিনি নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিয়েছেন, তিনি জামিনে ছিলেন ও জামিনের অপব্যবহার করেননি এবং তার বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার বিষয়।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন