৬৩ জেলায় বোমা হামলা : ১৩ বছরেও শেষ হয়নি বিচার

  17-08-2018 02:58PM

পিএনএস ডেস্ক : প্রচলিত শাসন ও বিচার পদ্ধতি বাতিলের দাবি করে ধর্ম ভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার নামে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩টি জেলায় একযোগে প্রায় ৫০০ বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি। এই হামলায় ২ জন নিহত ও প্রায় দুই শতাধিক মানুষ আহত হন। তবে এর আগে থেকেই জেএমবির আমির শায়েক আবদুর রহমার ও অপারেশনাল কমান্ডার সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই দেশের উত্তরাঞ্চলে ত্রাস সৃষ্টি করেন।

আল্লাহর আইন কায়েম ও প্রচলিত বিচার পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে দেশজুড়ে চালোনো হয় সিরিজ বোমা হামলা। দেশের ৬৩ জেলার সাড়ে ৪শ স্থানে পাঁচ শতাধিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) সংগঠন। একযোগে কেঁপে ওঠে সারা দেশ। আহত হয় শত শত মানুষ। কিন্তু সেই মামলার ১৩ বছর পার হয়ে গেলেও শেষ হয়নি বিচার কাজ। ১৪৯টি মামলার মধ্যে ৫৬টি মামলা এখনও চলমান।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দায়ের করা মামলাগুলোর মধ্যে ৯৩টি মামলার রায়ে ২৭ জনের মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে ৩৩৪ জনের বিরুদ্ধে।

মামলার তথ্য অনুযায়ী, ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া ১৫৯টি মামলার মধ্যে ১৪৯টি মামলার অভিযোগ পত্র দাখিল করে পুলিশ। এর মধ্যে ৯৩টি মামলা ইতিমধ্যে নিস্পত্তি হয়েছে। বাকি ৫৬টি মামলা এখনও চলমান। নিস্পত্তি হওয়া ৯৩টি মামলার রায়ে ২৭ জনের মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে ৩৩৪ জনের বিরুদ্ধে। এখনও ৩৮৬ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচার চলছে।

জেএমবি প্রধান শায়খ আব্দুর রহমান এবং বাংলা ভাইয়ের ফাঁসির পর অনেকেই মনে করেছিলেন সংগঠনটি আর মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারবেনা। তবে ২০১৪ সালে ময়মনসিংহ থেকে সিরিজ বোমা হামলায় অন্যতম আসামি বুমারু মিজানসহ তিনজনকে ছিনিয়ে নিয়ে আবারো নিজেদের ক্ষমতার জানান দেয় জঙ্গিরা।

তবে ইতিমধ্যে ভারতে পালিয়ে থাকা বুমারু মিজান গ্রেপ্তার হয়েছে। খুব শিগগিরই তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে ইতোমধ্যে আমাদের আদান, প্রদান করার কথা হয়েছে। আমরা আশা করছি সময়মতো তাকে দেশে নিয়ে আসবো।

সিরিজ বোমা হামলায় মামলার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে, বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি রুহুল আমিন বলেন, ২০০৫ সালে ১৭ আগস্ট সারা দেশ ব্যাপি যে বোমা হামলা জঙ্গিবাহিনী করেন সে ঘটনার মোট ১৫৯ টি মামলা হয়েছে। তার মধ্যে ১৪৯ টি মামলা পুলিশ অভিযোগ পত্র দাখিল করে মোট ১১০৬ জন আসামির বিরুদ্ধে। এই দায়ের করা মামলাগুলোর মধ্যে ৯৩টি মামলার রায়ে ২৭ জনের মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে ৩৩৪ জনের বিরুদ্ধে। বাকি ৩৪৯ জনকে আদালত খালাস দিয়েছে। বাকি ৫৬ টি মামলায় ৩৮৬ জন আসামি বিচার চলছে।

বর্তমান সময়ে জঙ্গিদের কোন নেটওয়ার্ক আছে কিনা জানতে চাইলে ডিআইজি বলেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযানের পর তাদের আর বড় ধরনের হামলা করার শক্তি এখন আর নেই।

সেই সময়ে জঙ্গি সংগঠনের নেতা জারা ছিল তাদের সবাইকে আমরা আটক করতে সক্ষম হয়েছি। তার মধ্যে ২৭ জনকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে। তখনই সব নেতা চলে গেছে। তারপর জারা এসেছে তারাও ধরা খেয়েছে। এখন বর্তমানে আর তেমন কোন জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক নেই বলে আমি মনে করি।

এদিকে, সরকারি দলের পৃষ্টপোষকরা ছাড়া দেশজুড়ে এতো বড় জঙ্গি নেটওয়ার্ক তৈরি সম্ভব না বলে মন্তব্য করেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক অব. মে. জে. মোহাম্মদ আলী সিকদার। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বার বার অভিযানে পর জঙ্গিদের কোমর ভেঙ্গে গেছে। বড় ধরণের হামলা করার ক্ষমতা সক্ষমতা এখন আর তাদের নেই।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের মানুষ জঙ্গিবাদকে পছন্দ করে না। সবাই জঙ্গিদের ঘৃণা করে। তবে জঙ্গিরা দূর্বল হলেও তারা বসে নেই, তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না বলেও মন্তব্য করেন এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন