হোটেলে নিয়ে ছাত্রী ধর্ষণ করা পল্টন থানার ওসি বরখাস্ত

  01-10-2019 12:10AM



পিএনএস ডেস্ক: চাকরি দেওয়ার কথা বলে এক ছাত্রীকে হোটেলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হকের বিরুদ্ধে। পরে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওই তরুণীর সঙ্গে মাসের পর মাস শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন তিনি।

এ ঘটনায় (ওসি) মাহমুদুল হককে বরখাস্ত করা হয়েছে। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে তাকে এ বরখাস্ত করা হয়।
মতিঝিল বিভাগের ডিসি মো. আনোয়ার হোসেন জানান, এক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত বোর্ড গঠন করা হয়। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সদর দপ্তরে পাঠানো হয়। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।

ওই তরুণী গণমাধ্যমকে জানান, তিনি অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়লে ওসি গর্ভপাতের শর্তে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিলে তিনি গর্ভপাত করান। তবে এরপর মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি আর বিয়ে করেননি। একপর্যায়ে ওই তরুণীর সঙ্গে যোগাযোগই বন্ধ করে দেন ওসি মাহমুদুল।

ভুক্তভোগী ওই তরুণী আরও বলেন, ‘আমি সরকারি একটি কলেজ থেকে পড়ালেখা শেষ করে চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এর মধ্যে ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে ওসি মাহমুদুল হক আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলতেন। গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর তিনি চাকরি দেওয়ার কথা বলে আমাকে ঢাকায় ডেকে আনেন। আমাকে রাখার জন্য পল্টনের ক্যাপিটাল হোটেলের একটি রুমে নিয়ে যান। সেখানে হোটেল বয়কে দিয়ে আমার জন্য স্যুপ নিয়ে আসান। আমি খেতে না চাইলেও জোর করে খাওয়ান। এরপরই আমি ঘুমিয়ে পড়ি।’

ওই তরুণী বলেন, ঘুম ভাঙলে দেখি রাত ২টার মতো বাজে। ওই সময় মাহমুদুল হক আমার পাশেই শুয়ে ছিলেন। আমি বুঝতে পারি, ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় ধর্ষণের শিকার হয়েছি। মাহমুদুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি আমাকে ভালোবাসেন। তার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো নয় জানিয়ে তিনি আমাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেন।

ওই তরুণীর অভিযোগ, এরপর প্রতি সপ্তাহেই ওই তরুণীকে ঢাকায় ডেকে এনে একই হোটেলে নিয়ে যেতেন মাহমুদুল হক। গত বছরের অক্টোবর মাসে তিনি বুঝতে পারেন, অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়েছেন। এ কথা মাহমুদুল হককে জানালে তিনি ওই তরুণীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গর্ভপাত করতে বলেন এবং একপর্যায়ে তার কথায় রাজি হয়ে গর্ভপাত করান ওই তরুণী।

তিনি জানান, দু’জনের সম্মতিতে তাদের মধ্যেকার শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ও ছবিও ধারণ করা হয়েছে, যেগুলো ওই তরুণীর কাছে রয়েছে।

ওই তরুণী বলেন, মাহমুদুল হক বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিলেও আমাকে বিয়ে করেননি। সবশেষ গত ২ এপ্রিল আমার সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ করেন দেন। আমি ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছি এসময়। পরে আমার পরিবার সবকিছু জানতে পারলে তারা মাহমুদুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে। এসময় আমার পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয়, পল্টন থানার ওসির অনেক ক্ষমতা, বাড়াবাড়ি করলে আমার অনেক ক্ষতি হবে। আমি ঢাকার বাইরে একটি চাকরি করছি। সেখানেও আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করেছেন মাহমুদুল হক।

ওই তরুণী বলেন, সবশেষে বাধ্য হয়ে আমি মতিঝিল জোনের এডিসি শিবলী নোমানকে বিষয়টি জানাই। তিনি বিষয়টি মীমাংসা করে দেবেন বলেও জানান। মাহমুদুলের বাবাকেও বিষয়টি জানাই। তবুও কোনো কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত আমি আইজিপি বরাবর লিখিত অভিযোগ করি। মাহমুদুল হক আমাকে বিয়ে না করলে আমি আদালতে মামলা করব।

ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, ওসি মাহমুদুল হক ২০০১ সালে এসআই পদে পুলিশে যোগ দেন। তার বাড়ি নওঁগা জেলায়। চাকরি জীবনে তিনি একটি গুরুদণ্ড-ব্ল্যাক মার্ক এবং ২২টি লঘুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। তিনি ২০১৭ সালের ২ জুলাই পল্টন থানার ওসি হিসেবে যোগ দেন। তার স্ত্রী ও এক সন্তান রয়েছে।

পিএনএস/ হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন