ক্যাসিনো খালেদের বিপুল সম্পদের সন্ধান!

  08-06-2020 09:01PM

পিএনএস ডেস্ক : ক্যাসিনোকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেফতারের আট মাস পর বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

রবিবার বিকালে ঢাকার মতিঝিল থানায় মামলাটি করেন সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের (ইকোনমিক ক্রাইম স্কোয়াড) পুলিশ পরিদর্শক ইব্রাহিম হোসেন। সোমবার সকালে সিআইডি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

২০১৯ সালে ১৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে ক্যাসিনো গডফাদার যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

মামলার অপর আসামিরা হলেন- আইয়ুব রহমান, আবু ইউসুফ ওরফে আবু হায়দার, দীন মজুমদার ও অজ্ঞাত আরও কয়েকজন। উল্লিখিত আসামিরা অর্থ পাচারে খালেদকে সহযোগিতা করেছেন বলে জানা যায়।

মামলার বাদী পুলিশ পরিদর্শক ইব্রাহিম হোসেন বলেন, খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়াকে গ্রেফতারের পর সিআইডি তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্ত শুরু করে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও চাঁদাবাজির বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া যায়। এরপর সিআইডির পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। এ বিষয়ে খালেদকে জিজ্ঞাসাবাদ ও আরো তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, কমলাপুর, মতিঝিল, খিলগাঁও ও সবুজবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ মাছের হাট, পশুর হাট, গণপরিবহন সিএনজি স্টেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রভাব খাটিয়ে চাঁদাবাজি করতেন খালেদ। শাহজাহানপুরে রেলওয়ের জমিতে অবৈধভাবে মার্কেট নির্মাণ করার পর তা বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ টাকা উপার্জন করেন।

এছাড়া মতিঝিল ফকিরাপুলে ইয়ংক্লাবে অবৈধভাবে ক্যাসিনো কারবার চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেন। এসব টাকা দিয়ে তার নামে ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়া ডেভেলপারস লিমিটেড, অর্ক বিল্ডার্স ও অর্পণ প্রোপার্টিজ নামে তিনটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। অবৈধ আয়ের টাকা দিয়ে গুলশানে একটি, শাহজাহানপুরে একটি এবং মোহাম্মদপুর কাদেরিয়া হাউজিংয়ে একটিসহ মোট তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন তিনি। যা তার নামে রয়েছে। এছাড়া তার নামে একটি প্রাডো এবং একটি নোহা গাড়ি রয়েছে।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, জনৈক আইয়ুব রহমানকে ব্যবহার করে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার করেছেন খালেদ মাহমুদ। তদন্তকালে খালেদের মালয়েশিয়ার মাই ব্যাংকের একটি, আরএইচবি ব্যাংকের একটি, সিঙ্গাপুরের ইউওবি ব্যাংকের একটি ও থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ব্যাংকের একটিসহ মোট চারটি এটিএম ডেবিট কার্ড জব্দ করা হয়।

২০১৮ সালের মে মাসে মালয়েশিয়ার মাই ব্যাংক ও আরএইচবি ব্যাংকে হিসাব খোলেন খালেদ। এই দুটি ব্যাংকের মালয়েশিয়ায় কেএলসিসি শাখায় ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট টাকা জমা দেখা যায়, ২৫ লাখ ৫৭ হাজার মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত। যার দুটি হিসাবে ২২ লাখ ৫৭ হাজার রিঙ্গিত এবং দুটি এফডি আরো তিন লাখ রিঙ্গিত পাওয়া যায়। তার জব্দকৃত পাসপোর্টেও ভিসায় মিস মাই টু হোম লেখা আছে। তার মানে সেকেন্ড হোম ভিসা প্রমাণিত হয়েছে। সেকেন্ড হোম ভিসার পূর্ব শর্ত হলো মালয়েশিয়ায় ব্যাংকে তার নামে এফডিআর রয়েছে।

সিআইডির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুরে খালেদ অর্পণ ট্রেডার্স পিটিসি লিমিটেড নামে একটি ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য বিপণী প্রতিষ্ঠান খোলেন। যার রেজিস্ট্রেশন হয় ২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর। ওই মাসেই সিঙ্গাপুর ইউনাইটেড ওভারসিজ ব্যাংকে তার মালিকানাধীন কোম্পানির নামে একটি হিসাব খোলেন। ওই অ্যাকাউন্টে ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ লাখ ৫ হাজার সিঙ্গাপুর ডলার জমা থাকার হিসাব পাওয়া যায়।

এসব টাকা বাংলাদেশ থেকে আরেক আসামি আইয়ুব রহমানের মাধ্যমে হুন্ডিতে পাচার করা হয়েছে বলে উঠে এসেছে তদন্তে। থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ব্যাংকে ২০১৮ সালে খালেদের নামে খোলা অ্যাকাউন্টে ১০ লাখ থাই বাথ জমা রাখার তথ্য পাওয়া গেছে। এসব টাকাও আইয়ুব রহমানের মাধ্যমে হুন্ডিতে পাচার করা হয়েছে। তিন দেশের চার ব্যাংকে মোট ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করেছেন।

আসামি খালেদের পাসপোর্টে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভারত, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য ও চীনের ভিসা রয়েছে। ২০১০ সাল থেকে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে তার ৭০ বার ভ্রমণের তথ্য পাওয়া যায়। তার বিরুদ্ধে সম্পৃক্ত অপরাধে জড়িত থাকা ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পত্তি অর্জনের দায়ে মতিঝিল ও গুলশান থানায় মাদক, মানিলন্ডারিং, দুদক আইনসহ ছয়টি মামলা তদন্তাধীন।

পিএনএস/মো. শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন