স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ-হত্যা: আদালতে যে জবানবন্দি দিলো ধর্ষক দিহান

  08-01-2021 05:04PM

পিএনএস ডেস্ক: রাজধানীর কলাবাগানে ইংরেজি মাধ্যম পড়ুয়া এক স্কুলছাত্রীকে (১৭) ধর্ষণের পর হত্যা মামলার একমাত্র আসামি তানভীর ইফতেখার দিহান (১৮) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিচ্ছেন। ঢাকা মুখ্য মহানগর আদালতের হাকিম মামুনুর রশীদের খাস কামরায় বক্তব্য রাখছেন দিহান।

বৃহস্পতিবার রাতে কলাবাগান থানায় মেয়েটির বাবার করা মামলায় শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) দিহানকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হাজির করেন। বেলা পৌনে তিনটার দিকে দিহানকে পুলিশের গাড়িতে করে আদালতে দেয়া হয়। এ সময় তাকে বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। এরপর আসামি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। দিহান নিজেই জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় আর রিমান্ড শুনানির দরকার পড়ছে না।

আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মুখ্য মহানগর আদালতের হাকিম মামুনুর রশীদ তার জবানবন্দি রেকর্ড করছেন। আদালতে কলাবাগান থানার (নারী ও শিশু) সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা স্বপন এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

বৃহস্পতিবার মাস্টারমাইন্ড স্কুলের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ ওঠে। ধর্ষণের শিকার ওই শিক্ষার্থীকে গুরুতর অবস্থায় আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতলে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এঘটনায় দিহানকে (১৮) একমাত্র আসামি করে মেয়েটির বাবা ধর্ষণ ও হত্যার মামলা করেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা মা কর্মস্থলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে যান। এর এক ঘণ্টা পরে তার বাবাও ব্যবসায়িক কাজে বাসা থেকে বের হয়ে যান। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ওই শিক্ষার্থী তার মাকে ফোন করে কোচিং থেকে পড়ালেখার পেপার্স আনার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। এই মামলার একমাত্র আসামি ‘ও’ লেভেল পড়ুয়া শিক্ষার্থী দুপুর আনুমানিক ১টা ১৮ মিনিটে ফোন করে ওই শিক্ষার্থীর মাকে জানান, মেয়েটি তার বাসায় গিয়েছিলেন। হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ায় তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়েছে।

অফিস থেকে বের হয়ে আনুমানিক দুপুর ১টা ৫২ মিনিটে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা হাসপাতালে পৌঁছেন। হাসপাতালের কর্মচারীদের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, আসামি তার কলাবাগান ডলফিন গলির বাসায় ডেকে নিয়ে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন। প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে অচেতন হয়ে পড়লে বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য আসামি নিজেই তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে যান। খবর পেয়ে কলাবাগান থানা পুলিশের একটি দল হাসপাতালে গিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিক‌্যাল কলেজ মর্গে পাঠায় বলে উল্লেখ করা হয় এজাহারে।

শুক্রবার দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার নিজের সোবহানবাগের বাসা থেকে কলাবাগানে বন্ধু দিহানের বাসায় যায়। সেখানে যাওয়ার পর আমরা জেনেছি, স্কুলছাত্রীটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার বন্ধুর ভাষ্যমতে, এরপর তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভর্তি করার আগেই স্কুলছাত্রীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

খবর পেয়ে আমরা তাৎক্ষনিকভাবে হাসপাতালে গিয়ে লাশ উদ্ধারসহ দিহানকে নামের ওই ছেলেটিকে আটক করি। এরপর তাকে হেফাজতে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

একপর্যায়ে সে স্বীকার করে, তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও সম্মতির ভিত্তিতে শারীরিক মেলামেশা হয়। এরপর ওভার ব্লিডিং হয়, এ কারণে স্কুলছাত্রীটি সেন্সলেস হয়ে যায়। তখন তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে তার মৃত্যু হয়। তবে দৈহিক মেলামেশার বিষয়টি পরীক্ষা-নীরিক্ষা সাপেক্ষে প্রমাণের বিষয়। এর বাইরে অন্য কোন কেমিকেল ব্যবহার করা হয়েছিলো কি-না, সেটি পরীক্ষার জন্য আলামত সংগ্রহের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন