পৃথিবীতে সবচেয়ে রহস্যময় এক দ্বীপ সেন্টিনেল

  17-10-2016 08:48PM

পিএনএস,ডেস্ক : আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে পৃথিবীতে রহস্যময় জায়গা খুব কমই আছে। আধুনিক স্যাটেলাইট ব্যাবস্থা দুঃস্বাহসী কিছু মানুষের কারণে অনাবিষ্কৃত ভূমিও তেমন নেই। তবে এমনও কিছু জায়গা আছে পৃথিবীতে যেগুলিকে আধুনিক প্রযুক্তি দিয়েও জয় করা যায়নি। এরকমই একটি জায়গা হল সেন্টিনেল দ্বীপ। এই দ্বীপটি বঙ্গপোসাগরের বুকেই অবস্থিত। নৃতাত্বিকদের মতে তারা প্রায় ৬০ হাজার বছর আগে দ্বীপটি তৈরী হয়েছিল। দ্বীপটির আয়তন ৭২ বর্গকিলোমিটার।

কাগজে কলমে দ্বীপটি ভারতের অন্তর্ভুক্ত হলেও দ্বীপটির উপর ভারতের কোন কর্তৃত্ব নেই। ভারত সরকার অনেকবার চেষ্টা করেও দ্বীপটি সম্পর্কে তেমন কিছু জানতে পারেনি। আরো নির্দিষ্ট করে বললে, তারা দ্বীপটিতে ঢুকতেই সক্ষম হয়নি। এর একমাত্র কারণ দ্বীপটিতে বসবাসরত অধিবাসীরা। দ্বীপটিতে কতজন মানুষ বাস করে তা সঠিকভাবে জানা যায় না।

২০০১ সালে সরকারীভাবে দ্বীপটির ব্যাপারে তথ্য নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্ত সে চেষ্টা অসম্পূর্ণই রয়ে যায়। অসম্পূর্ণ সেই পরিসংখ্যানে ৩৯ জন বাসিন্দার উল্লেখ পাওয়া যায় দ্বীপটিতে। সেন্টিনেল বসবাসরত অধিবাসীদের সেন্টিনাল জনগোষ্ঠী বলা হয়।

এরা সভ্যতার আলো থেকে দূরে থাকা এক শিকারী জনগোষ্ঠী। এরা কোন ভাষায় কথা বলে তাও জানা যায়নি। ধারনা করা হয় এদের ভাষার সাথে আন্দামানিক ভাষাগুলির মিল রয়েছে।

তবে দ্বীপটির বাসিন্দারা প্রচন্ড হিংস্র এবং আদিম মানসিক্তার। এদের নিষ্ঠুরতার অনেক কাহিনী শোনা যায়। ২০০৬ সালে দুই জেলে ভুলক্রমে ওই দ্বীপে ঢুকে পড়ে। দ্বীপের অধিবাসীরা তাকে মেরে ফেলে। জেলেদের উদ্ধারে পাঠানো হেলিকপ্টার থেকে তাদের আশ দেখা গিয়েছিল। এমনকি দ্বীপের অধিবাসীরা হেলিকপ্টার লক্ষ্য করেও তোর ছোড়া শুরু করে। ফলে জেলেদের উদ্ধার না করেই হেলিকপ্টারটি ফেরত আসতে বাধ্য হয়।

১৯৬৭ সাল থেকে প্রথম ভারতীয় কর্তৃপক্ষ দ্বীপের বাসিন্দাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা শুরু করে। ভারতের ট্রাইবাল ম্যানেজমেন্টের মহাপরিচালক টিএন পন্ডিতের নেতৃত্বে এই চেষ্টা শুরু হয়। যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা হিসেবে দ্বীপটির তীরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপহার রেখে আসা হত। যেমন , খাবার, পোশাক ইত্যাদি।
কিন্ত তাতে তাদের হিংস্র মানসিকতার কোন পরিবর্তন হয়নি। দ্বীপের কাছে কোন নৌকা বা উপরে কোন হেলিকপ্টার দেখলেই তীর, পাথর বা বর্শা জাতীয় অস্ত্র ছুড়ে মারত। ১৯৯০ সালের দিকে মধ্য আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে বসবাসরত এরকমই একটি জনগোষ্ঠী “জারওয়া”দের সাথে এক সংঘর্ষে বহিরাগত কিছু মানুষ প্রাণ হারায়।
এই ঘটনার পর ভারত সরকার সেন্টিনেল দ্বীপের বাসিন্দাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা বন্ধ করে দেয়। আশেপাশের তিন মাইল এলাকার মধ্যে বাইরের পৃথিবীর মানুষের প্রবেশের ব্যাপারেও কড়াকড়ি আরোপ করে আসছে ভারতীয় সরকার।

এরো প্রায় এক শতাব্দী আগের কথা। ১৮৮০ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলেও দ্বীপটির বাসিন্দাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। সেবার দ্বীপের ৬ জন বাসিন্দাকে তুলে আনা হয়। এর মধ্যে চারজন শিশু। প্রাপ্তবয়স্ক দুজনকে দ্বীপ থেকে আনার পরপরই মারা যায়। বাকি বাসিন্দাদের কিছুদিন রাখার পর কোন তথ্য না পেয়ে তাদের ঐ দ্বীপে রেখে আসা হয়।

২০০৪ সালের সুনামিতে দ্বীপটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তবে এর কিছুদিনের মধ্যেই বাসিন্দারা সুনামির ধাক্কা কাটিয়ে ওঠে। সুনামির কিছুদিন পরে এক হেলিকপ্টার থেকে দ্বীপের বাসিন্দাদের স্বাভাবিক কাজে ব্যাস্ত দেখা যায়।

বর্তমানে দ্বীপটি ভারত সরকারের অধীনে থাকলেও, দ্বীপের অধীবাসীদের জীবনযাত্রায় বহির্জগতের প্রভাবমুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দ্বীপটিতে যেতে বাধা না দেয়া হলেও, ভারত সরকার বিশেষভাবে সতর্ক করে আসছে দ্বীপটিতে প্রবেশের ব্যাপারে।




পিএনএস/বাকিবিল্লাহ্


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন