পুরোহিতের দুষ্টু আত্মাই ব্রহ্মরাক্ষস!

  28-11-2016 02:31PM

পিএনএস ডেস্ক: হিন্দুশাস্ত্রের বিভিন্ন কাহিনিতে ব্রহ্মদৈত্য বলে যে অতিপ্রাকৃত জীবটি অবস্থান করে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘ব্রহ্মরাক্ষস’ হিসেবে পরিচিত জীবটি মোটেই তার ফোটোকপি নয়। বরং একথা বলা যেতেই পারে, ব্রহ্মরাক্ষস একেবারেই স্বতন্ত্র একটি প্রাণী।

কিন্তু মজার ব্যাপার এই যে, দুই ক্ষেত্রেই একথা বলা হয়ে থাকে যে, কোনো ব্রাহ্মণ মারা গেল ব্রহ্মদৈত্য আর ব্রহ্মরাক্ষসের জন্ম হয়।

বাংলার ঐতিহ্যে বলা হয়, কোনো ব্রাহ্মণ কিশোর যদি তার উপনয়নের সময়ে মারা যায়, তবে তার পরিণতি ঘটে ‘ব্রহ্মদৈত্য’। কিন্তু ব্রহ্মরাক্ষসের জন্ম আরো একটু জটিল। কোনো ব্রাহ্মণ যদি তার জন্য নির্ধারিত কাজগুলো না করেন, তবে তিনি পরিণত হন ‘ব্রহ্মরাক্ষস’এ।

পরম্পরাগত সমাজে ব্রাহ্মণের জন্য নির্ধারিত কাজ ছিল যজন, যাজন, অধ্যয়ন, অধ্যাপন। এই চারটি কাজ থেকে যদি ব্রাহ্মণ বিচ্যুত হন, তবে তাকে ব্রহ্মরাক্ষস হতে হয়।

সপ্তম শতকে ময়ূরভট্ট বিরচিত ‘সূর্যশতক’ কাব্যে ব্রহ্মরাক্ষসের দ্বারা উত্ত্যক্ত হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন। সেই সাক্ষ্য ধরলে, ব্রহ্মরাক্ষস মোটেও কোনো ভালো জীব নয়। হিন্দু পরম্পরা তাকে ভয়ানক বলেই বিবৃত করেছে।

‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’, ‘পঞ্চতন্ত্র’ ইত্যাদি প্রাচীন সাহিত্যে উল্লেখ রয়েছে ব্রহ্মরাক্ষসের। এই কাহিনিগুলোতে ব্রহ্মরাক্ষস কখনো ভয়ঙ্কর, কখনো বা দয়ালু। কোনো ব্যক্তির ওপরে যদি সে সদয় হয়, তাকে সে দান করে বিপুল ধনরত্ন।

তার চেহারা বর্ণনা থেকে জানা যায়, সে বিশালকায়। তার মাথায় রাক্ষসের মতো শিং আর ব্রাহ্মণের মতো টিকি রয়েছে। তারা অবশ্য সাধারণ মানুষের রূপও ধরতে সমর্থ। কাহিনি থেকে জানা যায়, ব্রহ্মরাক্ষস ভবিষ্যদ্বাণীতেও দক্ষ।

ব্রহ্মরাক্ষসভারতের কেরলে ব্রহ্মরাক্ষসের মন্দির

ব্রহ্মরাক্ষস যেমনই লোক হোক না কেন, সাধারণ মানুষের তাকে এড়িয়ে চলারই কথা। কিন্তু মহারাষ্ট্র ও কেরলের বিভিন্ন জায়গায়, ব্রহ্মরাক্ষস রীতিমতো পূজা পান। বেশ কিছু জায়গায় তার মন্দিরও রয়েছে।

বহু মন্দিরে এমন বিশ্বাসও চলিত রয়েছে যে, সেই মন্দিরের কোনো পুরোহিতের আত্মাই আজ ব্রহ্মরাক্ষসে পরিণতিপ্রাপ্ত। দক্ষিণ ভারতের বহু দেবস্থানেই মূল মন্দিরের পাশে ব্রহ্মরাক্ষসের মন্দিরও দেখা যায়।

তবে, এ বিষয়ে বিরাটভাবে এগিয়ে রয়েছে কেরল। তিরুনাক্কারের শিব মন্দিরে, ব্রহ্মরাক্ষস আলাদা দেবালয়ে স্থান পেয়েছেন। সৌভাগ্য-সন্ধানীরা নিয়মিত সেখানে পূজা দেন।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন