জীবনযাত্রার মানের দিক থেকে বিশ্বের নিকৃষ্টতম ২৭ শহর

  29-11-2016 07:10PM


পিএনএস:জীবনযাত্রার মানের দিক থেকে বিশ্বের নিকৃষ্টতম শহরগুলোর বৈশিষ্ট হলো রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অপরাধ এবং জীবন যাপনের উপায়গুলোর নিচু মান।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় এইচআর পরামর্শক ফার্ম মার্কার প্রতিবছরের মতো এবারও তাদের কোয়ালিটি অপ লিভিং ইনডেক্স প্রাকাশ করেছে।

বিশ্বের ৪৫০টি শহর পর্যবেক্ষণ করে মার্কার জীবন যাত্রার মানের দিক থেকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হিসেবে চিহিন্ত করেছে ২৭টি শহরকে।

রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ, অর্থনৈতিক পরিবেশ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, সরকারি সেবা ও গণপরিবহন, বিনোদন, ভোগ্য পণ্য-দ্রব্য, আবাসন, প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রভৃতি উপাদান বিবেচনায় রেখে এই তালিকা করা হয়। মার্কারের তৈরি করা নিকৃষ্টতম শহরের তালিকায় স্থান পেয়েছে ২৩০টি শহর। এখানে তালিকার সবচেয়ে নিচের দিকে থাকা

২৭টি শহরের নাম তুলে ধরা হলো:
২৭. লোম, টোগো: টোগোর সবচেয়ে বড় এই শহরটি বেকারত্ব, অবকাঠামোর দুর্দশা এবং বর্জ্য সংগ্রহের কারণে নিকৃষ্টতম হিসেবে বিবেচিত।
২৬. তাশখন্দ, উজবেকিস্তান: গত বছরে এই রাজধানী শহরটি সন্ত্রাসবাদের উর্বরভুমি হয়ে উঠেছে। ২০১৫ সালে গত ১১ বছরে প্রথমবারের মতো এই শহরে থাকা মার্কিন দূতবাসে হামলা চালানো হয়। দেশটির সরকার বেড়ে চলা ইসলামি সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে।
২৫. আবিদজান, আইভরি কোস্ট: ব্রিটিশ দূতাবাস সন্ত্রাসবাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে দরকার ছাড়া এই শহরে ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে। সন্ত্রাসবাদের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে শহরটি।
২৪. আদ্দিস আবাবা, ইথিওপিয়া: শহরটিতে প্রচুর উঁচু ভবন তৈরি হচ্ছে কিন্তু এর বাসিন্দারা চরম দারিদ্রপীড়িত। এছাড়া সরকার এবং জনগনের মধ্যেও সামাজিক সংঘাত চরম আকার ধারন করেছে। বিশেষকরে ভবন নির্মাণ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময় শিক্ষার্থী ও কৃষকদের নিহত হওয়ার ঘটনার পর এই সংঘাত তুঙ্গে উঠেছে।
২৩. আশগাবাট, তুর্কমেনিস্তান: রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনার কারণে শহরটি চরম পানি ঘাটতিতে রয়েছে। ২০১৫ সালে শহরটিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হয়েছিল ৪৭.২ ডিগ্রি।
২২. হারারে, জিম্বাবুয়ে: রবার্ট মুগাবের স্বৈরশাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট শহরটি চরম দারিদ্রপীড়িত। ভুট্টার ফলন ৭৫% ব্যর্থ হওয়ায় এর লাখ লাখ নাগরিক না খেয়ে আছেন।
২১. বিশকেক, কিরগিজস্তান: দারিদ্রপীড়িত এই শহরটি ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস এর হামলায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে।
২০. লাগোস, নাইজেরিয়া: সামুদ্রিক জোয়ারের মতো প্রাকৃতিক পরিবেশগত হুমকির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে করতে জেরবার শহরটি। এছাড়া এর নাগরিকরা ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতায়ও ভুগছেন। শিক্ষার্থীদের অপহরণ হওয়া এবং খুনের মতো ঘটনা অহরহই ঘটছে।
১৯. আবুজা, নাইজেরিয়া: উচ্চ অপরাধ হার, আন্ত-সম্প্রদায়গত সহিংসতায় জর্জরিত এই শহরটি। এই শহরে গেলে অপহৃত হওয়া, সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হওয়া এবং অন্যান্য সহিংস ঘটনার শিকার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে সতর্কতা জারি করেছে ব্রিটিশ দূতাবাস।
১৮. দুশানবে, তাজিকিস্তান: দারিদ্র এবং জ্বালানি সংকট এই শহর এবং পুরো দেশটির জন্যই একটি বড় ইস্যু। আর অবকাঠামোর অভাবে সেখানে ব্যবসা করাও কঠিন বলে সতর্ক করেছে বিশ্বব্যাংক।
১৭. ঢাকা, বাংলাদেশ: বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর একটি ঢাকার অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হলো গার্মেন্টস পণ্যের রপ্তানি। কিন্তু এর কর্মপরিবেশ, মানবাধিকার পরিস্থিতি, স্থানীয় দারিদ্র চরম আকার ধারণ করেছে। ফলে এটি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণে রয়েছে।
১৬. ওউয়াগাদৌগু, বুরকিনা ফাসো: অনবরত সন্ত্রাসী হামলার হুমকিতে রয়েছে। আর চলতি বছরের শুরুর দিকে আল কায়েদার হামলায় একটি জনপ্রিয় হোটেলে ২৯ জন নিহত হয়।
১৫. ত্রিপোলি, লিবিয়া: গত বছর দুজন প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়ার লর্ডের সংঘাতে জর্জরিত শহরটির প্রধান বিমান বন্দরটি ধ্বংস হয়ে গেছে। সবগুলো দূতাবাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইউরোপের কাছাকাছি হওয়ায় অভিবাসন প্রত্যাশী এবং উদ্বাস্তুরা শহরটিতে ভিড় জমাচ্ছে।
১৪. নিয়ামেই, নাইজার: বিক্ষোভ, সরকারি দুর্নীতি এবং স্থানীয় দারিদ্র শহরটিকে এই তালিকায় স্থান করে দিয়েছে।
১৩. আন্তানারিভো, মাদাগাস্কার: শহরটি এবং দেশটির অবশিষ্টাংশ অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তবে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে কোনো ধরনের ক্রমাগত ও টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না।
১২. বামাকো, মালি: গত বছর শহরটি এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় কেঁপে উঠে। র্যাতডিসন ব্লু হোটেলে ১৭০ জনকে জিম্মি করে ২০ জনকে হত্যা করা হয়।
১১. নৌয়াকছোট, মৌরিতানিয়া: ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত এই শহরটি খুবই কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এরপর থেকে এটি সাহারার একটি বড় ও গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে গড়ে উঠতে থাকে। তথাপি শহরটি অতিরিক্ত জনসংখ্যা, খরা এবং দারিদ্রের ভারে ক্লিষ্ট। এবং বস্তিতে পূর্ণ হয়ে উঠেছে।
১০. কোনাক্রি, গায়েনা প্রজাতন্ত্র: ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ইস্যুতে এই বন্দরনগরীটি জাঁঝরা হয়ে গেছে। সহিংস অপরাধ, বিক্ষোভ এবং ধর্মঘটে শহরটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।
৯. কিনশাসা, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো: নৃতাত্ত্বিক জাতীয়তাবাদি সংঘাতে জর্জরিত শহরটিকে এনজিওরা ত্রাণ ও খাদ্য সহায়তা দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে।
৮. ব্রাজাভিলে, কঙ্গো: সরকারি দুর্নীতি শহরটিতে ব্যাপক বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। বিক্ষোভে পুলিশের হামলায় প্রচুর সংখ্যক মানুষ নিহত হয়েছে।
৭. দামেস্ক, সিরিয়া: শহরটি অনবরত সহিংসতা, গৃহযুদ্ধ এবং সন্ত্রাসী হামলায় জর্জরিত।
৬. নু’জামেনা, চাদ: শহরটি ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠী বোকো হারামের হামলায় জর্জরিত।
৫. খার্তুম, সুদান: সুদানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। আইএসআইএস এর লোকবল সংগ্রহের একটি প্রধান উৎস।
৪. পোর্ট অউ প্রিন্স, হাইতি: সহিংস অপরাধে জর্জরিত শহরটি ভ্রমণকারীদের জন্য বিপজ্জনক। ধর্ষণ এবং ডাকাতি নিত্যদিনের ঘটনা।
৩. সানা, ইয়েমেন: ইয়েমেনের সবচেয়ে বড় এই শহরটি সৌদি আরবের বিমান হামলায় জর্জরিত। এটি ইরান এবং সৌদি আরবের ছায়া যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
২. বাঙ্গুই, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র: অবিশ্বাস্যরকমভাবে দারিদ্রপীড়িত এই শহরটির অসংখ্য নাগরিক ত্রাণ সহায়তার ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছেন। আর এছাড়াও রয়েছে নিয়মিত সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ।
১. বাগদাদ, ইরাক: এই রাজধানী শহরটি তীব্র অবকাঠামোগত ক্ষতির শিকার হয়েছে। বেশ কয়েকটি যুদ্ধ এবং অনবরত সহিংসতায় এর পুরো অবকাঠামো ভেঙ্গে পড়েছে। ইসলামি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএস এর বিরামহীন হামলায় ঝাঁঝরা হয়ে গেছে শহরটি।


পিএনএস/বাকিবিল্লাহ্


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন