সন্তানকে বাঁচাতে বাবা, ‘আমাকে মারুন’!

  20-01-2017 03:18PM

পিএনএস ডেস্ক:সন্তানের জন্য সবই করতে পারে বাবা। নিজে না খেয়ে সন্তানকে খাওয়ান। নিজে ময়লা কাপড় পরে সন্তানকে ভাল কাপড় পরান। সারাদিন কঠিন পরিশ্রম করেও সন্তানকে একটি ভালো স্কুলে পড়ার ব্যবস্থা করেন। এবার চীনের এক বাবা এমন এক নিদর্শন দেখালেন যা কেউ কল্পনাও করেনি। অসুস্থ সন্তানের চিকিৎসা করার জন্য যন্ত্রণাদায়ক চাবুক নিজের পিঠে মারার অনুমতি দিয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে। সে বাবার নাম ফান ফুজুইং। তার অসুস্থ ছেলের নাম ফান উহাং।

জন্মের পর থেকে ‘অপটিক অট্রোফি’ নামক রোগে ভুগছিল শিশুটি। লোকাল ডাক্তারের পেছনেও অনেক টাকা খরচ করেছেন। তাতে কোন কাজ হয়নি। সম্প্রতি বেইজিংয়ের এক ডাক্তার জানিয়েছেন এখন চিকিৎসা না করলে শিশুটি অন্ধ হয়ে যাবে।

বেইজিংয়ের সেই ডাক্তার তার ছেলেকে সুস্থ করতে পারবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু তাতে খরচ হবে প্রায় এক লাখ চীনা ইউয়ান। এত টাকা সংগ্রহ করা তার পক্ষে করার সম্ভব নয়। কারণ বাবা খুবই গরীব। ছেলের চিকিৎসার জন্য শেষ পর্যন্ত ভিক্ষা শুরু করেছেন বাবা ফান ফুজুইং। আজকাল ভিক্ষাও সহজ নয়। কারণ মানুষ এখন ভিক্ষুকে বিশ্বাস করে না। তারা মনে করে, ভিক্ষুকরা মিথ্যা কথা বলে।

তাই তিনি মানুষকে বোঝানোর জন্য নিজের শরীরে চাবুক মেরে তার বিনিময়ে সাহায্য করার আবেদন করেছেন যেন মানুষ বিশ্বাস করে সত্যি তার ছেলে অসুস্থ। কারণ অসুস্থ না হলে বা তিনি তার ছেলেকে না ভালোবাসলে তার জন্য পিঠে চাবুক নিতে পারতেন না।

সংবাদটি চীনের জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম হানকিউ ও পিপলস ডেইলি ফলাও করে প্রকাশ করেছে। প্রকাশের পরই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ফান ফুজুইং নামের এই ব্যক্তি রাস্তার পাশে শুধু আন্ডারওয়ার পরে হাতে একটি লাঠি নিয়ে নতজানু অবস্থায় বসে নিজের শরীরে তা মারার জন্য অনুরোধ করছেন। পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানুষগুলোকে বার বার তিনি অনুরোধ করছেন, তার শরীরে আঘাত করে সন্তানের চোখ ভাল করার ব্যবস্থা করুন। এক এক চাবুকের মূল্য মাত্র ১০ চীনা ইউয়ান। তার শরীরের মূল্য থেকে সন্তানের চোখের মূল্য অনেক বেশি।

ফান ফুজুইং বলেন, ‘আপনাদের কি মনে হয় আমি স্বাদ করে আপনাদের কাছে মাথা নত করেছি। আমিও আমার স্ত্রীকে নিয়ে সুন্দর ভাবে জীবনযাপন করতে পারি। কিন্তু আমরা আমাদের সন্তানের চিকিৎসা করতে ব্যর্থ। কারণ তাকে অনেক টাকা খরচ হবে। আমি একজন অযোগ্য বাবা যে তার সন্তানের চিকিৎসার খরচ যোগাতে পারে না।’

চিকিৎসা না হলে তার সন্তান সারাজীবন অন্ধ হয়ে থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আমার সন্তানকে সারাজীবন অন্ধ হয়ে থাকতে দিতে পারি না। আমি চাই সে যেন বড় হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। নিজের রোজগার নিজে করতে পারে। এখন সে অন্ধ হলে আর হয়তো সুস্থ হবে না।’

সংবাদটি চীনের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পরই তাকে সাহায্য শুরু করে বিভিন্ন মানুষ। তাই কম সময়ের মধ্যেই ছেলের চিকিৎসার খরচ সংগ্রহ করতে সক্ষম হন তিনি।

তিনি আরও জানান, অনেকে সাহায্য করার জন্য এখন তার সন্তানের চিকিৎসা করতে সক্ষম হচ্ছেন। এ চিকিৎসার মাধ্যমেই তার সন্তানের চোখ ভালো হবে কিনা তা বলা যাচ্ছে না। ডাক্তার জানিয়েছেন, চিকিৎসার মাধ্যমে চোখ ভালো করা সম্ভব।

পিঠে চাবুক মেরে তিনি মানুষকে সাহায্য করার কথা বললেও কোনো মানুষ তাকে চাবুক মারেনি। বরং তারা খুশি হয়েই তাকে সাহায্য করেছেন।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন