বাবা-মাকে খুজে পেতে সবজি বিক্রি!

  26-02-2017 03:08PM

পিএনএস ডেস্ক: জন্মের পর বাবা-মাকে দেখেনি শিশুটি। তারা দেখতে কেমন তাও জানে না সে। জানে না তারা বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন। তবুও বাবা-মাকে খুঁজতে রাস্তায় সবজি বিক্রি করে ইয়াং শিউশিয়াং। তার বয়স ৮-১০ বছর।

স্কুল শেষে বন্ধুদের বাবা-মায়েরা তাদের বাড়ি নিয়ে যেতে আসেন। কিন্তু শিউশিয়াংয়ের বাবা-মা আসে না। কোনোদিন বাবা-মাকে দেখতে পাবে কিনা তাও জানে না সে। তাই বাবা মাকে খুঁজতে শিশুটি রাস্তায় সবজি বিক্রি করছে। পাশে রেখেছে একটি সাইনাবোর্ড। যেন সেটি পড়ে বাবা-মা তাকে চিনতে পারে।

হুয়াং মেনিজংছোটবেলা থেকে শিশুটিকে লালনপালন করে আসছেন হুয়াং মেনিজং নামের এ বৃদ্ধা। শিশুটির মা বৃদ্ধার বাড়ির সামনে তাকে ফিলে গিয়েছিলেন

ঘটনাটি ঘটেছে চীনের লিয়াংহু নামন শহরে।ইয়াং শিউশিয়াং এক বৃদ্ধার সঙ্গে বসবাস করে। ছোটবেলা থেকেই হুয়াং মেনিজং নামের বৃদ্ধার সঙ্গে আছে সে। মেনিজংয়ের নিজের কোনো ছেলে-মেয়ে নেই। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। যেকোনো সময় মারা যেতে পারেন। তিনি মারা গেলে শিশুটিকে দেখার কেউ থাকবে না। তাই তার বেঁচে থাকাবস্থায় নিজের বাবা মাকে খুঁজে তাদের কাছে চলে যেতে চায় শিশু শিউশিয়াং।

ইয়াং শিউশিয়াং ছাড়াও মেনিজং অন্য একটি ছেলেকে লালনপালন করেছেন। বড় ছেলেটি তার নিজের ছেলের মতেই বসবাস করছেন।


বৃদ্ধা একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। কোনো মতে তার সংসার চলে। বাড়ির পাশে ছোট্ট এক খণ্ড জমি আছে। সেই জমিতে কিছু শাকসবজি চাষ করেন। সেই শাকসবজি তিনি ও ইয়াং শিউশিয়াং মিলে বাজারে বিক্রি করেন। তাতেই কোনোমতে দিন চলে তাদের।

কিভাবে ইয়াং শিউশিয়াংকে পেলেন তার জবাবে বৃদ্ধা হুয়াং মেনিজং স্থানীয় এক সংবাদ মাধ্যমকে জানান, এক রাতে তিনি ঘুমাচ্ছিলেন। এমন সময় বাড়ির পাশে একটি ছোট শিশু কাঁদছিল। বাইরে এসে দেখেন সদ্য জন্ম নেওয়া একটি মেয়ে শিশু রাস্তায় পড়ে আছে আর কাঁদছে। তিনি শিশুটিকে নিয়ে বাড়ি আসেন। সেদিন থেকে নিজের নাতনির মত তাকে লালনপালন করে আসছেন।

শিশুটির বয়স এখন ৮-১০ বছর। লেখাপড়া করে ক্লাস ফাইভে। পড়াশোনার পাশাপাশি স্কুলের পাশে সবজি বিক্রি করে। তার আশা হয়তো একদিন তার বাবা-মা সবজি কিনতে এসে তাকে চিনতে পেরে বাড়ি নিয়ে যাবেন। তাই সে ৩ বছর বয়স থেকে এভাবে সবজি বিক্রি করে আসছে। কিন্তু এখনো তার বাবা-মায়ের কোনো খোঁজ পায়নি শিউশিয়াং।

বাবা-মা যেন চিনতে পারে সেজন্য পাশে একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে রেখেছে সে। সেই সাইনবোর্ডে তার আবেগময় কিছু কথা লেখা আছে যা পড়ে অনেক পথচারী অশ্রুও ফেলে।

হুয়াং মেনিজংবৃদ্ধা হুয়াং মেনিজংয়ে নিজের কোনো সন্তান নেই। ২৭ বছর বয়সী এক ছেলেকে তিনি দত্তক নিয়ে লালনপালন করেছেন। ছবিতে সেই দত্তক নেওয়া ছেলে, বৃদ্ধা ও শিশুটি রাতের খাবার খাচ্ছে

সাইনবোর্ডে লেখা আছে, ‘প্রিয় আব্বু আম্মু। তোমরা কেমন আছো। ২০০৮ সালে যখন আমি খুব অসুস্থ ছিলাম তখম এক বৃদ্ধার বাড়ির সামনে গোপনে আমাকে রেখে এসেছিলে। আমি এখন সুস্থ হয়েছি। এখন আমি তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছি যেন তোমরা আমাকে নিতে আসো। যদি তোমরা আমাকে না নাও তাহলে দাদিমা আমাকে সরকারের কাছে তুলে দেবে। আমার লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে যাবে।’

আবেগ জড়িত ভাষায় সে আরো লিখেছে, ‘এখন আমার বন্ধুরা সবাই তাদের বাড়িতে আছে। আর আমি, তোমাদেরকে খোঁজার জন্য রাস্তায় সবজি বিক্রি করছি। তোমাদের কথা খুব মনে পড়ছে, আব্বু আম্মু। আমি আমার বন্ধুদের মত হতে চাই। ওদের বাবা মা প্রতিদিন স্কুলে আসে কিন্তু আমাকে আনতে কেউ আসে না।’

‘লেট লাভ কাম হোম’ নামের একটি চীনের দাতব্য প্রতিষ্ঠান ঘরহারা মানুষকে ঘরে ফিরিয়ে আনতে কাজ করে। শিশুটি তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে।

প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা জাংগুয়াং বলেন, ‘ইয়াং শিউশিয়াং খুবই চালাক স্মার্ট, বাধ্যগত ও সাহসী। আমরাও তার বাবা মাকে খুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করছি। আশা করি আমরা তার বাবা মাকে খুঁজে পাবো।’


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন