সোনা, রুপা ও হীরায় মোড়ানো কঙ্কাল!

  28-02-2017 03:32PM

পিএনএস ডেস্ক: সোনা, রুপা, ও হীরাসহ নানা মূল্যবান মণিমুক্ত দিয়ে মোড়ানো আছে খ্রিষ্টধর্মের আদিগুরুদের। ছবিটি সেন্ট হেইচিনথ অব সিজারিয়ার কঙ্কালের।

ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন ১২ বছর বয়সী খ্রিষ্টধর্ম প্রচারক সেন্ট হেইচিনথ অব সিজারিয়া। কারাগারে অনাহারে রেখে তাকে হত্যা করা হয়েছিল। তবে তার অনুসারিরা তাকে ভুলে যায়নি। তার কঙ্কালটি অনুসারিরা সোনা, রুপা ও হীরা দিয়ে মুড়িয়ে রেখেছিলেন। জার্মানির বাভারিয়া গির্জায় এখনো সেভাবে রাখা আছে কঙ্কালটি।

গির্জাটি জার্মানির মিউনিখের খুব কাছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ঐতিহাসিক গির্জাটি দেখতে আসে। আগে এ গির্জাটির তেমন কদর ছিল না। বিভিন্ন রোমান ধর্মকেন্দ্রীক রাজারা সবসময় সেটিকে অবহেলা করে গেছেন। কিন্তু খ্রিষ্টধর্মের ইতিহাসে ধীরে ধীরে গির্জাটির মর্যাদা বেড়ে চলেছে।

গির্জাটিতে মোট দুটি কঙ্কাল আছে। একটি সেন্ট হেইচিনথ অব সিজারিয়ার আরেকটি সেন্ট ক্লেমেন্টসের। একদিন এ দুই ধর্মপ্রচারককে রোমানদের হাতে নির্মমভাবে নির্যাতিত হতে হয়েছিল। তাই আজও তার অনুসারীরা তাদের কঙ্কাল পরম আদরে সোনায় মুড়িয়ে রেখেছেন।

সেন্ট হেইচিনথ অব সিজারিয়া সম্পর্কে জানা যায়, তিনি ছিলেন খ্রিষ্টধর্ম খুব প্রথম দিকের একজন খ্রিষ্টাধর্ম গ্রহণকারী। তিনি ধর্মগ্রহণ করেছিলেন ৯৬ সালে। তখন ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্সসহ ইউরোপের প্রায় দেশে প্রাচীন রোমান ধর্মের অনুসারী ছিল বেশি। তাই সেন্ট হেইচিনথ অব সিজারিয়া খ্রিষ্টাধর্ম গ্রহণ করলে সেখানকার রোমানরা তা মেনে নেয়নি।

খবর পেয়ে রোমানরা তাকে কারাদণ্ড দিয়ে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেন। তাকে প্রস্তাব দেওয়া দেন যদি খ্রিষ্টাধর্ম ত্যাগ করে তাহলে তাকে মুক্ত করা হবে। কিন্তু তিনি তার মতে অনড় ছিলেন। রোমান ধর্মগুরুরা ভেবেছিলেন তাকে খাবার না দেওয়া হলে এক সময় ঠিকই তাদের ধর্মে আসবে।

মিউনিখ৯৫ সালে সেন্ট ক্লেমেন্টসকে হত্যা করা হয়েছিল। তখন রোমসহ ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে প্রাচীন রোমান ধর্মগুলো ব্যাপক প্রভাব ছিল।

সেজন্য তার সামনে খ্রিষ্টধর্ম নিষিদ্ধ এমন কিছু প্র্রাণির মাংস রাখেন তার সামনে। রোমনরা চেয়েছিলেন তিনি যেন ক্ষুধার জ্বালায় সেই মাংস খেয়ে খ্রিষ্টধর্মর নিয়ম লঙ্ঘন করেন এবং খ্রিষ্টধর্ম ত্যাগ করেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি না খেয়ে মরেছেন, কিন্তু সেই মাংস ছুঁয়েও দেখেননি। ১০৮ সালে তিনি মারা যান। মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর।

সেন্ট ক্লেমেন্টস সম্পর্কে জানা যায়, খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করার কারণে ৯৮ সালে তাকে জবাই করে হত্যা করা হয়। খ্রিষ্টধর্মের এ কাণ্ডারীকে ১২০০ সালের মাঝামাঝি সময় ডক অব বাভারিয়া বা দ্বিতীয় লুইস এই গির্জায় সমাধিস্থ করেন। তারপর ওই গির্জার উপর দিয়ে নানা ঝটঝামেলা গেছে।


১৬০০ সালের দিকে সু্ইডিসরা গির্জাটি নিষিদ্ধ করেন। তারপর অনেকদিন তেমন তার কদর ছিল না। আবার ১৮০০ সালের দিকে এ গির্জা ও কঙ্কাল আলোচনায় আসে। এবং তার ভক্তরা কঙ্কালটি সোনা, রুপা ও হীরাসহ নানা মূল্যবান মণিমুক্তা দিয়ে মোড়ানোর ব্যবস্থা করেন। এখন হাজার হাজার মানুষ গির্জায় গিয়ে উপাসনা করছেন এবং এই কঙ্কাল দেখে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছেন।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন