সড়ক দুর্ঘটনার মত দুর্যোগসম সমস্যায় রাজনৈতিকদের অনীহা ভাবিয়ে তুলেছে : ইলিয়াস কাঞ্চন

  22-10-2016 04:51PM



পিএনএস : শনিবার সকাল ১০টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর সামনে থেকে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)র চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের র্যালী শুরু হয়। রেলীটি কাকরাইল, বিজয় নগর, পল্টন হয়ে মুক্তাঙ্গনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

সমাবেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সংগঠনের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার মত দেশের একটি দুর্যোগসম এই সমস্যা নিয়ে সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অনীহা আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। আমরা প্রায়শই দেখে থাকি দেশের কোন না কোন সমস্যায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ জাতীয় ঐক্যের কথা বেশ জোর দিয়ে বলে থাকেন। উদাহরণ হিসেবে গুলশানে জঙ্গি হামলার ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। তখন আমরা দেখেছি সরকারি, বিরোধীদল- দলমত নির্বিশেষে ঐক্যের কথা বলে সরব হয়ে উঠেছিলেন। তাছাড়া জাতীয় ঐক্যের প্রশ্নে নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচন পরিচালনায় নিরপেক্ষ সরকার গঠনে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সকলের ঐক্যমতের উপর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।

তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়টি তারা কিভাবে দেখে থাকেন। প্রতিদিন সড়কে লাশের মিছিলে একাধিক তাজাপ্রাণ যুক্ত হচ্ছে। বিষয়টি কি তাদের ভাবায় না। তাদের স্পর্শ করে না। তাদের কাছে কি এসব প্রাণের কোন মূল্য নেই। আমি মনে করি সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়টি যদি তাদের মজ্জাগত হয়, তাদের ক্ষমতায় আরোহনে (নির্বাচনী ইশতেহার) গুরুত্ব পায়, যদি আন্তরিক হন তাহলে সড়কের অপঘাতে মৃত্যুর হার কমে আসতে বাধ্য। তাই রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছে অনুরোধ করবো সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়টিকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে এই সমস্যা সমাধানে আন্তরিক হয়ে উঠবেন।

সড়কের বর্তমান অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় জনবসতি ও হাট-বাজারের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। সেইসাথে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাও অতি জরুরি। সড়ক ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি বিদ্যমান। যার কারণে সড়ক-মহাসড়কের পাশে অবৈধ স্থাপনার পরিমাণ বেড়েই চলেছে। কখনো কখনো এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও মনিটরিংয়ের অভাবে আবার সেখানে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠে। এক্ষেত্রে ভুমি, স্থানীয় সরকার, সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে। যাতে করে সড়ক তার নৈতিক চরিত্র না হারায়। রাস্তার পাশের ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করা যায়। যেমন সড়কের পাশের গাছও অনেক সময় চালকের গাড়ি চালনায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। চালক যখন একটি নির্দিষ্ট গতিতে গাড়ি চালান তখন তার পর্যবেক্ষণ নির্দিষ্ট একটা সীমারেখায় থাকে। ঐ সীমারেখায় যদি কোন বস্তুর অবস্থান এসে যায় তখন দৃষ্টি বাধাগ্রস্ত হয়। ফলশ্রুতিতে চালক গাড়ি চালনায় বাধাপ্রাপ্ত হন। যা ঢেকে আনে অঘটন। এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ সড়কের পাশে যদি এ ধরণের গাছপালার অবস্থান থাকে সেগুলোর অবসান এবং সবুজ বনায়নে সড়কের চরিত্র ঠিক রেখে গাছের চারা রোপণের ব্যবস্থা নিতে হবে।

আমি জোর দাবি জানিয়ে বলবো সকল উদ্যোগই তখনই শতভাগ কার্যকর হবে যাতে থাকবে সমন্বিত উদ্যোগ ও শক্তিশালী মনিটরিং। এজন্যে আমি দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন শক্তিশালী একটি সেল গঠনের। এই সেল গঠিত হবে স্থানীয় সরকার, সড়ক ও সেতু, স্বরাষ্ট্র, আইন, স্বাস্থ্য, ভুমি, শিক্ষা, অর্থ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও অধিদপ্তরের সমন্বয়ে। যার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে প্রধানমন্ত্রীর হাতে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সড়কের বিদ্যমান সকল সমস্যার নিরসন করতে হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই সেল গঠন জরুরি।

জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০১৬ উপলক্ষে আমি দেশে, বিদেশে, নিসচা’র সকল শাখা কমিটির নেতৃবৃন্দ, সকল বন্ধু-শুভানুধ্যায়ীদের, সমমনা সকল সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন, এলাকার সর্বস্তরের জনসাধারণ, সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাক্তিবর্গ ও তাদের পরিবারের সদস্যবৃন্দসহ প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের সকল কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে সড়ক দুর্ঘটনারোধে জনসচেতনতা তৈরীতে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

পরিশেষে বলবো অতীতের মত জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের সকল আয়োজনে আপনাদের অংশগ্রহণ আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। আগামীতেও আপনাদের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে এবারের জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের সকল কর্মসূচি বাস্তবায়নে ইফাদ মাল্টি প্রোডাক্টস লিঃ ও ওয়ালটন গ্রুপের সার্বিক পৃষ্টপোষকতায় আমরা কৃতজ্ঞ।

সেই সাথে চালক, মালিক, যাত্রী তথা সর্বস্তরের দেশবাসির প্রতি অনুরোধ জানাবো আসুন আমরা সবাই সচেতন হই। ‘দোষারোপ নয়, দুর্ঘটনার কারণ জানতে হবে, সবাইকে নিয়ম মানতে হবে’- এই স্লোগানে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই এবং নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নে সমন্বিত উদ্যোগে সামিল হই। আমরা বিশ্বাস করি সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়ন সম্ভব। ভালো থাকুন। নিরাপদে পথ চলুন।

আরো বক্তব্য রাখেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী রেলীতে অংশ নেন, হেলেনা ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন, নারী মৈত্রী, নাহগরিক ঐক্য, সাইক্লিংলেন ইম্পিনেট এসোসিয়েশন, নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা), শের-ই- বাংলা নগর মাখা, নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা), বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ শাথা, নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা), রামপুরা থানা শাখা ও বিশিষ্ট্য নাগরিকবৃন্দ।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন