সড়কে মৃত্যুর মিছিল রোধে মৃত্যুদণ্ড আইন সময়ের দাবি

  22-10-2016 06:04PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : সড়ক দুর্ঘটনা থামছে না। সড়কে মানুষের জীবনহানি ঘটছেই। প্রতিদিনই সড়কে যানবাহন মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। একের পর এক দুর্ঘটনা প্রমাণই হচ্ছে সড়ক-মহাসড়ক গণমানুষের প্রাণ হরণের হাতিয়ারে পরিণত।

সর্বত্রই লক্ষ্য করা যায়, সড়ক-মহাসড়ক এমনকি রাজধানী ঢাকায়ও যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করা হয়। উঠানো হয় সড়কের মাঝখানে, নামানোও হয় মাঝে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। আর ঘটেও তাই। মাঝখানে গাড়ি দাঁড় করা এবং যাত্রী ওঠানামা সমীচীন নয়।

আইন মেনে যানবাহন সড়কে চলাচল করলে সড়ক দুর্ঘটনা এতটা জীবনহানি ও আতঙ্কের কারণ হতো না। সড়কে মৃত্যুর মিছিল চলছে বলে মনে করা হচ্ছে। গত ঈদের আগে-পরে কদিনে আড়াই শতাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।ফলে এসব পরিবারে আনন্দ মাটি হয়।

সড়কের দুরবস্থা, ফিটনেসবিহীন লক্করঝক্কর মার্কা গাড়ি, অদ্যক্ষ চালক, অসম প্রতিযোগিতা, ট্রাফিক আইন না মানা, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথা বলা, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো, একটানা দীর্ঘপথ বিরতিহীন ড্রাইভ দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।

সেপ্টেম্বরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ২৯৮ জনের। আর আহত হন ৮১০ জন। সারা দেশে সড়ক-মহাসড়কে মানবসৃষ্ট ১৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় এই পরিমাণ প্রাণহানি ঘটে। এই পরিমাণ প্রাণহানি সড়কে প্রতি মাসেই ঘটে।এটার রেশ টেনে ধরা জরুরি। সড়কে মৃত্যুর মিছিল বন্ধে সামাজিক আন্দোলন চালু হয়েছে।

২৩ বছর ধরে এ নিয়ে আন্দোলন করছেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ ব্যানারে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রীকে হারিয়ে তিনি এই আন্দোলনে নামেন। কাছের মানুষ হারানোর বেদনা থেকে যে আন্দোলন তিনি শুরু করেন, সেটি আজ প্রায় দুই যুগ টানা চলছে।

সড়ককে নিরাপদ করতে, চালক-যাত্রীসহ সবাইকে আইন মানতে ও জানতে ইলিয়াস কাঞ্চন সদা সোচ্চার। তার এই আন্দোলন যৌক্তিক পরিণতি লাভ করবে, সড়কে মৃত্যুর চলমান মিছিল বন্ধ হবে; এই প্রত্যাশা সচেতন জনগোষ্ঠীর। কিন্তু দায়িত্বশীলদের টনক না নড়ায় সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামছে না।

কদিন আগে একজন মন্ত্রী একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উল্টোপথে গাড়ি চালানোর পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন! আরেক মন্ত্রী সড়কে গরু-ছাগল চিনলেই চালককে লাইসেণ্স দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন!অভিজ্ঞ মহলের মতে, দায়িত্বশীল মহলের এসব বক্তব্য-মন্তব্য সড়ক দুর্ঘটনার আকরে পরিণত।

চালকের ভুলে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটলে আইনে সাজার ব্যবস্থা অনেকটা সহনীয়। ফলে দুর্ঘটনায় কারো প্রাণ গেলেও অনেক চালকের ডেমকেয়ার ভাব। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, মৃত্যুর বদলে মৃত্যুর মতো কঠিন আইন থাকলে চালকরা এতটা বেপরোয়া হতো না। সড়কেও এত লাশ পড়ত না।

একটি দুর্ঘটনায় পরিবারের উপার্জনক্ষম কেউ প্রাণ হারালে সে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়ে। পথে বসার উপক্রম হয়। এক মাসে যদি ২৯৮ জনের প্রাণহানি ঘটে তাহলে বছরে কতটি পরিবার পথে বসে, তা তো সবার জানা। সড়কে মৃত্যুর মিছিল রোধে মৃত্যুদণ্ডের মতো কঠোর আইন প্রণয়ন জরুরি।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন
ই-মেইল : [email protected]

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন