যুদ্ধাহত, দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ছে ১৫০ ভাগ

  23-10-2016 06:55AM

পিএনএস: খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা ১৫০% বাড়ছে। একই হারে বাড়ছে যুদ্ধাহত ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সম্মানী ভাতাও। এছাড়া ‘খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা বিতরণ নীতিমালা, ২০১৬’ চূড়ান্ত করা হয়েছে। সম্মানী ভাতা বৃদ্ধি এবং খসড়া নীতিমালাটি অনুমোদনের জন্য আগামীকাল মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য এজেন্ডাভুক্ত করা হয়েছে। মন্ত্রিসভার সম্মতিসাপেক্ষে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকেই বর্ধিত ভাতা কার্যকর হবে।

এছাড়া জাতীয় লবণনীতিসহ আরও ছয়টি বিষয় মন্ত্রিসভায় আলোচনা ও সিদ্ধান্তের জন্য উঠবে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের ২৪শে এপ্রিল ‘খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানীভাতা বিতরণ নীতিমালা, ২০১৬’ এবং খেতাবপ্রাপ্ত, যুদ্ধাহত ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়। ২রা মে বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে উপস্থাপন করা হলে এতে মন্ত্রিসভার কয়েক জন সদস্য অংশ নেন। আলোচনাকালে তারা বিষয়টি পর্যালোচনা করে পুনঃউপস্থাপনের মতামত দেন।

এরই ধারাবাহিতায় গত ৫ই সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শিল্পমন্ত্রী, বাণিজ্য মন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী এবং নৌপরিবহন মন্ত্রীর সমন্বয়ে একটি আন্তঃ মন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় খেতাবপ্রাপ্ত, যুদ্ধাহত, মৃত যুদ্ধাহত পরিবার, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এবং বীরশ্রেষ্ঠদের মাসিক সম্মানী ভাতা পুনঃনির্ধারণের বিষয়ে খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। খসড়ায় বলা হয়, প্রস্তাবিত ভাতা ১লা জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য খেতাবপ্রাপ্ত, যুদ্ধাহত ও শহীদ পরিবার মিলিয়ে মোট আট হাজার ৫১৪ জনকে এ ভাতা দেয়া হয়। খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দেয়া শুরু হয় ২০১৩ সাল থেকে। ওই বছরই মন্ত্রিসভায় ‘খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা প্রদান নীতিমালা, ২০১৩’ অনুমোদন করা হয়। এবার নীতিমালা বদল করে ভাতার সঙ্গে ‘সম্মানী’ ও ‘বীর’ শব্দ যোগ করে ‘খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা বিতরণ নীতিমালা, ২০১৬’-এর খসড়া করা হয়েছে। এদিকে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের ভাতা শুরু হয় ১৯৭২ সাল থেকে।

২০০০ সাল থেকে শুরু করা হয় সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা বিতরণ কার্যক্রম। কিন্তু খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী দেয়ার বিষয়টি তখনো বিবেচনা করা হয়নি। মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদন করা হলে গত ১লা জানুয়ারি থেকে সম্মানী ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি কার্যকর করা হবে। মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্তের আলোকে খেতাবপ্রাপ্ত, যুদ্ধাহত, মৃত যুদ্ধাহত পরিবার, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এবং বীরশ্রেষ্ঠদের মাসিক সম্মানী ভাতা পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বর্তমান ভাতা ১২ হাজার টাকা।

আন্তঃ মন্ত্রণালয় ও অর্থবিভাগের সম্মতিতে সেটা ১৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বর্তমান সম্মানী ১০ হাজার টাকা থেকে ১৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ২৫ হাজার, বীরবিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী আট হাজার টাকা থেকে ১৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ২০ হাজার, বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ছয় হাজার টাকা থেকে ১৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এদিকে ৯৬ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত যুদ্ধাহত এ শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধাদের বর্তমান ভাতা ৩০ হাজার টাকা। আন্তঃ মন্ত্রণালয় বৈঠকে সেটা ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ৪৫ হাজার, ৬১ থেকে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত যুদ্ধাহত বি শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধাদের ২০ হাজার টাকা থেকে ৭৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৩৫ হাজার টাকা, ২০ থেকে ৬০ শতাংশ যুদ্ধাহত সি শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১৬ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা, ১ থেকে ১৯ শতাংশ পর্যন্ত যুদ্ধাহত ডি শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধাদের ৯ হাজার ৭০০ টাকার ভাতা ১৫৮ শতাংশ বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের মাসিক ভাতা ১৫ হাজার টাকা থেকে ১০০ শতাংশ বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া মৃত যুদ্ধাহত পরিবারের সদস্যদের ভাতা ১৫ হাজার টাকা থেকে ৬৭ শতাংশ বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা, সাত বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ পরিবারের ভাতা ২৮ হাজার টাকা থেকে ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৩৫ হাজার টাকা এবং তারামন বিবির ভাতা ১৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করার সুপারিশ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর গেজেটের মাধ্যমে ৬৭৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে চারটি বিশেষ খেতাব দেয়া হয়। এর মধ্যে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্ত ৭ জন, বীরউত্তম ৬৮, বীরবিক্রম ১৭৫ এবং বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত ৪২৬ জন। ২০১৩ সালের ২২শে জুলাই পর্যন্ত বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবার মাসিক ২০০ টাকা, বীরউত্তম ১৫০ টাকা, বীরবিক্রম ১২৫ টাকা এবং বীরপ্রতীক ১০০ টাকা হারে সম্মানীভাতা পেয়েছেন। ২০১১ সালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বিভিন্ন বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানো হয়। এ সুবিধার আওতায় আসেন সেনাবাহিনীর ২৫১ জন, নৌবাহিনীর ২১ জন, বিমান বাহিনীর ২৩ জন, বিজিবির ১১৮ জন এবং আনসারের একজন সদস্য। কিন্তু বেসামরিক খেতাবপ্রাপ্ত ২১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা আগের হারেই সম্মানী ভাতা পাচ্ছিলেন। এটি সমন্বয় করতে ২০১৩ সালের ২২শে জুলাই খেতাবপ্রাপ্ত বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা বাড়ানো হয়। ওই সময় বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবার মাসিক সম্মানী ভাতা হিসেবে ১২ হাজার, বীরউত্তম ১০ হাজার, বীরবিক্রম ৮ হাজার ও বীরপ্রতীকদের ৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। এখন পর্যন্ত খেতাবপ্রাপ্তরা এ সম্মানী ভাতাই পাচ্ছেন। এসব ভাতাই বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।





পিএনএস/বাকিবিল্লাহ্

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন