গ্যাস খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আশু করণীয়…

  24-10-2016 04:25PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : ‘গ্যাস লোপাটে কুমিল্লার বিএনপি-আ.লীগ একাট্টা’ শিরোনামে ২ অক্টোবর পিএনএসে একটি প্রতিবেদন লিখেছিলাম। সম্ভবত বিষয়টি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে এসেছে। ফলে ১৮ অক্টোবর কুম্লিায় একটি অভিযান চালিয়ে কয়েকটি সিএনজি ফিলিং স্টেশন সিলগালা করা হয়।

জানা গেছে, গ্যাস চুরি প্রতিরোধে কুমিল্লার বাখরাবাদ গ্যাস স্টেশনগুলোয় সাঁড়াশি অভিযানে ১০টি সিএনজি ফিলিং স্টেশন সিলগালা করে দেওয়া হয়। ১৮ অক্টোবর রাত ১০টায় বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেম ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের কুমিল্লা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি, চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় ১৬টি সিএনজি ফিলিং স্টেশনকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। যার মধ্যে ১০টি সিলগালা করে দেয়া হয়। বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির উপব্যবস্থাপক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

এই অভিযানে দুষ্টচক্রের টনক নড়ে বৈকি। ফলে ১৬টির সব কয়টিকে সিলগালা করা যায়নি। উপরের চাপে ছয়টি সিলগালার বাইরে থেকে যায়। সিলগালা হওয়া ১০টি যারপরনাই লম্পঝম্প করছে সেগুলোর কার্যক্রম পরিচালনার। তারা যত রকম শর্ত দরকার, সবকিছু করে হলেও সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো কার্যকর করতে মরিয়া।

স্থানীয় কজন সাংবাদিকের মতে, হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার থেকে শুরু করে কুমিল্লার দৌদ্দগ্রাম ও দাউদকান্দি পর্যন্ত যত ফিলিং স্টেশন আছে, এর মধ্যে হাতেগোণা দুয়েকটি ছাড়া আর সবই কমবেশি লোপাটের সঙ্গে যুক্ত। আর এর বেশির ভাগই গ্যাস লুটেরা ও কালোবাজারির হোঁতা। আর এর সঙ্গে গ্যাসের একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীও যুক্ত।

গ্যাস প্রকৃতির সৃষ্টি ও অবদান। আর এর সদ্ব্যবহার না করায় আজকে হাহাকার শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে গ্যাস ফুরিয়ে যাবে বা যাচ্ছে। অথচ কবছর আগেও বলা হতো দেশ গ্যাসের উপর ভাসছে। এক সময় গ্যাস রফতানির কথা ওঠে। পরিকল্পনামাফিক সুষ্ঠু বণ্টন ব্যবস্থার অভাবে পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও গ্যাস আজ হাওয়া হয়ে গেছে যেন। ফলে চেষ্টা চলছে আমদানির!

গ্যাস লোপাট করে প্রতিষ্ঠানটির মিটার রিডার, কেরানি আজ নাকি হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কথা না বলাই শ্রেয়। ওয়ান-এলিভেনের সময় টের পাওয়া গেছে, তিতাস গ্যাসে লুটপাটটের মাত্রা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে। স্বেচ্ছায় দেয়া হিসাব বিবরণীতে সেটা জেনেছে দেশবাসী।

গ্যাস নিয়ে নৈরাজ্য যে চলছে, সেটা কমবেশি সবার জানা। নৈরাজ্যের হোঁতারা সব সময় ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকছে। কুমিল্লার যে ১৬টি সিএনজি ফিলিং স্টেশন কালো তালিকাভুক্ত ও ১০টি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে, তারা নাকি অনেক আগেই আখেরি কামাই সেরে ফেলেছে। এর মাধ্যমে তাদের চৌদ্দ পুরুষ বসে বসে খাওয়ার ব্যবস্থাও নাকি হয়ে গেছে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ মহলের মতে, সিলগালা আর কালো তালিকাভুক্ত করে গ্যাস চুরি রোধ করা যাবে না। এখানে সুফল পেতে হলে গ্যাসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও গ্যাস চুরির সঙ্গে যুক্ত সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোর মালিকদের চৌদ্দশিকে ঢুকিয়ে চুরির অর্থ আদায় এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এটা করতে পারলেই এই খাতে দুর্নীতি কমবে আর শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন
ই-মেইল : [email protected]

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন