প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধের দাবি

  24-10-2016 08:28PM

পিএনএস ডেস্ক : আগ্রাসী প্রচারণার প্রভাবে শিশুদের চিনি নির্ভর ক্ষতিকর পানীয় বা চিপস'র মত অস্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে ধাবিত হচ্ছে- যা আগামী প্রজন্মকে অসুস্থ্য করে তুলছে। ফাস্ট ফুড-জাঙ্ক ফুড ও চিনিনির্ভর ক্ষতিকর পানীয় (সফট্ ড্রিংক্স, এনার্জি ড্রিংক্স ও মোড়কজাত রাসায়নিক জুস) সেবনে ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, উচ্চরক্তচাপের মত ভয়াবহ মরণব্যাধির হার বাড়ছে। শিশুদের মধ্যেও ক্যান্সার, হৃদরোগের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। শিশুসহ তরুণ প্রজন্মকে ক্ষতিকর খাবার থেকে সরিয়ে আনতে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা জরুরি।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় দেশের খ্যাতিমান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞবৃন্দ এ আহবান জানান।

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্টের ‘অস্বাস্থ্যকর খাবারের বিজ্ঞাপন এবং জনস্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব’ বিষয়ক গবেষণা গন্থের প্রকাশনা উপলক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ।

বারডেম হাসপাতালের ল্যাবরেটরি সার্ভিসের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গবেষণা ও প্রকাশনা বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. এম মোস্তফা জামান, ইউনিভাসির্টি অব হেলথ সাইন্সেস'র হেলথ প্রমোশন এবং হেলথ এডুকেশন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. খুরশিদা খানম, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. আবু সাইদ, অপরাজয় বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু, ভাইটাল স্ট্রাটেজিস-এর টেকনিক্যাল এডভাইজার শফিকুল ইসলাম, হেলথব্রিজের আঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরইমসন, দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম প্রমুখ।

তামাক বিরোধী জোটের মুখপত্র সমস্বরের নির্বাহী সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সুজনের সঞ্চালনায় আলোচনায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা শারমিন আক্তার রিনি।

অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী বলেন, ক্ষতিকর অস্বাস্থ্যকর খাবারের আগ্রাসী প্রচারণার ফলে বাঙালির নিজস্ব আহার সংস্কৃতি বিলুপ্ত হতে চলেছে। অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানীয় কিভাবে মানুষের ক্ষতি করে- এসব সবার জানা দরকার। শিশুদের স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও খেলাধুলায় উৎসাহী করে তুলতে অভিভাবকদের দায়িত্ব নিতে হবে।


অধ্যাপক ডা. এম মোস্তফা জামান বলেন, কোমল পানীয় আসলে কোমল নয়। পাশ্চাত্যে মদ জাতীয় পানীয়কে হার্ড ড্রিংক্স (কঠিন পানীয়) বলা হয়। মদের চাইতে কম উত্তেজক বিধায় এসব পানীয়কে সফট ড্রিংক্স উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এখন জানা যাচ্ছে, এসব পানীয় মদ জাতীয় পানীয়ের মতই স্বাস্থ্য হানিকর। তাই ক্ষতিকর এসব পানীয়কে কোমল পানীয় বলা অনুচিত। ক্ষতিকর অস্বাস্থ্যকর খাবার নিয়ন্ত্রণে কনজ্যুমারর্স অ্যাসোসিয়েশনকেও সক্রিয় হতে হবে।

অধ্যাপক ডা. আবু সাইদ বলেন, বিজ্ঞাপন শিশুদের মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে ধারণা জন্মায়, হরলিক্স খেলে লম্বা হবে বা কমপ্লাইন খেলে মেধা বাড়বে। অথচ এসব বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্যের কোনো ভিত্তি নেই। এসব প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ হওয়া দরকার।

শফিকুল ইসলাম বলেন, তামাকের উপর ‘স্বাস্থ্য উন্নয়ন কর’ (সারচার্জ) আরোপ করা হয়েছে- এটা খুবই ইতিবাচক দিক।
অধ্যাপক ডা. খুরশিদা খানম বলেন, অস্বাস্থ্যকর খাবারের যেসব বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়, এগুলো ভুল বার্তা দেয়। শিশুদের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে উৎসাহী করতে অভিভাবকদের সচেতন হওয়া দরকার। স্কুলে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার চেয়ে সন্তানদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবার তৈরি করে দেয়া দরকার।

ওয়াহিদা বানু বলেন, যেসব বিজ্ঞাপনে শিশুদের মিথ্যা শেখানো হয়, সেসব বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর খাবারের উপর স্বাস্থ্যকর আরোপ করতে হবে।

দেবরা ইফরইমসন বলেন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যগুলোকে তামাকজাত দ্রব্যের ন্যায় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এক্ষেত্রে ক্ষতিকর খাদ্য দ্রব্য ও পানীয়র বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা জরুরি।

সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যমান দুটি আইন, নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এবং ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ প্রয়োগের মাধ্যমে অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানীয় নিয়ে প্রচারকৃত মিথ্যা তথ্যসম্বলিত ও বিভ্রান্তকর বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন