সেই ফারজানা আইসিইউতে

  28-10-2016 06:33AM


পিএনএস: পরিবারের ৯ সদস্যকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। পৃথিবীতে বেঁচে ছিলেন একমাত্র আপনজন তার পিতা। শেষ পর্যন্ত তাকেও সড়ক দুর্ঘটনায় হারাতে হয়েছে। সব হারিয়েও নিঃস্ব ফারজানা স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলো। ‘ফারজানার পাশে কেউ নেই’ এই শিরোনামে মানবজমিনে সংবাদ প্রকাশের পর তার পাশে দাঁড়ানোর আগ্রহ দেখিয়েছিলেন অনেকে। এরকম মানুষের ভালোবাসা নিয়েই সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে ফারজানা। স্বপ্ন দেখা সেই মেয়েটির জীবন এখন আশঙ্কাজনক অবস্থায়। সোমবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে তাকে।

মেডিকেল সূত্রে জানা গেছে, এক জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছে ফারজানা আক্তার। তার দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন। ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় তার স্বজনরা। এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিয়া বলেন, ফারজানা সিস্টেমেটিক লুপাস ইরিথেম্যাটোসাস নামের জটিল রোগে আক্রান্ত। দীর্ঘ চিকিৎসায় তার উন্নতি হবে বলে মনে করেন তিনি। ডা. টিটো মিয়া জানান, পেটে ব্যথা নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলো। শুরুতে তাকে ঢামেক’র ১০তলা ভবনের ৮০১ নম্বর ওয়ার্ডের ৪৬ নম্বর বেডে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। সোমবার তার অবস্থার অবনতি হলে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। তার কিডনিতে সমস্যা ও রক্ত শূন্যতা রয়েছে। কয়েক মাস ধরেই সিস্টেমেটিক লুপাস ইরিথেম্যাটোসাস রোগে ভুগছে বলে জানান তিনি। ঢামেক হাসপাতালে ভর্তির আগে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে ফারজানা।

ঢামেক হাসপাতালে গেলে ফারজানার খালু আসলামের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান, মেয়েটি অসুস্থ হওয়ার পর মানুষের সহযোগিতায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছেন। বাংলাদেশ মেডিকেলে ভর্তি ছিলো ১৮ দিন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ভর্তি করা হয় ঢামেক হাসপাতালে। একটি সেলুনে কর্মরত আসলাম বলেন, দিন-রাত হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে তাকে ও তার স্ত্রীকে। বাসায় তিনটি বাচ্চা। জমানো টাকা ব্যয় ও ধার দেনা করেই চলতে হচ্ছে তাকে। ফারজানার জটিল রোগের দীর্ঘমেয়াদি ব্যয়বহুল চিকিৎসা তার পক্ষে করানো অসম্ভব। তাই বিত্তশালীদের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে উর্দু স্পীকিং পিপলস ইউথ রিহ্যাবিলিটেশন মুভমেন্টের সভাপতি মো. সাদাকাত খান (ফাক্কু) বলেন, কালশীর ঘটনায় পরিবারের সবাইকে হারিয়েছে ফারজানা। সব হারানো ফারজানাকে বাঁচাতে আমাদের সকলকেই এগিয়ে আসা প্রয়োজন। তিনি বলেন, কালশী হত্যাকাণ্ডের দায় রাষ্ট্র এড়াতে পারে না। বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া বহু ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমরা আশা করি কালশী হত্যাকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ফারজানার পাশেও তিনি দাঁড়াবেন।

২০১৪ সালের ১৪ই জুন ঘটে রাজধানীর মিরপুরের কালশী ট্র্যাজেডি। সেদিন চোখের সামনেই পরিবারের নয় সদস্যকে পুড়ে মরতে দেখেছে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ফারজানা। সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত আরো একজন। এ ঘটনায় বেঁচে ছিলেন ফারজানা ও তার বাবা মো. ইয়াসিন। তারপর কিছু দিনের মধ্যে তার পিতাও মারা যান। ২০১৪ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর সকালে ফারজানার ওষুধ কেনার জন্য বের হন ইয়াসিন। পল্লবী বাসস্ট্যান্ডে বাস চাপায় রহস্যজনকভাবে নিহত হন তিনি। পরিবারের সবাইকে হারিয়ে রাজধানীর মিরপুর ছেড়ে মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন রোড সংলগ্ন মার্কেট ক্যাম্পে খালার বাসায় আশ্রয় নিয়েছে ফারজানা। এরমধ্যেই জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছে সব হারানো এই মেয়েটি।



পিএনএস/বাকিবিল্লাহ্

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন