‘কোথায় গেল আমার খেতাব, কোথায় গেল আমার মুক্তিযুদ্ধ’

  30-11-2016 10:08AM


পিএনএস ডেস্ক: হত্যার উদ্দেশ্যেই তার উপর হামলা করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত এবং ২ নং সেক্টরের মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম (৬৩)।

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার ভাটেরচর বাজার এলাকায় সোমবার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে রফিকুল ইসলামকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে দুর্বৃত্তরা। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঢামেক হাসপাতালের ৫১ নম্বর কেবিনে রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেছেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় কতবার যে জীবন ফিরে পেয়েছি এর হিসাব নেই। জলে, জঙ্গলে, পাহাড়ে-পর্বতে এমন কোনো জায়গা নেই যে সেখানে যাওয়া হয়নি। সাপ-বিচ্ছুর কোনো ভয় পেতাম না। তখন শুধু একটাই নেশা ছিল, কিভাবে দেশ স্বাধীন করা যায়। আজ দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু কিছু লোকের কারণে এদেশের মানুষ স্বাধীনভাবে চলতে ফিরতে পারছে না। যেন তাদের কাছে মানুষ এক প্রকার জিম্মি হয়ে আছে। আজ আমার কথাই ভাবুন, দেশ স্বাধীন করলাম, বীরপ্রতীক খেতাব অর্জন করলাম, কিন্তু আজ মাদক ব্যবসায়ীর হাতে মার খেয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছি। আজ কোথায় গেল আমার খেতাব, কোথায় গেল আমার মুক্তিযুদ্ধ?’

রফিকুল ইসলাম আরও বলেছেন, ‘এলাকার যুবকরা যেন কোনো প্রকারের মাদকাসক্ত না হয়ে পড়ে, সেই জন্য আজ থেকে বিশ বছর আগে গড়ে তুলেছিলাম ‘মাদককে না বলুন’ নামের একটি সংগঠন। এই সংগঠনের মাধ্যমে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিলাম। প্রথমে আমরা ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করি। মাদক কে না বলুন এর মনোগ্রাম লিখে গেঞ্জি বিতরণ করি। যখন অনেকটা পথ এগিয়ে গেলাম, তখনই বাধার সম্মুখীন হলাম। স্থানীয় কিছু মাদক ব্যবসায়ী হত্যার উদ্দেশ্যে আমার উপর হামলা চালাল। প্রাণে বেঁচে গেলাম।’

তার উপর হামলার নেপথ্যের কারণ জানাতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘কয়েক দিন আগে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী শহীদুল্লাহর ছেলে সানি ইয়াবাসহ পুলিশের কাছে ধরা পড়ে। পুলিশকে তথ্য দেওয়ার সন্দেহে গত শনিবার আমার নাতি সবুজকে মারধর করে শহীদুল্লাহর লোকজন। গতকাল (সোমবার) সন্ধ্যায় গজারিয়া থানায় একটি অভিযোগ দিয়ে বাসায় ফেরার সময় ভাটেরচর বাজারের কাছে আসলে, সেখানে আগে থেকেই ওত পেতে থাকা শহীদুল্লাহ, তার ভাই জিম মোস্তফা আসাদ আলী,শফিকুল ইসলাম, শহীদুল্লাহর চার ছেলেসহ প্রায় ১৫-২০জন রড চাপাতি নিয়ে আমার উপড় হামলা করে। আমার চিৎকারে এলাকার কিছু লোকজন এগিয়ে এলে তারা পালিয়ে যায়। পরে আমাকে উদ্ধার করে প্রথমে গজারিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’

রফিকুল ইসলাম বর্তমানে ৫১ নম্বর কেবিনে ভর্তি আছেন। মঙ্গলবার দুপুরে তার ছেলে রবিউল ইসলাম ডালিম এই ঘটনায় ১৩ জনকে আসামি করে গজারিয়া থানায় মামলা করেছেন।

রফিকুল ইসলামের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ঢামেক হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটির আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ জেসমিন নাহার বলেছেন, ‘রফিকুল ইসলাম বর্তমানে আশংকামুক্ত। কিন্তু তার বাম হাত ও বাম পা ভেঙ্গে গেছে। সারতে অনেক সময় লাগবে।’

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন