সেদিন বিমানে কী ঘটেছিল

  08-12-2016 12:52PM

পিএনএস ডেস্ক: বিমানে গোলযোগের খবর জেনেও অবিচল ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ঘটনাটিকে যান্ত্রিক ত্রুটি হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই নেন। অবশ্য আওয়ামী লীগের অনেক নেতা ঘটনাটিকে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেন। তা আমলে নেননি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এ বিষয়ে দলের নেতাকর্মীদের বলেন, অত ঘাবড়ালে চলে না। আমি এটিকে যান্ত্রিক ত্রুটি হিসেবেই দেখেছি। প্লেনে যান্ত্রিক ত্রুটি হতেই পারে। আমাকে যখন বিষয়টি জানানো হয়, তখন আমিই তাদের বলি পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নিতে। আশপাশে ল্যান্ডিং করার প্রয়োজন মনে করলে, ল্যান্ডিং করে বিমানের ত্রুটি পরীক্ষা করতে। এর পর বিমান থেকে যখন আমাকে ল্যান্ডিংয়ের জন্য অনুমতি চাওয়া হয়, তখন আমিই তাদের ল্যান্ডিং করতে বলি।

গত বুধবার রাতে হাঙ্গেরি সফর শেষে দেশে ফেরার পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রেওয়াজ অনুযায়ী, দলের সভাপতি দেশের বাইরে যাওয়ার সময় এবং সফর শেষে দেশে ফেরার সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। এবারও হাঙ্গেরি সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে পৌঁছান বুধবার রাত পৌনে ১২টার দিকে। ওই সময়ও গণভবনে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আবদুর রহমান, সম্পাদকম-লীর সদস্য ফরিদুন্নাহার লাইলী, একেএম এনামুল হক শামীম, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী প্রমুখ।

গণভবনে উপস্থিত কয়েক নেতার সঙ্গে আলাপকালে আমাদের সময়কে বলেন, হাঙ্গেরি সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী যখন দেশে ফেরেন, তখন তার চোখেমুখে একটা উৎফুল্লতার ছাপ ছিল। কোনো কারণেই প্রধানমন্ত্রীকে চিন্তিত বা উদ্বিগ্ন মনে হয়নি। আমাদের দলের কয়েকজন নেতা প্রথমে বিমানের প্রসঙ্গটি তোলেন। বিমানে কোনো দুর্ঘটনা হয়নি জানিয়ে তারা এ জন্য আপার দীর্ঘায়ু কামনা করে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে কথা বলেন। ওই সময় কয়েকজন নেতা এমনটিও বলেন, আপা এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত ঘটনা হতে পারে। আপনাকে বারবার হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, এটিও তেমন একটি ষড়যন্ত্র হতে পারে। আপনি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে, এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবার শাস্তির ব্যবস্থা করুন। প্রধানমন্ত্রী ওই নেতাদের বক্তব্যকে আমলে না নিয়ে বলেন, এটি একটি যান্ত্রিক ত্রুটি। এই ঘটনাকে অন্যভাবে দেখার কিছু নেই। ওই সময় গণভবনে উপস্থিত এক নারী নেত্রী প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, আপা তুর্কিমেনিস্তানে বিমান ঠিক করার পর আপনি আবার যখন ওই বিমানে উঠলেন, তখনো আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মৃত্যু মাথায় নিয়েই আমি চলি। মৃত্যু যখন কপালে লেখা আছে, হবে। আমি তা নিয়ে ভাবি না। মৃত্যুর ভয়ে তো আর কাজ বন্ধ করে রাখা যায় না।

গণভবনে উপস্থিত নেতারা আরও জানান, বিমানের প্রসঙ্গ ছাড়াও হাঙ্গেরি সফর নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এই সফরকে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আখ্যা দিয়ে জানান, হাঙ্গেরির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়েছে এই সফরের মধ্য দিয়ে। হাঙ্গেরির সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব পুরনো। মুক্তিযুদ্ধের সময় হাঙ্গেরি বাংলাদেশের পাশে ছিল। এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধশেষে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর পরই হাঙ্গেরি বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, হাঙ্গেরির এবারের সফরে বেশ কয়েকটি চুক্তি হয়েছে। আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরাও খুশি। আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিক্ষাবৃত্তির প্রসঙ্গ তুললে প্রধানমন্ত্রী হাঙ্গেরি সরকারের ১০০টি ফুলব্রাইট স্কলারশিপের কথাও উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের মধ্য দিয়ে একটি শিক্ষাবৃত্তির চুক্তি হয়েছে। যার আওতায় প্রতি বছর ১০০ বাংলাদেশি মেধাবীকে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ দেবে দেশটি। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী হাঙ্গেরি সফরের আরও কিছু সফলতা তুলে ধরেন দলের নেতাদের কাছে।

বিমানে ত্রুটি ধরার পর পরিস্থিতি কেমন ছিল, জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর এক সফরসঙ্গী আমাদের সময়কে বলেন, বিমানে বসে আমরা বিষয়টি তেমন একটা আঁচ করতে পারিনি। তুর্কিমেনিস্তানে জরুরি অবতরণের আগ মুহূর্তে প্লেনে ঘোষণা দেওয়া হয়, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমানটি তুর্কিমেনিস্তানের বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। এ ঘোষণার প্রায় ১০-১২ মিনিট পরই বিমানবন্দরে নিরাপদে লান্ডিং করে। ওই সফরসঙ্গী বলেন, বিমানের স্বাভাবিক ল্যান্ডিং করানো হয়েছিল, জরুরি নয়। এর পর আস্তে আস্তে প্রধানমন্ত্রীসহ যাত্রীরা নামতে শুরু করেন। যাত্রীরা নেমে যাওয়ার পর আমরা বিমানবন্দরে বিমানের ইঞ্জিন পরীক্ষা করতেও দেখি। তিনি বলেন, তখনো আমরা বুঝিনি, আসলে মূল ঘটনা কী। এর পর বিমানটি মেরামত শেষে হাঙ্গেরির পথে পুনরায় যাত্রা শুরু করে। আমরা খুব স্বাভাবিকভাবেই গল্প-গুজব করতে করতে হাঙ্গেরি পৌঁছাই। এর পর হোটেলে ঢোকার পর, বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকা অনলাইনে দেখে আমরা বুঝতে পারি বিমানের গোলযোগের বিষয়টি।

সুত্র: দৈনিক আমাদের সময়


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন