বুড়িগঙ্গায় আরেক ‘হাতিরঝিল’

  08-12-2016 05:00PM

পিএনএস ডেস্ক: এবার ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গাকে রক্ষা ও দৃষ্টিনন্দন করতে সিঙ্গাপুর নদীর আদলে একে সাজাতে মাস্টারপ্ল্যান করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এর মাধ্যমে বুড়িগঙ্গার পাড়ে ঢাকার দ্বিতীয় হাতিরঝিল গড়ে তোলা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকা। আগামী জানুয়ারিতে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। এ লক্ষ্যে জমি দখল করে বুড়িগঙ্গার দুই তীরে গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন নতুন স্থাপনা। সূত্র বলছে, কল কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য ছাড়াও রাজধানীর সোয়া কোটি মানুষের বর্জ্য পড়ে নষ্ট হয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে উঠেছে বুড়িগঙ্গার পানি। নদীটি আজ মৃত্যুর পথে। এ অবস্থা থেকে বুড়িগঙ্গাকে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তুলতে ঢাকা ইন্টিগ্রেটেড আরবান ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড স্মার্ট সিটি ম্যানেজমেন্ট নামে একটি পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। বাস্তবায়নের মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ বছর। সূত্র জানায়, শিগগিরই প্রথম পর্যায়ে বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতু থেকে (বাবুবাজার-কেরানীগঞ্জ সেতু) সদরঘাট পর্যন্ত বিউটিফিকেশনের কাজ শুরু হবে। বাকি অংশের কাজ হবে বছরের শেষ দিকে। এই ভাগে হাজারীবাগ, সদরঘাট থেকে নারায়ণগঞ্জের পাগলা পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। ডিএসসিসির উদ্যোগে বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ মিউনিফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (বিএমডিএফ) আর্থিক সহায়তায় নদীর মূল অবস্থান অটুট রেখে সিঙ্গাপুর নদীর আদলে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনা হবে। আর বুড়িগঙ্গার দুই তীরে হাতিরঝিলের আদলে স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে অবকাশ যাপনের জন্য নদীর তীরে থাকবে বিলাসবহুল রিসোর্ট, হাঁটার রাস্তা, পার্ক, বসার স্থান, নদীঘাট, পর্যটকের জন্য প্রমোদতরী, ভাসমান বিনোদন কেন্দ্র ও রেস্তোরাঁ। সবুজে সবুজে ভরে তোলা হবে নদীর পাড়। দুই পাড়ে থাকবে আধুনিক সাজসজ্জাসহ আলোকসজ্জা। থাকবে দেশি-বিদেশি ফুল ও সাজবৃক্ষ দিয়ে সাজানো। কিছু স্থান রাখা হবে খোলামেলা। নদীর দুই পাশে চলবে উন্নত বাস সার্ভিস। এ ছাড়া বুড়িগঙ্গার দুই তীর ঘেঁষে থাকবে সিরামিকের তৈরি ওয়াকওয়ে ও দর্শনার্থীর বসার জন্য ছোট ছোট টেবিল। পর্যটক আকর্ষণে থাকবে প্রমোদতরী। সব বয়সের দর্শনার্থীর জন্য বিনোদন পার্ক। থাকবে তিন তারকা মানের কয়েকটি রিসোর্টও। উন্নত দেশের নদীবন্দরের আদলে ঢেলে সাজানো হবে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল। এ ছাড়া বুড়িগঙ্গার পানির মান ঠিক রাখতে কয়েকটি পানি শোধনাগার (রিসাইকেল পন্ড) থাকবে। রাজধানীর ১৮টি সুয়ারেজ পাইপের পানি ফিল্টারিং করতে প্রাথমিক পর্যায়ে ৮ থেকে ১০টি পরিশোধন প্লান্ট বসানো হবে। পানির মান ঠিক রাখতে সিঙ্গাপুরের আদলে রাজধানীর সুয়ারেজ লাইনের পানি বুড়িগঙ্গায় পড়ার আগে তা আলাদা ৩ থেকে ৪টি পুকুরে রাখা হবে। প্রথম পুকুরে দূষিত পানি ফিল্টারিং হয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুকুর হয়ে বুড়িগঙ্গায় যাবে। ডিএসসিসির এক কর্মকর্তা বলেন, সিঙ্গাপুর নদীতে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক ভিড় জমান। সেই নদীর আদলে বুড়িগঙ্গাকে সাজাতে মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরা বৈঠক করেছেন। নকশা প্রণয়নের কাজ শেষ। তিনি বলেন, ১৮০০ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক আবাসিক প্রতিনিধি জন টেইলর বুড়িগঙ্গার রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন, ‘বর্ষাকালে যখন বুড়িগঙ্গা পানিতে ভরপুর থাকে তখন দূর থেকে ঢাকাকে দেখায় ভেনিসের মতো। ’ সে কথা মাথায় রেখে সবকিছু ঢেলে সাজানো হবে। ডিএসসিসির প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, বুড়িগঙ্গার প্রাণ ফিরিয়ে আনতে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় একে দূষণমুক্ত, আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন করতে একটি মাস্টারপ্ল্যান গ্রহণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২০০ কোটি টাকা। ?বিশ্বব্যাংক ১ হাজার ৬০০ কোটি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বাকি টাকা ডিএসসিসির তহবিল থেকে ব্যয় হবে। তিনি আরও বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনা হবে। নান্দনিক সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করা হবে।

সুত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন