বাংলাদেশের ৫০ কোটি রুপি নিচ্ছে না ভারত

  18-01-2017 08:35AM


পিএনএস: ভল্টে থাকা ৫০ কোটি রুপি ভারতের কাছ থেকে পাল্টে আনতে অনেক চেষ্টা-তদবির করেও সাড়া পাচ্ছে না বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর চিঠি দিয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে। কলকাতায় থাকা সোনালী ব্যাংকের শাখা নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছে। তবু বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে থাকা ভারতের বাতিল করা ৫০ কোটি রুপির ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বদল করে দিচ্ছে না ভারত। সর্বশেষ নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকেও অনুরোধপত্র পাঠানো হয়েছে। তাতেও সাড়া মিলছে না।

শুল্ক কর্তৃপক্ষ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের বন্দরগুলোতে ৫০০ ও ১০০০ রুপির ভারতীয় নোট আটক করেছে। প্রতিটি ঘটনায় চোরাচালানের অভিযোগে ফৌজদারি মামলা হয়েছে, যা আদালতে বিচারাধীন। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, আটক ভারতীয় মুদ্রার পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি রুপি, যার সবই ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট। এসব রুপি নিরাপত্তা হেফাজতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে সংরক্ষিত আছে।

গত ৮ নভেম্বর ভারত সরকার তাদের ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিল করে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের শাখায় জমা দিয়ে বদল করার সুযোগ দেয় তার নাগরিকদের জন্য। বাংলাদেশের কাছে থাকা ৫০ কোটি রুপির বিনিময়ে ডলার অথবা ভারত যে নতুন ৫০০ ও ২০০০ রুপির নোট বাজারে ছেড়েছে, সেগুলো দেওয়ার জন্য দফায় দফায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে অনুরোধ হলেও তাতে কাঙ্ক্ষিত সাড়া পাচ্ছে না বাংলাদেশ। এ ছাড়া ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তহাটে থাকা সোনালী ব্যাংকের শাখাগুলোতেও ভারতের বাতিল করা ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট রয়েছে। এসব নোট ভারত না নিলে তা পুরোপুরিই মূল্যহীন কাগজে পরিণত হবে। এতে লোকসান হবে বাংলাদেশের।

নোটগুলো বদল নিয়ে জটিলতার আশঙ্কা আগে থেকেই করছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। সে কারণেই গত ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়কে বলে, ‘বাংলাদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও সরকারের পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে থাকা ভারতীয় রুপি রূপান্তরে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণও প্রয়োজন মর্মে বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে। ’

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. মাসুদ বিশ্বাস গত ১৬ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে লেখা চিঠিতে জানিয়েছেন, বাংলাদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও সরকারের পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে থাকা ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট রূপান্তরে সহযোগিতা চেয়ে নয়াদিল্লিতে থাকা বাংলাদেশ হাইকমিশন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে অনুরোধ করা হয়েছে যেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্রুত বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়াকে (আরবিআই) নির্দেশনা দেন।

এর আগে ১৯ ডিসেম্বর গভর্নর ফজলে কবির ডিও লেটার পাঠান রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার গভর্নর ড. অর্জিত আর প্যাটেলের কাছে। ওই চিঠিতে ফজলে কবির বলেন, ‘আশা করি, ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ভারতের অর্থনীতিকে আরো ভালো অবস্থায় নেবে। তবে বাংলাদেশিদের যাঁরা ভারতে ভ্রমণ করেন এবং বাণিজ্যিক লেনদেন করেন, তাঁদের ওপর কিছু নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্র মালিকানাধীন সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী ব্যাংক সীমান্তহাটগুলোতে বৈধভাবে অর্থ লেনদেন করে। এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছেও প্রায় ৫০ কোটি রুপির (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬০ কোটি টাকা) এসব নোট রয়েছে, যা বিভিন্ন সময় শুল্ক কর্তৃপক্ষ, স্থলবন্দর ও বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়েছে। সোনালী ব্যাংকের কলকাতা শাখা ইতিমধ্যেই আরবিআইয়ের কলকাতা কার্যালয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের কাছে ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট থাকার বিষয়ে আলোচনা করেছে। ’ বিষয়টির দ্রুত সমাধানের জন্য আরবিআই গভর্নরের ব্যক্তিগত মনোযোগ চেয়েছেন ফজলে কবির। এরপর অনেক সময় কেটে গেলেও আরবিআই তেমন কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন গত ২৯ ডিসেম্বর পত্র পাঠিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে। ওই চিঠির সঙ্গে অর্জিত আর প্যাটেলের কাছে লেখা ফজলে কবিরের চিঠির কপিও সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও আর্থিক লেনদেনের কাজ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে করে থাকে সোনালী ব্যাংক। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সোনালী ব্যাংকের কাছে ভারতীয় মুদ্রার মজুদ রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের পক্ষে সোনালী ব্যাংক সীমান্তহাটগুলোতে দুই দেশের মুদ্রাই গ্রহণ ও বিতরণ করে। ফলে সেখানেও ভারতীয় মুদ্রা জমা হয়। জমা থাকা ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোটগুলো কিভাবে বদল করা যাবে, সে ব্যাপারে আলোচনা করতে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে ব্যাংকটির কলকাতা শাখাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ নভেম্বর সোনালী ব্যাংকের কলকাতা শাখার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী মর্তুজা আরবিআইয়ের কাছে ই-মেইল পাঠান। ফিরতি ই-মেইলে আরবিআই বিনিময়যোগ্য নগদ নোটের পরিমাণ জানাতে বলে। সোনালী ব্যাংক আরবিআইকে সে তথ্য জানালেও তা ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে কিছুই বলেনি আরবিআই।

এসব বিষয়ে কথা বলতে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তখন বৈঠকে থাকার কথা জানান। পরে তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে গত মাসে তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের কাছে থাকা ভারতীয় ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বদলে নেওয়ার ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে আলোচনা চলছে। ভারত যেভাবে বলবে, সেভাবেই নোটগুলো বদলে নেওয়া হবে। সূত্র: কালের কণ্ঠ

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন