কালজয়ী যে নাম মুছে ফেলার নয়…

  19-01-2017 09:57PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : আলোকিত যে নামটি মুছে ফেলার অব্যর্থ চেষ্টা চলছে, আজকে তাঁর জন্মদিন। হিসা্বমতে ৮১তম জন্মদিন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কথা বলছি। কর্মগুণে যিনি বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবেন ততদিন, যতদিন এদেশের ইতিহাস থাকবে।

জিয়াউর রহমানের জন্ম না হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা এবং জন্মলাভ এত সহজে হতো কিনা, ঐতিহাসিক সে প্রশ্ন থাকেই যায়। যার জন্ম না হলে স্বনির্ভর বাংলাদেশ সম্ভব হতো কিনা, সে প্রশ্নও সামনে চলে আসে। জন্ম যে সৃষ্টির লক্ষ্যে, জিয়াউর রহমান জীবনের পরতে পরতে সে স্বাক্ষর রেখে গেছেন।

দেশ ও জাতির কঠিন সংকটকালে রাজনীতিবিদরা যখন পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, করণীয় সম্পর্কে দেশবাসী যখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় সে সময়ে জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে সময়ের সাহসী কাজটি করতে তিনি ভুলেননি। ঘোষণা দিয়েই তিনি বসে থাকেননি, মাঠে-ময়দানে সম্মুখসমরেও অংশ নেন।

দেশ-মাতৃকার জন্য সাহসী ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকার তাঁকে বীর উত্তম খেতাব দেয়। জিয়াউর রহমানের কালজয়ী দেশপ্রেমিক কর্মকাণ্ডকে যারা অতিক্রম করতে পারছেন না, তারাই নানাভাবে তাকে খাটো করার হীন চেষ্টায় লিপ্ত। এটা করতে গিয়ে তারা মূলত নিজেকে খাটো করছে।

সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে জিয়াউর রহমান দ্বিতীয় বারের মতো দেশবাসীকে সঠিক পথ দেখাতে সফল হন। তার সময়েই ক্ষুধা, দারিদ্র্য কমানোর চেষ্টা চলে। না-খেয়ে মরা লাশের মিছিল হ্রাস পায়। অসহনীয় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ঘটে বৈপ্লবিক উন্নতি।

জিয়াউর রহমানের কূটনৈতিক সাফল্যের ফলে সৌদি আরব, জাপানসহ অনেক দেশ বাংলাদেশকে সমর্থন দেয়। শুধু কি তাই, জাতিসংঘের একটি অস্থায়ী পদে জাপানকে হারিয়ে বাংলাদেশ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার মতো গৌরব অর্জন করে। সে সময়ের বিশ্ববিবেকরা ইরাক-ইরাক যুদ্ধে মধ্যস্থতাকারীর গুরুত্বপূর্ণ পদে বসান জিয়াউর রহমানকে।

দেশকে এগিয়ে নিতে তিনি দেশের একপান্থ থেকে অন্য প্রান্থে ঘুরে বেড়িয়েছেন উদয়-অস্ত। সমস্যাগুলো দেখে দেখে করণীয় নির্ধারণ করেছেন। বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞদের সঙ্গে বিরামহীন মতবিনিময় করে কাজগুলো করতেন। পুকুরে মাছ চাষ, কৃষি, কুঠির শিল্প ও হাঁস-মুরগি পালনকে অগ্রাধিকার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করেছেন।

যুব মন্ত্রণালয় গঠন করে বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মক্ষম করে তোলেন। শুরু করেন শ্রম রপ্তানি। তার সময়ই বাংলাদেশের মানুষ ব্যাপক হারে কাজের জন্য মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে যাওয়ার সুযোগ পায়। যে সুফল আজও দেশ ভোগ করছে। রেমিট্যান্স তার অন্যতম সাক্ষ্য।

জিয়াউর রহমানের সময়ে আইন করে নারীদের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হয়। তার মতে, দেশের অর্ধেক নারীকে পেছনে ফেলে দেশ এগোতে পারে না। তিনিই পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীতে নারীদের নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সবুজ বিপ্লবের মাধ্যমে তিনি দেশকে খাদ্যে স্বংয়সম্পূর্ণ করে তোলেন।

তার সময়ই দেশ নিরক্ষর মুক্ত হয়। খাল কাটার মধ্য দিয়ে কৃষকের দোরগোড়ায় পানি পৌঁছে দিয়ে নিরাপদ সেচের ব্যবস্থা করেন। যে কোনো প্রয়োজনে দায়িত্বশীলদের বঙ্গভবনে ডেকে নিয়ে পরামর্শ গ্রহণ করতেন। উপস্থিতদের খাওয়াতেন এবং নিজে খেতেন সাদামাটা। চলতেন তেমন। স্ত্রী-সন্তানদের ক্ষেত্রে ছিল এমনই।

বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের বীজ বপনে তিনি সক্ষম হন। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ত্ব রক্ষায় তিনি আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সো্চ্চার ছিলেন। দেশের সেনাবাহিনীকে শত্রু চিহ্নিতপূর্বক প্রয়োজনীয় আধুনিক প্রশিক্ষণ ও দক্ষ করে গড়ে তোলার সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেন অকৃপণভাবে।

জিয়াউর রহমান কখনো স্বজনপ্রীতি দেখাননি। দেশটাকে নিজের মতো করে দেখেছেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠনের মধ্য দিয়ে তিনি দেশ গঠনে তার লক্ষ্য ও আদর্শ রেখে যান। বিসমিল্লাহ হিররাহমানির রাহিমের ১৯টি হরফে তিনি ১৯ দফা বরকতময় কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

দেশে অসংখ্য শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি রয়েছেন। তাদের প্রাপ্য শ্রদ্ধা ও সম্মান সমভাবে দেয়াই ভদ্রলোকের কাজ। কাউকে ছোট করতে গিয়ে অথবা কাউকে অতি বড় করতে গিয়ে অন্যকে খাটো করে দেখা নিজের হীনম্মতার বহিঃপ্রকাশ। ইতিহাসই যার যার অবস্থান লালন করে। সেক্ষেত্রে অন্যকে খাটো করতে গিয়ে নিজেদের আর যেন আমরা বিব্রতকর অবস্থায় না ফেলি।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন
ই-মেইল : [email protected]

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন