খুলল মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার

  20-01-2017 01:54PM

পিএনএস ডেস্ক: অবশেষে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য খুলে গেল মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। বুধবার প্লান্টেশন খাতে ১০ হাজার কর্মীর ‘চাহিদাপত্র’ পাঠিয়েছে দেশটি। কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্র চাহিদাপত্র পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। নতুন পদ্ধতিতে নিয়োগ করা হবে শ্রমিক। নিয়মানুযায়ী দেশের জনশক্তি রপ্তানির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চুক্তিপত্রে সই করবে গমনেচ্ছু কর্মীরা। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ডিজিটাইজড পদ্ধতিতে নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের প্রথম ব্যাচ আগামী মাসের প্রথমদিকে বাংলাদেশ ছাড়তে পারে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের মুখপাত্র ও শ্রম কাউন্সেলর সাইদুল ইসলাম চাহিদাপত্র হাতে পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে গতকাল মোবাইল ফোনে জানান, সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতি, তাই পরীক্ষামূলকভাবে কিছু কাজ সত্যায়ন করছি। অনলাইন সিস্টেম ঠিক থাকলে শিগগির মোটাদাগে কর্মী পাঠানো শুরু হবে।

জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার সভাপতি বেনজির আহমেদ জানান, কর্মীরা মালয়েশিয়ায় গিয়ে যেন বিপদে না পড়ে, তা নিশ্চিতে সব উদ্যোগ শেষ করা হয়েছে। আমরা আশাবাদী, কর্মীরা আর প্রতারিত হবে না।

এর আগে কর্মী নেওয়ার সব প্রস্তুতির কথা জানিয়ে ১২ জানুয়ারি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়। বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে সব ধরনের কারিগরি প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে মালয়েশিয়া। চিঠিতে দ্রুত কর্মী পাঠাতে তৎপর হতে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানানো হয়। গত ১৬ জানুয়ারি চিঠির জবাব দেয় বাংলাদেশ। তাতে বাংলাদেশের প্রস্তুতির কথা জানানো হয়।

প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি এ প্রসঙ্গে বলেন, শ্রমবাজার উন্মুক্তের বিষয়ে মালয়েশিয়া সরকারের একটি চিঠি পেয়েছি। এর মাধ্যমে কাক্সিক্ষত শ্রমবাজারের দ্বার উন্মোচন হচ্ছে। আশা করছি এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে কর্মী পাঠানোর সুযোগ রেখে উভয় দেশের মধ্যে ‘জিটুজি প্লাস’ চুক্তি স্বারিত হয়। এ চুক্তির পরের দিনই মালয়েশিয়া সরকার বিদেশি কর্মী নেওয়া বন্ধ ঘোষণা করে। কয়েক মাস আগে বিদেশি কর্মী না নেওয়ার ঘোষণাটি প্রত্যাহারের পর ‘জিটুজি প্লাস’ চুক্তির আওতায় কর্মী প্রেরণের বিষয়টি আবার সামনে আসে। প্লান্টেশন, এগ্রিকালচার, ম্যানুফ্যাকচারিং, কনস্ট্রাকশনসহ ৫টি খাতে কর্মী নেওয়ার ঘোষণা রয়েছে মালয়েশিয়া সরকারের।

নতুন চাহিদাপত্রে উল্লেখ রয়েছে শতভাগ অনলাইনের সহায়তায় কর্মীর নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করবে মালয়েশিয়া সরকার। বাংলাদেশের অনুকূলে যে চাহিদাপত্র ইস্যু করা হয়েছে তাতে ৩ বছর কাজের সুযোগ থাকছে, যা টানা ১০ বছর পর্যন্ত নবায়ন করা যাবে। কর্মীর দৈনিক কর্মঘণ্টা হবে ৮ ঘণ্টা, চাইলে ওভারটাইম করা যাবে। মালয়েশিয়া সরকারের শ্রম আইন কর্মীর ক্ষেত্রে শতভাগ প্রযোজ্য হবে। কর্মীর মাসিক বেতন চুক্তিপত্রে যা উল্লেখ থাকবে তাই-ই দেওয়া হবে। এর কম হলে কম্পিউটার কিক করবে না। হাতে নয়, কর্মীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মজুরি জমা হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে দুই দেশের সরকারের কাছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বার্তা চলে যাবে। অনলাইন প্রক্রিয়ার কারণে একটি ধাপের সঙ্গে অন্যটি ম্যাচ না করলে সিস্টেম কাজ করবে না বলে জানা গেছে।

অনলাইনেই কর্মী ব্যবস্থাপনা : সম্পূর্ণ অনলাইনের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ হবে মালয়েশিয়ায়। ‘জিটুজি প্লাস’-এর আওতায় অনলাইনে কর্মীর ভিসা প্রসেস করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। বর্তমান ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে একজন কর্মীর নিয়োগে ৩ থেকে ৯ মাস সময় লাগলেও নতুন এ পদ্ধতিতে দুই সপ্তাহের মধ্যেই সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কর্মীর নিয়োগ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। নতুন এ পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগের কারিগরি সহায়তা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মালয়েশিয়া সরকারকে সহায়তা দিচ্ছে সে দেশের ৫টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এরা হলোÑ এস-ফাইভ, বায়োটেক বেস্টিনেট, সিনারফ্যাক্স ও ইউকেএসবি। অন্তত ১২ ধাপ অনুসরণ করে অনলাইন পদ্ধতিতে কর্মী নেওয়া হবে। অনলাইন প্রক্রিয়ায় কর্মী নেওয়া শুরু হলে জালিয়াতি আর অনিয়মের কোনো সুযোগ থাকছে না। অভিবাসন ব্যয় কমে যাওয়ার পাশপাশি মালয়েশিয়ায় গিয়ে কর্মীরা কাজের নিরাপত্তা, বীমা সুবিধাসহ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) বিধানমতে সব সুযোগ-সুবিধা পাবে। সরেজমিন মালয়েশিয়ায় গিয়ে দেশটির সরকার অনুমোদিত কারিগরি সহায়তা প্রতিষ্ঠান সিনারফাক্স ও বেস্টিনেট নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

মালয়েশিয়া সরকারের এসব প্রতিনিধি জানান, অনলাইন প্রক্রিয়ার প্রথমেই মালয়েশিয়ায় কোনো কোম্পানি কিংবা কারখানার মালিক কর্মীর চাহিদাপত্র সরকারের কাছে আবেদন করবে। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি কারখানার বাস্তব অবস্থা যাচাই করে রিপোর্ট দেবে এবং চাহিদাপত্র ঠিক হলে মালয়েশিয়ান সরকার কর্মী নেওয়ার অনুমোদন দেবে। জানা গেছে, মালয়েশিয়ার সরকারই কর্মী নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মনোনীত করবে। যাদের অতীতের রেকর্ড ভালো, তারাই মনোনয়নের আওতায় আসবে। পরে সেই চাহিদাপত্র বাংলাদেশে মালয়েশিয়ান দূতাবাসে যাবে। ১২টি ধাপ পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী নেওয়া হবে। শুধু বাংলাদেশ নয়Ñ একই পদ্ধতিতে ইতোমধ্যে মালয়েশিয়ার সোর্স কান্ট্রি ১৪টি দেশ থেকে কর্মী নেওয়া হচ্ছে। মালয়েশিয়া সরকারের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে দুটি প্রতিষ্ঠান না ৯০০ প্রতিষ্ঠান কর্মী পাঠাবে তা নির্ধারণ করবে মালয়েশিয়া সরকার। এটা অন্য কারো নির্ধারণ করার সুযোগ নেই। মূলত প্রতারণা এবং জালিয়াতি বন্ধ করা এবং প্রবাসী কর্মীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই উভয় সরকার সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে।

প্রতারণার সুযোগ নেই : বিদ্যমান বাস্তবতা বলছে, বিদেশ যেতে ইচ্ছুকদের কাছ থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহের পর থেকেই দালাল চক্র দফায়-দফায় টাকা নিচ্ছে। অনেক সময় রিক্রুটিং এজেন্সির কাছেও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন কর্মীরা, যা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মেডিক্যাল আর বহির্গমন ছাড়পত্র পাওয়ার আগে টাকা হাতিয়ে নেওয়া যেন নিয়মিত ঘটনা। দালালদের প্রতারণার শিকার হয়ে বিভিন্ন দেশে কর্মীদের মানবেতর জীবনযাপনের ঘটনা বহু পুরনো। বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় এ দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য অনেকদূর অবধি বিস্তৃত। তাদের প্ররোচনায় মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে মালয়েশিয়ায় এসে প্রতিশ্রুত চাকরি পাওয়া তো দূরের কথা অনেকের ঠাঁই হয়েছে বনে-জঙ্গলে। ব্রিজের নিচে ও ফুটপাতে রাত কাটানোর ঘটনাও রয়েছে। এসব প্রতারণার কারণে দেশের অন্যতম শ্রমবাজারটি কয়েকবার বন্ধও হয়েছে। এতে বাংলাদেশ সরকারকে যেমন খেসারত দিতে হচ্ছে, তেমনি মালয়েশিয়া সরকারও ওই ঘটনায় বিব্রত হয়েছে। এমন বাস্তবতায় দুই দেশের সরকার মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। কোনোভাবেই যাতে দালাল চক্র সুবিধা না করতে পারে সেজন্য ম্যানুয়াল বা পুরনো পদ্ধতি বাদ দিয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বায়োমেট্রিকের মাধ্যমে কর্মী বাছাই এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।

শ্রমবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে কর্মী মালয়েশিয়া এলে প্রথমে ৩ বছরের জন্য ভিসা দেওয়া হবে। পরে এক বছর করে ৫ বছর মালয়েশিয়ায় থাকতে পারবে তারা। ভিসা নবায়ন ফি মালিক প বহন করবে। মালিক প চাইলে কর্মীরা সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত কাজ করতে পারবে।

সুত্র: আমাদের সময়


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন