এভাবে ফুটপাতেই চলছে তার ১৫ বছর সংসার!

  24-01-2017 01:28AM

পিএনএস ডেস্ক: ফুটপাতেই ঘরবাড়ি। একটি পলিথিন, দুটি খাবার বাটি ও কিছু কাপড় নিয়ে ছোট্ট সংসার। রাস্তায় খেয়ে রাস্তাতেই ঘুম। এভাবেই চলছে ১৫ বছর।
আবদুর রহমান নামের ৭৫ বছর বয়সী ওই বৃদ্ধ গত কোরবানির ঈদের আগেও কাজ করতেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি)। মজুরি ভিত্তিতে ডাস্টবিনের ময়লা অপসারণের কাজ করতেন। পেতেন ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। ওই টাকা দিয়েই চলত নিজের সংসার।
কাজ শেষে থাকতেন রাজধানীর সেগুনবাগিচার বটতলার পাশের ফুটপাতে। রোজগারের টাকায় বাসা ভাড়া নেওয়ার সামর্থ্য ছিল না। তাই ঠাঁই হয় ফুটপাতে। টানা ১৫ বছর ধরে এভাবেই কাটছে তাঁর একক জীবন।
কিছুদিন আগে এক গরুর গুঁতায় ভেঙে যায় হাত। পরে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু পায়ে ক্ষতের সৃষ্টি হওয়ায় কাজ ছেড়ে ভর করতে হয় এলাকাবাসীর ওপর। তাঁদের দেওয়া খাবারেই এখন ভরসা রহমানের। মানুষ দিলে খান, না দিলে উপোস।
শুক্রবার রাতে পুরানা পল্টনে আফতার বহুমুখী ফার্ম লিমিটেডের পাশে দেখা যায় রহমানকে। তিনি জানান, হাত ভেঙে যাওয়ায় আর কোনো কাজ করতে পারেন না। সেখানে সবাই তাঁকে খাবার দেন। অনেকে টাকাও দেন। অন্যের ওপর ভর করেই চলছে জীবন।
আবদুর রহমানের ভাষ্য, ঘর ভাড়া নেওয়ার টাকা ছিল না। তাই ১৫ বছর ধরে থাকছেন ফুটপাতে। বৃষ্টির দিনে পলিথিন টাঙিয়ে থাকেন। অন্য সময় খোলা আকাশের নিচে।
ওই এলাকার চা ব্যবসায়ী শহীদ জানান, আবদুর রহমানকে ১৫ বছর ধরে চিনি। তিনি সারা দিন ময়লার কাজ করে রাতে ফুটপাতে ঘুমাতেন। কয়েক মাস থেকে তিনি অচল। এলাকার মানুষ খাবার দেন। এভাবেই তিনি বেঁচে আছেন।
আবদুর রহমান জানান, তাঁর জন্ম কিশোরগঞ্জের জঙ্গলবাড়িতে। বাবা কুলোক চন্দ্র, মা মালোন্দা সুন্দরী। বাবা-মা দুজনই ব্রিটিশ আমলে মারা যান। প্রথম স্ত্রী জ্যোৎস্নার ঘরে সংগ্রাম ও জয় বাংলা নামে দুই সন্তানের জন্ম হয়। ১৯৭১ সালে চলে যান ভারতে। কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর তিনি ফিরে এলেও বাকিরা ভারতেই থেকে যান। তাঁরা এখন ভারতের কোচবিহারের আলীপুর এলাকায় থাকে।
বৃদ্ধ রহমান বলেন, তাঁর নাম ছিল নরেন্দ্র। হিন্দুধর্ম ছেড়ে হন মুসলিম। নাম হয় আবদুর রহমান। দেশ স্বাধীনের পর কাজ করতেন পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজারে। সেখানে আবুল কাশেমের মুদির দোকানে কাজ করার সময়ই গ্রহণ করেন ইসলাম ধর্ম।
এর পর বিয়ে করেন জামালপুরের এক নারীকে। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে ভেঙে যায় তাঁদের সংসার। রহমানের অভাবের সংসার ছেড়ে চলে যান স্ত্রী।
ছেলেদের নামের বিষয়ে রহমান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্ম নেওয়ায় প্রথম সন্তানের নাম রাখি সংগ্রাম। আর স্বাধীনতার পরে জন্ম নেওয়া ছোট ছেলের নাম দিই জয় বাংলা।’
‘ভবেন্দ্র নামের এক চাচাতো ভাই থাকেন কিশোরগঞ্জে। তিনি সেখানে মাছের ব্যবসা করেন। দীর্ঘ প্রায় ১৫ বা ১৬ বছর আগে আমাকে দেখতে ছেলেরা এসেছিল দেশে। তারা আমাকে ভারতে যাওয়ার জন্য বলেছিল। কিন্তু আমি যাইনি’, যোগ করেন রহমান।
আক্ষেপ করে রহমান বলেন, ‘তাদের বলেছি, আমার জন্মস্থান বাংলাদেশ। আমি কেন ভারতে যাব? এই দেশ স্বাধীন হয়েছে কি ভারতে থাকার জন্য? ভারত তোমাদের ভালো লাগে, তোমরা সেখানে থাকো; আমার কোনো আপত্তি নেই।’

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন