ভারত সবক’টি আন্তর্জাতিক নদীতে বাঁধ দিতে যাচ্ছে

  18-02-2017 09:39AM


পিএনএস, এবিসিদ্দিক: আন্তর্জাতিক নিয়ম নীতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভারত আন্তর্জাতিক নদীতে তিন হাজার ৬০০টি বাঁধ তৈরি করেছে। হিমালয়ের ভাটিতে বাংলাদেশের উজানে এসব বাঁধ ছাড়াও আরো এক হাজার বাঁধের নির্মাণ কাজ চলছে পুরোদমে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত অভিন্ন নদীগুলো আন্তর্জাতিক নদী হিসেবে চিহ্নিত। এসব নদীর উজানে কিছু করতে হলে আন্তর্জাতিক আইন মেনেই করতে হবে। কিন্তু ভারত এ আইনের কোনো তোয়াক্কাই করছে না। এটা তাদের সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কিছু নয়। ভারত গঙ্গায় বহু বাঁধ নির্মাণ করে উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন সেচপ্রকল্প ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করছে। এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে পদ্মা ও তার অনেক শাখা নদীই শুকিয়ে গেছে। সেচ সঙ্কটসহ নৌপরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রবাহিত ৫৫টি নদীর উৎস ভারতে।

তারা প্রত্যেকটি অভিন্ন নদীতে বাঁধ, পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প, রিজার্ভারসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করে পানির প্রবাহ আটকে রেখেছে। ফলে শুষ্ক মওসুমে বাংলাদেশের নদ-নদীতে পরিমাণমতো পানির প্রবাহ থাকছে না। আবার বর্ষা মওসুমে অতিরিক্ত পানিতে বন্যায় ভাসছে এ দেশের মানুষ। বাংলাদেশে প্রবাহিত আন্তর্জাতিক নদীর সংখ্যা ৫৮টি। এর মধ্যে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশকারী ৫৫টি নদী হচ্ছে : গঙ্গা, ইছামতি-কালিন্দী, রায়মঙ্গল, বেতনা-কোদালিয়া, ভৈরব-কপোতাক্ষ, মাথাভাঙ্গা, পাগলা, আত্রাই, পুনর্ভবা, তেঁতুলিয়া, টাঙন, কুলিক বা কোকিলা, নাগর, মহানন্দা, ডাহুক, করতোয়া, তালমা, ঘোড়ামারা, দেওনাই-যমুনেশ্বরী, বুড়ি তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, জিঞ্জিরাম, চিল্লাখালী, ভোগাই, নিতাই, সোমেশ্বরী, জাদুকাটা, ধামারিয়া-জাদুখালী, নওয়াগাং, উমিয়াম, ধলা, পিয়াইন, সারি-গোয়াইন, সুরমা, কুশিয়ারা, সোনাই-বরদল, জুরি, মনু, ধলাই, লংলা, খোয়াই, সুতাং, সোনাই, হওড়া, বিজনী, সালদা, গোমতি, কাকরাই-ডাকাতিয়া, সিলোনিয়া, মুহরী, ফেনী ও কর্ণফুলী। ভারত শুধু ফারাক্কা নয়, গঙ্গা-পদ্মাকেন্দ্রিক বাঁধ, জলাধার, ক্রসড্যাম, রেগুলেটরসহ অন্তত ৩৩টি মূল অবকাঠামো নির্মাণ করেছে। এর সাথে রয়েছে আনুষঙ্গিক আরো বহু ছোট-বড় কাঠামো। নতুন করে উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সরকার ৫৩টি বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, প্রকৃতিগত দিক দিয়ে নদী বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম বুনিয়াদ। পেশাগত দিক থেকে জীবন-জীবিকার একটি অংশ নির্ভরশীল এ দেশের নদ-নদীর ওপর।

এ দেশের কৃষি সম্পদ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, ব্যবসায়-বাণিজ্য, পরিবেশ- এর সবই নদী বির্ভর অর্থাৎ নদীকে বাদ দিয়ে এ দেশের উন্নয়ন তথা মানুষের জীবন কল্পনাই করা যায় না। সংখ্যার দিক থেকে মতপার্থক্য থাকলেও কমপক্ষে চার শতাধিক নদ-নদী জালের মতো বিস্তার করে আছে পুরো দেশে। বিশেষজ্ঞদের ভবিষ্যদ্বাণী হচ্ছে- কখনো যদি ৮ রিখটার স্কেলে কোনো ভূমিকম্প বাংলাদেশে হয় তাহলে প্রধান প্রধান নদীগুলোর প্রবাহপথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র এ চারটি নদীর ওপর আঘাত এলেই এর অন্তর্গত শাখা ও উপনদীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং শুকিয়ে যাবে। মূল নদী ও উপনদীতে বাঁধ দেয়ার ফলে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়ায় ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের বহু পানির উৎস চিরতরে হারিয়ে যাবে। পানির অভাবে বাংলাদেশে বড় ধরনের সামাজিক সমস্যার উদ্ভব হবে, যা পার্শ্ববর্তী দেশকেও আক্রান্ত করতে পারে। তাই সর্বপ্রথম ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে তাদের আগ্রাসী নীতি পরিত্যাগ করতে হবে। পানি সমস্যা দ্বিপাক্ষিকভাবেও সমাধান করা যাবে না। গঙ্গার পানিবণ্টনের সাথে ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদীর বিষয়ও আলোচনাভুক্ত করতে হবে।

আন্তর্জাতিক নদীর পানির সুষ্ঠু ব্যবহারের স্বার্থে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও চীনের পানি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি আঞ্চলিক পানি ফোরাম গঠন করা যেতে পারে। পানি বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে। এই নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আগামী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ ও বাসযোগ্য বাংলাদেশ বিনির্মানে এখনই সরকারী পদক্ষেপ গ্রহন করা প্রয়োজন।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন