চন্দন রহমানের খোঁচা…

  22-02-2017 04:07PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : চন্দন রহমানকে চিনি একজন সাংবাদিক হিসেবে। তিনি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের সদস্য। বছর কয়েক আগে তিনি বিডিপ্রেসডটনেট নামের একটি নিউজ পোর্টালের সম্পাদনা শুরু করেন। অফিস নিয়েছেন গুলশানের নিকেতেনে।

বেশ পরিপাটি ও গোছানো বিডিপ্রেসডটনেটের অফিস। উদ্যোগ নিয়ে ডিইউজের ইউনিটও করেছেন ইতিমধ্যে। গত বছর গুরুত্বর অসুস্থ হন। যার দকল এখনো সামলে উঠা সম্ভব হয়নি, ফলে লাঠি ভর করে হাঁটছেন। লাঠি কিন্তু তাকে বেশ মানিয়েছে। তার পরও সদা হাস্য সুঠাম দেহের অধিকারী চন্দন রহমান অচিরেই লাঠিমুক্ত হবেন, সে প্রত্যাশা তার সৃহৃদদের।

লাঠির কথা যখন এল, তখন সম্প্রতি লাঠি নেয়া অন্যরা বাদ যাবেন কেন? জাতীয় প্রেস ক্লাব নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ঘরানার সভাপতি প্রার্থী (বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব) এম এ আজিজ পা মচকে লাঠি হাতে তুলে নেন। হালে লাঠি নিয়েছেন ডিইউজের সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার। তার পোশাকী বৈচিত্র্যের মতো লাঠিটিও দেখায় বেশ!

আবার লাঠি হাতে না থাকলেও টাঙ্গাইলে একজন এমপিকে আচ্ছামতো সাইজ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। লাঠি হাতে থাকার পরও উল্লিখিত তিন সাংবাদিক কিন্তু ঘূণাক্ষরেও এ কাজটি করেননি। অনেকের মতে, সাংবাদিকতা পেশায় আজও যুক্ত থাকলে তার দ্বারা এমনটা করা সম্ভব হতো না।

ধানভানতে শীবের গীতের মতো অবস্থা অনেকটা হলো বৈকি। এবার আসল কথায় ফিরে যাওয়া যাক। আমার জানামতে, চন্দন রহমান একসময় ছাত্র রাজনীতি করতেন। যুক্ত ছিলেন সংস্কৃতি আন্দোলনের সঙ্গে। কবে ছড়াকার হলেন, তা মোটেও জানা ছিল না। ‘খোঁচা’ নামের অনন্যসাধারণ ছড়ার গ্রন্থটি তাকে নতুন করে পরিচিতি দিল পরিচিত জন, পাঠক ও বন্ধুমহলে।

নামটির মুন্সিয়ানা, দৃষ্টিনন্দন কাভার এবং প্রতিটি ছড়ার পর এক পৃষ্ঠার কার্টুন পুস্তকটিতে ব্যতিক্রমী করে তুলেছে। লাবণী প্রকাশনকে অন্যন্য প্রকাশনা বললে খুব বেশি বলা হবে না। জাতীয়তাবাদী ঘরানায় এমন প্রকাশনা থাকতে পারে আর এ ঘরানায় ছড়ায় ছড়ায় খোঁচা মারার লোকজন এখনো যে আছে, পুস্তিকাটির সদর্প পদারপণ তা স্পষ্টভাবে জানান দিল বৈকি।

সময়ের প্রয়োজনে যুগে যুগে অনেক ছড়া কালের সাক্ষী হয়ে আছে। ‘খোঁচা’ গ্রন্থটিও ওই রকম হতে পারে, যদি পাঠকের হাতে-কাছে পৌঁছানো যায়। এটির ছড়ার আবেদন সার্বজনিন। সমাজের নানা অসঙ্গতি দূরকরণে লেখক সচেষ্ট ছিলেন বলে মনে হয়। রাজনীতি, বর্তমান সমাজ-সংস্কৃতি ও সামাজিক অবক্ষয়, রাজকোষ লুণ্ঠন থেকে শুরু করে অপ-রাজনীতির ধারকরাও বাদ যাননি তার ‘খোঁচা’র বহুরূপী মুন্সিয়ানা থেকে।

২০ ফেব্রুয়ারি সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রধান অতিথি হিসেবে বইটির মোড়ক উন্মুচন করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজবী আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে সেখানে থাকার সুবাদে বইটি সম্পর্কে জানা সহজ হয়। আমাদের মাঝে সাদা মনের একজন মানুষ হিসেবে পরিচিত চন্দন রহমান এমন চমকপ্রদ এমন ব্যতিক্রম কিছু যে করতে পারেন, বইটি হাতে পাওয়ার আগে কখনো মনে হয়নি।

মানুষ ইচ্ছে করলে কি না পারে, চন্দন রহমান এবং তার ‘খোঁচা’ গ্রন্থটি তার অন্যতম দৃষ্টান্ত। যার যার অবস্থান থেকে এমন সৃষ্টিশীল কাজ এবং সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে থাকা অসঙ্গতিগুলো দূর করতে বাধা কোথায়। বইটি যত পাঠক পড়বে, ততই ক্ষমতাসীনদের পাশাপাশি বিএনপিতে পদ নিয়ে রাজপথে না-নামা ঘাঁপটি মেরে থাকা মিরজাফরের যোগ্য উত্তরসূরিদের খুঁচিয়ে সঠিক পথে আনা সহজ হবে।

খোঁচা শব্দের অর্থ তীক্ষ্ণ, ধারালো, বস্তুর আঘাত, কোনোকিছুর আগা দিয়ে আঘাত, কথার খোঁচা, খোঁচার আরেক অর্থ আঁচড়ও; যাকে বলা হয় কলমের খোঁচা। পরের দুটি শব্দ মূলত চন্দন রহমান বেছে নিয়েছেন বলে মনে হয়। তার এই বইটি সমাজকে নাড়া দেয়ার উপাদানে ঠাসা। এত এত সমস্যাসঙ্কুল অবস্থায়ও যেখানে আছে আশা, প্রত্যাশা ও আলোর দিশাও। যেমন তিনি লিখেছেন- ‘কলমের খোঁচায়/ছড়ার মাঝে/অসঙ্গতির ছবি,/চারপাশের সব/অনিয়ম ভেঙ্গে/ছড়াবে আলো রবি।/প্রত্যাশাটা খুব বেশি নয়/খোঁচায় যদি কাজটুকু হয়।’ সদা শুভ কামনায় বিশ্বাসীদের আশা, চন্দন রহমানের প্রত্যাশার শুভফল হতাশায় নিমজ্জিত দেশবাসীর কাছে অচিরেই ধরা দেবে।


লেখক : সাধারণ সম্পাদক- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন
ই-মেইল : [email protected]



@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন