ব্যাপকহারে বাংলাদেশী ধরপাকড় শুরু করেছে বিভিন্ন দেশে

  23-02-2017 09:30AM


পিএনএস ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্য ও আশিয়ানভুক্ত দেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করা অবৈধ বাংলাদেশীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে সেসব দেশের পুলিশ ও ইমিগ্রেশন বিভাগ। তবে সবচেয়ে বেশি ধরপাকড় চলছে মালয়েশিয়া, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে। সর্বশেষ গত বুধবার মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের কেএলসিসি, পাসার সেনি, সানওয়ে পিরামিড এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৮৪ বাংলাদেশীসহ ২৫৯ জন অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতার করে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ।

প্রতিদিনই এ অভিযান চলছে। আর এসব অভিযানে ধরা পড়া অবৈধদের মধ্যে অনেকেই দালালদের মাধ্যমে হাইকমিশন থেকে ট্রাভেল ও আউট পাস সংগ্রহ করে দেশে ফিরছেন। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী ও তাদের স্বজনদের। এরপরও দেশটির বিভিন্ন কারাগার, কেএলআই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন ক্যাম্প ও ১৩ ডিটেনশন ক্যাম্পে শত শত অবৈধ বাংলাদেশী আটকে থেকে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সম্প্রতি কেলাং এলাকায় মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশ অভিযান চালিয়ে দুই লরি ভর্তি অবৈধ অভিবাসীকে আটক করে বলে জানা গেছে। আকাশ নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, এদের বেশির ভাগই বাংলাদেশী। তাদের সবার ঠাঁই হয়েছে শাহ আলমের ইমিগ্রেশন সেন্টারে।

এ প্রসঙ্গে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের লেবার কাউন্সিলর (শ্রম) মো: সায়েদুল ইসলাম বলেন, মালয়েশিয়ার কারাগারে যেসব বাংলাদেশী আটক হওয়ার খবর পাচ্ছি সাথে সাথে হাইকমিশন থেকে আমিসহ তিন কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট ক্যাম্প ও কারাগার ভিজিট করছি এবং তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছি। কারণ বাংলাদেশী হিসেবে অনেকে গ্রেফতার হলেও পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তারা বাংলাদেশী নন। তিনি জানান, অবৈধভাবে যারা আসছেন তারাই এ দেশে পুলিশের হাতে বেশি ধরা পড়ছেন। তারপরও আমরা রুটিন মোতাবেক যারা কারাগারে আটক আছেন তাদের সর্বশেষ তথ্য জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।

এ প্রসঙ্গে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ থেকে অবৈধ লোক আসার কারণে আমরা এখানে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছি। তার মতে, টুরিস্ট ও ভিজিট ভিসার নামে এ দেশে লোক আসা অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের ইমিগ্রেশনকে আরো কঠোর হতে হবে। তিনি বলেন, অবৈধ লোক আসা বেড়ে যাওয়ায় এখানে বৈধভাবে আসা পর্যটকরা প্রতিদিনই বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনে হয়রানি হচ্ছেন। পরে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাকে গিয়ে তাদের ব্যাপারে সুপারিশ করতে হচ্ছে। তবে তিনি দাবি করেন, এখন আগের মতো আমাদের হাইকমিশনের পরিস্থিতি নেই। অনেক পরিবর্তন এসেছে। তাই বলতে পারি এ দেশে শ্রমিকদের আর কষ্ট থাকবে না। তবে এক দিনে সব পরিবর্তন সম্ভব না, সময় লাগবে। পুলিশি অভিযানে ধরা পড়ে ডিটেনশন ক্যাম্প ও কারাগারে কতজন বাংলাদেশী আটক আছেন সেই পরিসংখ্যান তিনি তাৎক্ষণিক জানাতে পারেননি।

শুধু মালয়েশিয়ায় নয়, হঠাৎ করে মধ্যপ্রাচ্যের সর্ববৃহৎ শ্রমবাজার সৌদি আরবের রিয়াদ ও জেদ্দা এবং কাতার ও পাঁচ বছর ধরে বন্ধ হয় থাকা আরেক বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও শারজাহ এলাকায় অবৈধ শ্রমিক আটক অভিযানের খবর পাওয়া গেছে।

গতকাল বুধবার প্রবাসী বাংলাদেশী রুহুল আমিন মিন্টু বলেন, জানি না কী কারণে হঠাৎ করেই সৌদি আরবে অবৈধ শ্রমিক ধরপাকড় অভিযান শুরু হয়েছে। কখনো কখনো বৈধ শ্রমিকেরাও আটক হয়ে হয়রানি হচ্ছেন। অভিযান বেশি হচ্ছে রিয়াদ ও জেদ্দায়। এর মধ্যে জেদ্দায় যারা আটক হচ্ছেন তাদের পারহিল ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হচ্ছে। কী কারণে শ্রমিক ধরপাকড় চলছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে সার্ভার বন্ধ, আকামা রিনিউ হচ্ছে না। এসব কারণে হয়তো পুলিশ ধরপাকড় চালাচ্ছে।

তবে অপর প্রবাসী শামীম জানান, দেশটির সরকার গত ১৫ জানুয়ারি থেকে অবৈধ শ্রমিক আটক অভিযান শুরুর পাশাপাশি সাধারণ ক্ষমার আওতায় আবার তাদেরকে সেখানেই কাজ করার সুযোগ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে এর জন্য বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, আগে এ সুযোগ ছিল তিন ধাপে। কিন্তু গত ১৫ জানুয়ারি থেকে তা দ্বিতীয় ধাপে শুরু হয়েছে, যা চলবে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত। যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ তাদের জন্যও এবার সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগের আওতায় কোনো ব্যক্তি নিজে থেকে ধরা দিলে তাকে দেশে ফেরত না-ও পাঠানো হতে পারে। এমনও হতে পারে জেল-জরিমানা দিয়ে সৌদি আরবেই আবার তাকে কাজের সুযোগ দেয়া হতে পারে।

এ দিকে মালয়েশিয়া, সৌদি আরবের মতো কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন শহরে চলছে অবৈধ বিদেশী শ্রমিক পাকড়াও অভিযান। দুবাই থেকে প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ী সেলিমউদ্দিন গতকাল বলেন, দুবাই, শারজাহ, আবুধাবিসহ বিভিন্ন এলাকায় সিআইডি পুলিশ ও ইমিগ্রেশন অবৈধ বিদেশী শ্রমিক আটক অভিযান চালাচ্ছে। এতে অবৈধ শ্রমিকরা ধরা পড়ছে। তবে পরে তাদের ভাগ্যে কী ঘটছে তা আর তারা জানতে পারছেন না। তার মতে, দুবাইয়ে অনেক বাংলাদেশী অবৈধভাবে বসবাস করছে। মূলত তাদের কারণেই দেশটিতে অপরাধ বেশি হচ্ছে বলে এখানকার প্রশাসন মনে করছে। সম্প্রতি দেশটির শীর্ষ একটি পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে উল্লেখ করা হয়েছিল, দুবাইসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ, সিআইডি ও ইমিগ্রেশন সাত হাজার অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশীর সংখ্যাই বেশি।

গতকাল সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানের সাথে যোগাযোগ করে অবৈধ বাংলাদেশী শ্রমিক ধরপাকড় হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে তো ধরপাকড় বলতে যে বিষয়টা বোঝায়, সেটা তো নেই। কারণ এখানে তো কেউ অবৈধভাবে থাকতে পারেন না। ছোট্ট দেশ। এখানে অবৈধভাবে থাকার কোনো সুযোগ নেই, কারণ এখানে থাকতে হলে তার স্পন্সর থাকতে হবে। দুবাইতে শ্রমিক ধরপাকড় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কারো ভিসা যদি উত্তীর্ণ হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে এখানকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখে থাকে। কিন্তু কোনো ক্যাম্পেইন হিসেবে ধরপাকড় হচ্ছে, এ রকম তথ্য আমাদের কাছে নেই।

এ দিকে কাতার থেকে একাধিক প্রবাসী এ প্রতিবেদককে বলেন, কাতার সরকারের দেয়া সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দেশটির পুলিশ ও ইমিগ্রেশন বিভাগ অবৈধ বিদেশী শ্রমিক গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেছে। তার আগে সাড়ে তিন হাজারের মতো অবৈধ বাংলাদেশী ট্রাভেল পাসে দেশ ত্যাগ করেন। সর্বশেষ পুলিশের অভিযানে ১২০ জন বাংলাদেশী শ্রমিক আটক হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। এদের মধ্যে ৭০ জনের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ের অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দূতাবাসের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ কমিউনিটির উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর ড. সিরাজুল ইসলাম বলেন, কাতারে বাংলাদেশী মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। হাতেগোনা কিছু বাংলাদেশী মাদকসেবীর কারণে তিন লাখ বাংলাদেশীর তি হয়ে যাবে এটা কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। কাতারে বর্তমানে সাড়ে তিন লাখ শ্রমিক কর্মরত আছেন। ২০২২ সালে কাতার ফুটবল বিশ্বকাপের আগে আরো তিন লাখ বাংলাদেশী আসবে। এ সুযোগ যাতে হাত ছাড়া না হয় সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন