পিলখানা ট্র্যাজেডির ৮ বছর

  25-02-2017 10:18AM

পিএনএস ডেস্ক: আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি। ইতিহাসের নারকীয় পিলখানা হত্যাযজ্ঞের আট বছর পূর্ণ হলো। আট বছর আগে এদিন সকালে ঢাকাবাসীর ঘুম ভাঙে গুলির শব্দে। প্রকম্পিত হয়ে ওঠে ঢাকা শহর। বিপথগামী বিডিআর সদস্যরা ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। সেই ঘটনায় স্বজনহারাদের কান্না আজও থামেনি, শুকায়নি হৃদয়ের ক্ষত। দুঃসহ সেই দিনের স্মৃতি তাড়া করে ফেরে মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে আসা কর্মকর্তা ও স্বজনদের। সেই দুঃসময় কাটিয়ে ফের ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিজিবি। সাফল্যের সঙ্গে কাজও করে যাচ্ছে।

বিদ্রোহের পর বিডিআর, আইন, নাম, পোশাক, পতাকা ও মনোগ্রামসহ অনেক কিছুতেই পরিবর্তন আনা হয়। তবে আট বছরেও এ মামলার কার্যক্রম পুরোপুরি শেষ হয়নি। নিম্নআদালতে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলা চলছে। ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিলের ওপরে হাইকোর্টে শুনানি হচ্ছে। পিলখানা হত্যামামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ১৫২ আসামির মৃত্যুদ-ের অনুমোদন ও আসামিদের আপিলের ওপর শুনানি ২ এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি করেছেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষ শুনানির জন্য এক মাস সময়ের আবেদন করলে বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার। পিলখানা হত্যামামলায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানির জন্য এই বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করা হয়।

২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকার অস্থায়ী মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আকতারুজ্জামান এ হত্যা মামলার রায় দেন। এতে ১৫২ জনকে ফাঁসিসহ অন্য আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে দ- দেওয়া হয়। ২৭১ জন খালাস পান। মামলাটি পরে ডেথ রেফারেন্স হিসেবে হাইকোর্টে আসে। এ ছাড়া আসামিরা আপিল ও জেল আপিলও করেন। হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিলের শুনানি একসঙ্গে হচ্ছে। অন্যদিকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক মামলার বিচারকাজ বিশেষ ট্রাইব্যুনালে চলছে। যার আসামি ৮৩৪ জন। তাদের মধ্যে ৫ জন মারা গেছেন। বাকি ২০ জন এখনো পলাতক।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ বলেন, পিলখানার ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যামামলা ইতোমধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে। বিস্ফোরক মামলাটিও ইতোমধ্যে নিষ্পত্তি হওয়ার কথা থাকলেও আসামিপক্ষের সময় আবেদনের পরিপেক্ষিতে তা হয়নি। আমরা আশাবাদী, শিগগিরই এ মামলার বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।

বিজিবি জানিয়েছে, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় অভিযুক্তসহ ১৭ হাজার ৩১১ (বিডিআর সদস্য ও বেসামরিক ব্যক্তি) জনকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। তাদের মধ্যে ৬ হাজার ৪১ জনকে বিশেষ আদালত ও ১১ হাজার ২৬৫ জনকে অধিনায়ক সামারি কোর্টের মাধ্যমে বিচার করা হয়। আসামিদের মধ্যে ৯ হাজার ১৯ জনকে বিভিন্ন সাজাসহ চাকরিচ্যুত করা হয়। বাকি ৮ হাজার ২৮৭ জন সরাসরি বিদ্রোহে সম্পৃক্ত না থাকায় তাদের লঘুদ- (তীব্র ভর্ৎসনা, বেতন কর্তন, ডিমোশন ইত্যাদি) দিয়ে চাকরিতে বহাল রাখা হয়েছে। আর হত্যামামলায় অভিযুক্ত ৮৫০ জনের মধ্যে ১৫২ জনকে ফাঁসি, ২৬০ জনকে যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় বিডিআরের জওয়ানরা ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। সেদিন পিলখানার এই বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশের ৫৭টি ইউনিটে। টানা একদিন এক রাত শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে আসে। এ হত্যাকা-ে দুভাবে বিচার করা হয়। একটি হলো বাহিনীর নিজস্ব আইনে, অন্যটি ফৌজদারি আইনে।

বিজিবি সূত্র জানিয়েছে, পিলখানায় সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকা-ে শহীদ ব্যক্তিবর্গের স্মরণে শাহাদাতবার্ষিকী পালিত হবে। দিনের কর্মসূচি অনুযায়ী শহীদ ব্যক্তিবর্গের রুহের মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে পিলখানাসহ বিজিবির সব রিজিয়ন, সেক্টর, প্রতিষ্ঠান ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় বাদ ফজর খতমে কোরআন এবং বিজিবির সব মসজিদে এবং বিওপি পর্যায়ে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় আজ সকাল ৯টায় বনানী সামরিক কবরস্থানে শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে¢ পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধানগণ (সম্মিলিতভাবে), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং বিজিবি মহাপরিচালক (একত্রে)।

এ ছাড়া আগামীকাল রোববার বাদ আসর বিকাল পৌনে ৫টায় পিলখানার বীরউত্তম ফজলুর রহমান খন্দকার মিলনায়তনে শহীদ ব্যক্তিবর্গের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ওই দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিজিবি মহাপরিচালক, শহীদ ব্যক্তিবর্গের নিকটাত্মীয়, পিলখানায় কর্মরত সব অফিসার, জেসিও, অন্যান্য পদবির সৈনিক এবং বেসামরিক কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করবেন।

তৎকালীন বিডিআরের ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছোটভাই শফিক আহমেদ জানান, ‘এখন দোয়া করা ছাড়া তো আমাদের আর কিছু করার নেই। শনিবার সকালে বনানী কবরস্থানে ভাইয়ের (শাকিল আহমেদ) ছেলে-মেয়েরা যাবে। বাবার জন্য দোয়া করবে তারা।’


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন