উত্তেজিত বদরুল বললেন 'সুখী হও খাদিজা, আমার ফাঁসি হোক'

  26-02-2017 05:49PM

পিএনএস ডেস্ক: রবিবার বেলা ১১টা ৫০ মিনিট। তখন প্রিজন ভ্যানে করে সিলেট আদালতে নিয়ে আসা হয় ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলমকে। আজ ছিল তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত কলেজ ছাত্রী খাদিজা হত্যাচেষ্টা মামলায় ‘খাদিজা’র সাক্ষ্যগ্রহণের দিন। ফলে সকাল থেকেই আদালতপাড়ায় ভিড় করেন উৎসুক জনতা। বিশেষত, আলোচিত ওই ঘটনার ভিলেন আর ভিকটিমকে একত্রে দেখতেই মানুষের উৎসাহ একটু বেশিই ছিল।

বদরুলকে আদালতে হাজির করার ঠিক আট মিনিট পর পরিবারের সদস্যদের সাথে আদালতে আসেন খাদিজা বেগম নার্গিস। দুপুর ১২টার দিকে তিনি প্রবেশ করেন এজলাস কক্ষে। তখনই শুরু হয় আদালতের কার্যক্রম। বিচারকের সামনে বদরুলকে সনাক্ত করে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে থাকেন খাদিজা। ঠিক তখনই ‘কিছু বলতে চাই’ বলে চিৎকার করে ওঠেন বদরুল।

উত্তেজিত বদরুল বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকেন, ‘আমি কিছু বলতে চাই। আমাকে একটা সুযোগ দিন। আমি সত্য কথা বলবো। আমি একজন শিক্ষক ছিলাম, আমি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক।’

এসময় বদরুলকে সতর্ক করে দেন আদালতের বিচারক সাইফুজ্জামান হিরো। বিচারক বলেন, ‘আদালত বক্তৃতা দেয়ার জায়গা নয়।’ বিচারকের কাছ থেকে অনুমতি না পেয়ে কাঠগড়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েন বদরুল।

সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিচারক মামলার যুক্তিতর্কের তারিখ আগামী ১ মার্চ ধার্য করেন। ওই সময় ফের উত্তেজিত বদরুল চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘তুমি সুখী হও, খাদিজা। বিচারক আল্লাহ আছেন। আমার ফাঁসি হোক। তুমি আমার পরিবারকে পথে বসিয়েছ; মিথ্যাবাদী।’

এসময় বদরুলের আইনজীবী ও উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা তাকে নিবৃত্ত করে এজলাস থেকে বের করে নিয়ে যান। উল্লেখ্য, এর আগেও একবার আদালত প্রাঙ্গণে চিৎকার করে নিজের ফাঁসি দাবি করেছিল বদরুল।

আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আজ (রবিবার) সিলেট মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরোর আদলতে খাদিজার সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। খাদিজা হত্যাচেষ্টা মামলায় মোট ৩৩ সাক্ষির মধ্যে ৩২জন আগেই সাক্ষ্য দিয়েছেন। আজ খাদিজার সাক্ষ্য নেয়ার মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলো।’

গত বছরের ৩ অক্টোবর এমসি কলেজের পুকুরপাড়ে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী খাদিজা বেগম নার্গিসকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অনিয়মিত ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলম। ঘটনার পরপরই শিক্ষার্থীরা বদরুলকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

এ ঘটনায় খাদিজার চাচা আবদুল কুদ্দুস বাদী হয়ে বদরুলকে একমাত্র আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ৫ অক্টোবর বদরুল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পরে তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন আদালত। এছাড়ার ঘটনার পর শাবি থেকে চিরতরে বহিষ্কার করা হয় বদরুলকে।

শাবি ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলমের চাপাতির কোপে গুরুতর আহত হওয়া খাদিজাকে প্রথমে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর ২৮ নভেম্বর সাভারে সিআরপিতে ভর্তি করা হয় খাদিজাকে। প্রায় তিন মাস সেখানে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত শুক্রবার সুস্থ হয়ে সিলেটে নিজের বাড়িতে ফিরেছেন খাদিজা। মাঝে এক ফেব্রুয়ারি সপ্তাহখানেকের জন্য বাড়ি থেকে ঘুরে যান তিনি।


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন