সরকার ও সংসদে যখন ব্যবসায়ীর আধিক্য…

  27-02-2017 07:57PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : সরকার জনগণের হয়ে কাজ করে। সাধারণ মানুষের কল্যাণে নিবেদিত থাকে সরকার। জনসাধারণের সুবিধাকে অগ্রাধিকার দিযে কাজ করা যাদের মূল দায়িত্ব ও কর্তব্য, তাকে বলা হয় জনগণের সরকার। একটি অতি পরিচিত কথা।

আজকে যারা ক্ষমতায় আছে, যেভাবেই থাক না কেন; সাধারণ মানুষের ভালো-মন্দসহ সব দেখার দায়িত্ব তাদেরই। জনগণের হয়ে কাজ করার দায়িত্বও যাদের ওপর বর্তায়। সে দায় থেকে না হোক বিবেকের দায় থেকে হলেও তাদের জনগণের সুখ-সুবিধাকে অগ্রাধিকার দেয়া জরুরি।

জন-গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা ব্যাপক। যে কারণে সরকার গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণে সব সময় সচেষ্ট থাকে। সর্বোচ্চ সতর্ক থাকে সাধারণ মানুষের স্বার্থের প্রতিকূলে কিছু যেন না ঘটে বা হয়। আর সেটা করাই যেকোনো জনবান্ধব সরকারের অন্যতম কাজ।

আজকে জনগণের সরকার বলতে অনেকের বাধে। একদিকে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন, অন্যদিকে জনগণের স্বার্থের পরিপন্থী কাজের ব্যাপ্তি এ অবস্থায় নিয়ে গেছে। সাধারণ মানুষের কল্যাণের কথা কেবল মুখেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে মাঠে-ময়দানে কার্যক্রমে সেটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

কিসে মানুষের কল্যাণ, সেটা বোঝার মতো প্রাজ্ঞ লোক ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষে কম নেই। অবাক করা কাণ্ড হলো, তার পরও জনস্বার্থবিরোধী অনেক কাজ হয়ে যাচ্ছে। সব সরকারের সময়ই গণবিরোধী এসব কাজ নিয়ে একটি মহল নয়-ছয় বুঝিয়ে সরকার ও জনগণের বারোটা বাজায়।

যে সরকার জনগণের স্বার্থ বোঝে, তারা মহলবিশেষের ফাঁদে পা দেয় না। পা দেয় না সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ ও আগ্রাসী প্রতিষ্ঠানগুলোর কথায়। সর্বোপরি মোটেও সায় দেয় না, সুবিধাবাদী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের মতো পরীক্ষিত গণবিধ্বংসী প্রেসক্রিপশনে।

আজ মানুষ নানা কারণে হতাশ। ব্যবসায় মন্দা ভাব। হাউজিং ব্যবসায় শনিরদশা কাটছে না। দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা আধা পাগল। লবণের কেজি ৪২ টাকা, ভাবা যায়! মগের মুল্লুকেও তা কি সম্ভব? যে কারণে বাজারে গিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষ নিজের মাথার চুল ছিঁড়ছে।

বর্তমান ক্ষমতাসীনরা গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে বেশ কয়েকবার। একচুলা ২৫০ টাকার বদলে ৯০০ টাকা আর দুই চুলা ৪৫০ টাকা থেকে ৯৫০ টাকা করার হীন চেষ্টা চলছে। চক্রবৃদ্ধি হারে গ্যাসের এই মূল্যবৃদ্ধিকে জনস্বার্থের পরিপন্থী হিসেবে মনে করছেন এই খাতের নীতিবান বিশেষজ্ঞরা।

কারণ ও অজুহাত হিসেবে যা দাঁড় করানো হোক না কেন, গ্রাহক ও অভিজ্ঞজনরা মনে করেন এটা একটি চিহ্নিত মহলকে সুবিধা দেয়ার জন্য করা হচ্ছে। গ্যাস সিন্ডিকেট এর অনৈতিক সুবিধা নেবে। সুযোগ নেবে আমদানিকারক এবং মজুদকারীরা। আর মাসুল দেবে সাধারণ গ্রাহকসহ ভোক্তারা।

গ্যাসের দাম বাড়লে এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়বে গাড়ি ভাড়াসহ হোটেলের খাদ্যের দাম। বাড়বে আরো অনেক কিছুর খরচ, যা তোলা হবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। একটি দ্রব্যের দাম বাড়লে এর বহুমুখী কুফল ভোগ করে সাধারণ মানুষ।

আজকে অসৎ উপায়ে অনেকের শরীরে মেদভূড়ি বেড়েছে, বেড়েছে অর্থ, বিত্ত ও বৈভব। এমনটা গুটি কয়েকের। দুদক তথ্য নিলে যাদের চৌদ্দশিকে থাকার কথা। নব্য এই কোটিপতিদের অর্থের সূত্র খোঁজা সময়ের দাবি। রা্ষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠনকারী এই চক্রের কাছে জিনিসপত্রের দাম বাড়া কোনো ব্যাপারই না। যত সমস্যা নুন আনতে পান্তা পোরানো আমজনতার।

এ খাতের বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের দুর্ভোগ না বাড়িয়ে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের দালালদের কথায় কান না দিয়ে বরং গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম কমাবে ক্ষমতাসীনরা। সরকারের কাজ জনসেবা, কখনো ব্যবসা নয়। বারবার মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি সামনে চলে আসায় জনমনে ভীতি সৃষ্টি হয়েছে যে, সংসদে ও সরকারে ব্যবসায়ীর সংখ্যা বৃদ্ধিই এর মূল কারণ।

অযৌক্তি ওই গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে দেশপ্রেমিক শক্তি ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে আধাবেলা হরতালের ডাক দেয়। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশন মেনে চলা রাজপথের কথিত প্রধান বিরোধী দলগুলো এখানে নেই। সময়োপযোগী কর্মসূচি দিতে তারা বারবার ব্যর্থ হওয়ায় ক্ষমতাসীনরা জনস্বার্থকে থোড়াই কেয়ার করছে। ফলে জনগণের দুর্ভোগ অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।


লেখক : সাধারণ সম্পাদক- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন
ই-মেইল : [email protected]

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন