সড়ক দুর্ঘটনা : যতখুশি ততো মানুষ মার

  01-03-2017 09:26AM


পিএনএস, এবিসিদ্দিক: সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ আহত বা নিহত হলে চালক কিংবা দায়ী ব্যক্তির কী ধরনের শাস্তি হবে, সে-সম্পর্কিত কোনো বিধান না রেখেই সড়ক পরিবহন আইনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। আইনে সড়ক দুর্ঘটনা কী ধরনের অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে, তা-ও বলা হয়নি। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বলছে, ফৌজদারি দন্ডবিধিতে বিষয়টি থাকায় আইনে আর আলাদা করে যুক্ত করা হয়নি। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারীরা খসড়া আইনটিকে ‘দুর্বল’ মনে করছেন।

তবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এমন আইন করা যাবে, যাতে দোষী মালিক ও চালক উভয়েরই শাস্তি হবে। বতর্মানে যে খসড়াটি রয়েছে, তা চূড়ান্ত করার সময় প্রয়োজনীয় সব বিষয় যুক্ত করা হবে। খসড়া আইনে বলা হয়েছে, ১৮ বছরের নিচে কেউ গাড়ি চালাতে পারবে না। জেব্রা ক্রসিং বা ফুটওভারব্রিজ ছাড়া পারাপার করলে দুই হাজার টাকা অর্থদন্ড হবে। নীরব এলাকা অতিক্রমের সময় হর্ন বাজালে বা উচ্চমাত্রার কোনো শব্দ করলে এক মাসের কারাদন্ড বা এক হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ড হবে। নিয়োগপত্র ছাড়া মোটরযানের চালক হলে বা রাখলে এক বছরের কারাদন্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড হবে। আইনে চালকদের জন্য কর্মঘণ্টা ও বিশ্রামের কথাও বলা হয়েছে। খসড়া সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৬ গত ২৪ জানুয়ারি ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। কাল ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই আইন নিয়ে মতামত দেওয়া যাবে। ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৫-এর খসড়ায় মোটরযান চালিয়ে অপর ব্যক্তির মৃত্যু ঘটালে তিন থেকে সাত বছর পর্যন্ত শাস্তির বিধান ছিল। এ ছাড়া নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীকে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং চালকের দোষসূচক পয়েন্ট কাটার প্রস্তাবও করা হয়েছিল। আর কেউ আহত করলে পাঁচ বছর পর্যন্ত জেল এবং আহত ব্যক্তিকে এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের বিধান ছিল। তবে নতুন আইনে এগুলো নেই। অভিযোগ উঠেছে, গাড়ির মালিক ও চালকদের চাপে এগুলো বাদ পড়েছে।

এর আগে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গাড়িচালকদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৩০২ ধারায় মামলা না করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ৩০২ ধারায় সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ড। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ নিহত হলে মামলা হবে ৩০৪(খ) ধারায়। এই ধারায় সর্বোচ্চ সাজা তিন বছরের কারাদন্ড। ২০১১ সালে ‘সড়ক পরিবহন ও ট্রাফিক আইন’ নামে খসড়ায় ২২টি অধ্যায় ও ৩৭২টি ধারা ছিল। ২০১৩ সালে গঠিত কমিটি তা কমিয়ে ১৫ অধ্যায় ও ২৪২টি ধারায় চূড়ান্ত করে। ২০১৫ সালের খসড়ায় ২২টি অধ্যায় ও ৩৭২টি ধারা ছিল। তবে সর্বশেষ খসড়ায় আইনটিকে ১৩টি অধ্যায় ও ৬৩ ধারায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
আইনের তফসিলে যে ৩১টি অপরাধ উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে ড্রাইভিং লাইসেন্স জালিয়াতি নিয়ে।

এতে বলা হয়েছে, নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ বাদে অন্য কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রস্তুত বা সংরক্ষণ করলে পাঁচ বছরের কারাদন্ড বা দুই লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ড হবে। আর ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কেউ গাড়ি চালালে ছয় মাসের কারাদন্ড হবে। আগের মতো এই আইনেও আছে, লাইসেন্স ছাড়া যানবাহন চালানো নিষিদ্ধ। ১৮ বছর না হলে কেউ লাইসেন্স পাবেন না। তবে ভারী যানবাহন চালানোর ন্যূনতম বয়স ২১ বছর। আর পেশাদার চালকের ক্ষেত্রে ৬০ এবং অপেশাদার চালকের ক্ষেত্রে ৬৫ বছরের অধিক বয়সী ব্যক্তি লাইসেন্স নিতে পারবেন না। লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বয়স নির্ধারণ করা হলেও শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।

গণপরিবহনে লাইসেন্স ছাড়া কন্ডাক্টর হলে বা নিয়োগ করলে তিন মাসের জেল বা তিন হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড। ট্রাফিক আইন বা সংকেত না মানলে অনধিক ছয় মাসের কারাদন্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড হবে। কোনো মোটরযান অতিরিক্ত ওজন বহন করলে অনধিক এক বছরের কারাদন্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হবে। নির্ধারিত এলাকা ছাড়া অন্য কোথাও গাড়ি পার্ক খসড়ার ৪২ ধারায় মোটরযান চলাচলের জন্য ১০টি সাধারণ নির্দেশাবলি রয়েছে। কেউ মদ্যপান বা নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করে গাড়ি চালাতে পারবেন না। সিটবেল্ট বাঁধা ছাড়া গাড়ি চালানো যাবে না। আইনের ৪৯ ধারায় বলা হয়েছে, সব অপরাধই জামিনযোগ্য ও আপসযোগ্য।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন