ধর্মঘটে অচল দেশ

  01-03-2017 12:04PM


পিএনএস: আনুষ্ঠানিক পূর্বঘোষণা ছাড়াই গতকাল মঙ্গলবার থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে অনির্দিষ্টকাল সড়ক পরিবহন ধর্মঘট শুরু করেছে পরিবহন শ্রমিকরা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে যাত্রীরা।

বাস শ্রমিকরা তাদের বাস না চালানোর পাশাপাশি লাঠিসোঁটা নিয়ে অন্যান্য গণপরিবহন চলতেও বাধা দেয়। তারা কোথাও ভাঙচুর করে, কোথাও অন্য পরিবহনের চালকদেরও মারধর করে। এ কারণে ট্রাক, পিকআপসহ পণ্যবাহী যান চলাচলও বন্ধ ছিল।

অন্যান্য যান চলাচলেও বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে রাজধানীর গাবতলীর আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের সামনে গতকাল রাতে পুলিশের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। শত শত যুবক লাঠিসোঁটা নিয়ে কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে সড়ক অবরোধ করে। পুলিশ বাধা দিতে গেলে ধাওয়া-পল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ বেধে যায়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায় এবং পুলিশের বক্স ও রেকারে আগুন ধরিয়ে দেয়। সংঘর্ষে তিন পুলিশ সদস্যসহ আহত হয়েছে অন্তত ২০ জন।

রাত পৌনে ১টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় গাবতলীতে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। বিক্ষোভকারীদের সরাতে পুলিশ-র্যাব অভিযানে নামলে ফের পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদনে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।

দিনভর সড়কে বাধা পেয়ে নিরুপায় যাত্রীরা ভিড় করে রেল ও নৌপরিবহনে। কিন্তু স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনেকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে যাত্রা বাতিল করে। তবে বাড়ি ফিরতেও ভুগতে হয়েছে তাদের।

এর মধ্যে গতকাল বিকেলে রাজধানীর গাবতলীতে এক সমাবেশে বাংলাদেশ আন্ত জেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন, ‘সংবাদপত্র, অ্যাম্বুল্যান্সের মতো জরুরি গাড়ি ছাড়া রাস্তায় কোনো গাড়ি চলবে না, চালাতে দেব না। আমরা দণ্ডিত শ্রমিকদের জেল থেকে বের করে আনব। আমাদের দাবিদাওয়া মেনে নিলে শ্রমিকরা গাড়ি চালাবেন। ’

সমাবেশে বাংলাদেশ আন্ত জেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী বলেন, ‘যাবজ্জীবন আর ফাঁসির দায় মাথায় নিয়ে আমরা গাড়ি চালাতে পারব না। যতক্ষণ না আইন বাতিল ও দণ্ডিত চালকদের মুক্তি না দেওয়া হবে, ততক্ষণ এ আন্দোলন চলবে। ’

তবে ধর্মঘটের ব্যাপারে পরিবহন মালিকরা বলছেন, তাঁরা কোনো ধর্মঘট ডাকেননি। দুর্ঘটনায় দায়ী বাসচালকদের সাজা দেওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে শ্রমিকরা নিজে থেকেই ধর্মঘট করেছে।

রাজধানীর চিত্র : পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গাবতলী এলাকায় বিকেল থেকেই শত শত শ্রমিক জড়ো হয়। একপর্যায় তারা মারমুখী হয়ে ওঠে এবং কয়েকটি প্রাইভেট কার ও বাস আটক করে ভাঙচুর করে। সন্ধ্যার পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গেলে বিক্ষোভকারীরা তাদের ওপর চড়াও হয়। আন্তজেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ের সামনে সংঘর্ষের সময় হানিফ পরিবহনের বালুর মাঠ কাউন্টারের একটি অস্থায়ী পুলিশ বক্সে আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা। এ সময় পাশে দাঁড়ানো পুলিশের একটি রেকারও জ্বালিয়ে দেয় তারা। তখন অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে শ্রমিকদের ওপর জলকামান ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এরপর শ্রমিকরা টার্মিনালের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। ঘটনার ছবি তুলতে গেলে ডিবিসি টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসনের ওপর হামলা চালায় তারা এবং কয়েকজন সাংবাদিককেও হেনস্তা করে।

রাত সোয়া ৯টার দিকে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের সামনে শ্রমিকরা একটি মাইক্রোবাস ও একটি অ্যাম্বুল্যান্স ভাঙচুর করে। সোয়া ১০টার দিকে পরিবহন শ্রমিকরা ট্রাফিক পুলিশের এক সার্জেন্টকে মারধর করে তাঁর মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেয়। রাতে শ্রমিকরা টার্মিনালের পশ্চিম দিকে (আমিনবাজারের দিকে) এবং স্থানীয় ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী টেকনিক্যাল মোড়ে অবস্থান নেয়। আর মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থান নেয় পুলিশ ও র্যাব। টার্মিনালের সামনের সড়কের বিভিন্ন স্থানে টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। সংঘর্ষের কারণে টার্মিনালের ভেতরে বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি আমিনবাজার থেকে ঢাকামুখী এবং টেকনিক্যাল মোড় হয়ে সাভারের দিকে যাওয়া শত শত যাত্রী আটক পড়ে।

সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে তিন পুলিশ সদস্যসহ ছয়জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন, শটগানের গুলিতে আহত গাড়িচালক হাসান (২৫), বালুশ্রমিক রবিউল (৪০), বাঁ পায়ে গুলিবিদ্ধ গরু ব্যবসায়ী দেলোয়ার (৫০), পুলিশের কনস্টেবল অনিক (২২), রবিউল (২১) ও মিজু আহমেদ (২৩)। পুলিশ সদস্যরা আহত হয়েছেন ধর্মঘটিদের ইটপাটকেলের আঘাতে।

পুলিশের মিরপুর বিভাগের দারুসসালাম জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) সৈয়দ মামুন মোস্তফা রাত সাড়ে ১২টার দিকে বলেন, ‘এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। কাউকে কোনো ঝামেলা করতে দেওয়া হবে না। ’

গতকাল দিনভর গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালীসহ রাজধানীর দূরপাল্লার বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, বাস না পেয়ে অপেক্ষা করছিল অসংখ্য যাত্রী। আগে যারা টিকিট কেটে রেখেছিল তারাও কোনো প্রকারে বাস কাউন্টারে গিয়ে দুর্ভোগে পড়ে।

এ ছাড়া রাজধানীর ভেতরের সিটি সার্ভিসও বন্ধ ছিল। কর্মজীবীরা কর্মস্থলে যেতে এবং কর্মস্থল থেকে ফিরতে ভোগান্তিতে পড়ে। গাড়ি না পেয়ে অনেককে হেঁটে হেঁটে যেতে দেখা গেছে। অনেককে অটোরিকশায় গুনতে হয়েছে বেশি ভাড়া। অনেক মোটরসাইকেলচালক ভাড়ায় যাত্রী টেনেছে। তবে আন্তর্জাতিক পরিবহন সেবা সংস্থা উবারের গাড়ি বেশির ভাগ স্থানে ছিল না।

রাজধানীর টেকনিক্যাল মোড়ে দুর্ভোগে পড়া দূরপাল্লার যাত্রী রিয়াজুর রহমান বলেন, ‘সাকুরা পরিবহনের বাসের টিকিট কিনেছিলাম। সকাল ৯টায় বাস ছাড়ার কথা ছিল। টার্মিনালে এসে দেখি সব কাউন্টার বন্ধ। ’

একই মোড়ে ঈগল পরিবহনের বাসের যাত্রী জাহেদ হোসেন বলেন, ‘খুলনায় একটি এনজিওর অফিসে নিয়োগ পরীক্ষা ছিল, যেতে পারছি না। ’

দুপুরে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ও পাশের সড়কে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি বাস বন্ধ করে রেখে দেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগ বাস কাউন্টারও বন্ধ। অনেকে বাসের জন্য অপেক্ষা করছে। কোনো কোনো কাউন্টারে যাত্রীরা টিকিট ফেরত দিতে আসে।

চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য হানিফ পরিবহনের কাউন্টারের সামনে অপেক্ষায় থাকা নজরুল ইসলাম বকশী বলেন, ‘সকাল ৭টায় এসেছি বহদ্দারহাটে বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য। অন্য কোনো গাড়ি পেলে চলে যেতাম। পাচ্ছি না। ’

মামুন পরিবহনের কাউন্টার বন্ধই ছিল। ঢাকা-সিলেট রুটের যাত্রী সিরাজুল ইসলাম স্ত্রী আয়েশা বেগম ও ছেলে বাবুল মিয়াকে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। কোনো প্রাইভেট কার বা অটোরিকশা দিয়ে ভেঙে ভেঙে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তাঁরা।

ফেনী যাওয়ার জন্য অপেক্ষারত ইনসুর আলী বলেন, ‘কেন স্ট্রাইক করল, তার কোনো যুক্তি আছে। আমারও তো গাড়ি আছে। এমন ধর্মঘট আমি মানি না। ’

এভাবে বিভিন্ন দূরপাল্লার রুটের যাত্রীরা টার্মিনালে গিয়ে জানতে পারে, বাস চলছে না। তাদের কেউ মাইক্রোবাস ভাড়া করে, ব্যক্তিগত অন্যান্য গাড়ি বেশি ভাড়ায় চুক্তি নিয়ে গন্তব্যে রওনা হয়। তবে পথে পথে শ্রমিকদের বাধা দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

আর রাজধানীর ভেতরে মহাখালী, কাকলী, বনানী, সায়েদাবাদ, শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী, গাবতলীসহ বিভিন্ন স্থানে অন্যান্য যান চলাচলে পরিবহন শ্রমিকদের বাধা দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুসারে, ঢাকায় চার হাজার বাস চলাচল করে। বিভিন্ন পরিবহন মালিক সমিতির হিসাবে, গতকাল ১০০ বাসও রাস্তায় ছিল না।

রাজধানীর বাইরে মোড়ে মোড়ে লাঠি হাতে শ্রমিকরা : আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি, নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে দেখা যায়, সারা দেশে ছিল একই অবস্থা। পরিবহন ধর্মঘটে বন্দরনগর চট্টগ্রাম কার্যত অচল হয়ে পড়ে। নগরের স্থায়ী-অস্থায়ী বাস টার্মিনালগুলো থেকে আশপাশের জেলাসহ দূরপাল্লার যানবাহন ছাড়েনি। বাস, মিনিবাস, হিউম্যান হলার, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ ইঞ্জিনচালিত কোনো যানবাহন সড়কে চলতে দেওয়া হয়নি।

বগুড়ায় ধর্মঘট পালনের নামে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে পরিবহন শ্রমিকরা। লাঠি হাতে সড়ক-মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে রোগী পরিবহনকারী অ্যাম্বুল্যান্স, সংবাদপত্রবাহী গাড়ি, স্কুলবাস থেকে শুরু করে রিকশা-ভ্যান চলাচলেও বাধা দেয় তারা।

ফরিদপুর শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড়, নূরু মিয়া বাইপাস সড়ক, শহরের গোয়ালচামট এলাকার আঙিনার সামনের সড়কে লাঠি হাতে শ্রমিকরা দাঁড়িয়েছিল। অটোবাইক, ইজিবাইক, মহেন্দ্রকে তেড়ে গিয়ে আটকানোর চেষ্টা করেছে। কোথাও দলবদ্ধভাবে গাড়ি চলাচলে বাধা দেওয়া হয়। এমনকি সংবাদমাধ্যমকর্মীদের প্রতি বিষোদগার করা হয়।

গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় অপেক্ষমাণ যাত্রীরা জানায়, অনেকে পিকআপ বা প্রাইভেট কারে করে যেতে চাইলেও পরিবহন শ্রমিকরা যেতে দেয়নি। তারা চালককে মারধর করে চাবি নিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়েছে। অনেক জায়গায় যানবাহনও ভাঙচুর করেছে।

ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের নান্দাইল চৌরাস্তা, নান্দাইল বাসস্ট্যান্ড ও কানুরামপুর এলাকায় লাঠি হাতে নিয়ে শ্রমিকরা সকাল থেকে অবস্থান করেছে। সকাল ১১টার দিকে নান্দাইল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মহাসড়কের আড়াআড়ি কয়েকটি বেঞ্চ ফেলে রাখা ছিল।

গতকাল সকালে ময়মনসিংহ শহরের মাসকান্দা বাসটার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে হাজারো যাত্রীর ভিড়। কিন্তু কোনো বাহন নেই।

শেরপুরে প্রতিটি বাসস্ট্যান্ডে শত শত যাত্রীকে যানবাহনের অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। কেউ কেউ সিএনজি অটোরিকশা, ইজিবাইকে দূর গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করলে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পরিবহন শ্রমিকরা সেসব সিএনজি অটোরিকশা, ইজিবাইক আটকে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়।

খুলনায় শ্রমিকরা বিকল্প যান হিসেবে চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, মহেন্দ্রসহ অন্য যান চলাচলে মোড়ে মোড়ে বাধা সৃষ্টি করে। সকালে সোনাডাঙা বাসটার্মিনালসংলগ্ন সড়কে শ্রমিকরা টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

গতকাল দুপুরে সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে শ্রমিকদের লাঠিসোঁটা হাতে অবস্থান নিয়ে পিকেটিং করতে দেখা যায়। এ ছাড়া দক্ষিণ সুরমার চণ্ডিপুল, হুমায়ুন রশীদ চত্বর, কদমতলী, টুকেরবাজার, তেমুখীসহ বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে পরিবহন শ্রমিকরা। বিভিন্ন সড়কে যাত্রীবাহী সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচলের চেষ্টা করলেও পড়তে হচ্ছে শ্রমিকদের পিকেটিংয়ের মুখে।

যশোরেও ধর্মঘটি শ্রমিকরা বাস-ট্রাক ছাড়াও অন্য কোনো যানবাহন চলাচল করতে দেয়নি।

মালিক-শ্রমিক নেতাদের বক্তব্য : বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘ধর্মঘট আমরা ডাকিনি। পরিবহন শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ করছে তাদের কর্মসূচির মাধ্যমে। আমরা সোমবার রাতে বৈঠকে বসে খুলনার ১০ জেলায় ধর্মঘট প্রত্যাহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছিলাম। তার মধ্যে রটে যায়, পরিবহন শ্রমিকের ফাঁসির রায় হয়েছে। এর পর থেকে পরিবহন শ্রমিকরা কর্মবিরতিতে যায়। ’

চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি মনজুরুল আলম মনজু ও মহাসচিব আবুল কালাম আজাদ গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, গত সোমবার রাতে শ্রমিকরা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল। গতকাল সকাল থেকে শ্রমিকদের ধর্মঘটের সঙ্গে তাঁরা একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে ডাকা এ ধর্মঘট দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

বরিশাল জেলা বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় অভিযুক্ত করে দুই বাসচালকের সাজা দেওয়ায় কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা বাস ধর্মঘট পালন করছি। ’ তবে অন্যান্য গণপরিবহন চলতে না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছু শ্রমিক সেগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা সচল রাখার ব্যবস্থা করছি। ’

নারায়ণগঞ্জে পরিবহন ধর্মঘট নিয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন (বি-৪৯৪) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক মো. জিলানী বলেন, ‘একটি দুর্ঘটনায় চালকের যাবজ্জীবন সাজা দেওয়ার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয়ভাবে এ ধর্মঘট পালন করা হচ্ছে। তবে বুধবার থেকে স্বাভাবিকভাবে গাড়ি চলাচল করবে আশা করছি। ’

গাজীপুর জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. সুলতান উদ্দিন সরকার জানান, দুই চালকের সাজা হওয়ার পর শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তারা ঝুঁকির মধ্যে গাড়ি চালাতে চাইছে না। এ পেশা থেকে অব্যাহতি নিতে চাচ্ছে। বাধ্য হয়ে তারা আন্দোলনে নেমেছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের খুলনা বিভাগীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক শেখ শফিকুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ধর্মঘট প্রত্যাহারের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি বলেন, এ বিষয়ে মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের রাজশাহী বিভাগের সভাপতি ও বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল লতিফ বলেন, দাবি না মানা পর্যন্ত ধর্মঘট কর্মসূচি চলবে। ধর্মঘটে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে।

সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সিলেট বিভাগের সভাপতি সেলিম আহমেদ ফলিক বলেন, ‘যত দিন পর্যন্ত আমাদের দাবি মানা না হয় তত দিন পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব। ’

প্রসঙ্গত, চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহত হওয়ার মামলায় গত ২২ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের চালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়। এতে ওই দিনই চুয়াডাঙ্গায় বাস বন্ধ করে দেয় শ্রমিকরা। এরপর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক কমিটি খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় রবিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডাকে।

সোমবার এক নারীকে বাসচাপায় হত্যার দায়ে আরেক চালকের মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। এ ঘটনার পর সোমবার রাতে গোপন বৈঠক করে দেশব্যাপী ধর্মঘটে নামে পরিবহন শ্রমিকরা।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন