পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার

  01-03-2017 02:40PM

পিএনএস ডেস্ক: দুই বাসচালকের কারাদণ্ডের প্রতিবাদে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট প্রত্যাহারের করে শ্রমিকদের যানবাহন চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি ও নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান।

বুধবার (০১ মার্চ) সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন ভবনে মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে সরকারের দুই মন্ত্রীর বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। বৈঠক শেষে নৌমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আইনগতভাবে সমস্যা সমাধানের আশ্বাসে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছে শ্রমিকেরা।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে সচিবালয়ে ওবায়দুল কাদেরর দফতরে ধর্মঘটের বিষয়ে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙা ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ খান।

বৈঠক শেষে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা বৈঠকে বসেছিলাম। ধর্মঘটের বিষয়ে আলোচনা করেছি। এখন শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ জন্য আমরা পরিবহন মালিক নেতা খন্দকার এনায়েতুল্লাহ খানের অফিসে একটি বৈঠক করবো।

তিনি আরও বলেন, ‘ধর্মঘট নিয়ে নানা ধরনের ঘটনা ঘটছে। সবকিছু আমাদের নলেজে আছে। আমরা আশাবাদী আজকের মধ্যেই এ ধর্মঘট প্রত্যাহার হবে। ধর্মঘট প্রত্যাহারের বিষয়ে আজকের বৈঠকে আমরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে এ ঘোষণা এখান থেকে দিতে চাই না। শ্রমিকদের সঙ্গে বসেই সেখান থেকে ঘোষণা দেওয়া হবে।’

শাজাহান খান সচিবালয় থেকে বের হওয়ার সময় কয়েকজন বলেন, ‘ধর্মঘটের মধ্যে জামায়াত-শিবির ঢুকে গেছে।’

বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আদালতের রায়ের বিষয়ে যদি কারও কিছু বলার থাকে তা আদালতের মাধ্যমেই উপস্থাপন করা উচিত। আদালতের রায় নিয়ে ধর্মঘটে যাওয়া ঠিক না। মানুষকে কষ্ট দিয়ে দাবি আদায় কোনও মানবিক কর্মকাণ্ড হতে পারে না।’

উল্লেখ্য, মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ, সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনায় বাসচালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। এর প্রতিবাদে গত রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) থেকে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেন শ্রমিকেরা।এরপর ঢাকার সাভারে ট্রাকচাপা দিয়ে এক নারীকে হত্যার দায়ে সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এক চালকের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। এরই প্রতিবাদে মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) থেকে পরিবহন শ্রমিকেরা ধর্মঘটের ডাক দেন।

এই পরিস্থিতিতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। ধর্মঘটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদনও হয়েছে।

বুধবার (০১ মার্চ) আবারও শ্রমিক-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকা। সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা। থেমে থেমে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।

সংঘর্ষে শাহিন আলম (৩২) নামে এক বৈশাখী পরিবহনের এক হেলপার গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। আহতাবস্থায় তাকে স্থানীয় সেলিনা ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অপরদিকে গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালীতে বাসের জন্য শত শত নারী-পুরুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে বিফল হয়ে ফিরতে হয়েছে। টেকনিক্যাল, কল্যাণপুর, আরামবাগ, কলাবাগানসহ দূরপাল্লার বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির কাউন্টারের সামনে গিয়েও একই চিত্র দেখা গেছে। পরিবহন শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে কার্যত সারাদেশ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল রাজধানী ঢাকা।


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন