যত বড় নেতা, তত বড় গর্ত!

  28-03-2017 08:37PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : বাতির নিচে নাকি অন্ধকার। মাঝে-মধ্যে সে অন্ধকারও যে দূর হয়, সেটার কিছুটা বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া যায়। অবাক করা সেসব কাজ হুটহাট করে হয়ে যায় বৈকি। হয়তো তেমনটাই ঘটে নিজের অজান্তে। আবার কখনো আলো না থাকলে চারপাশের অন্ধকারটা গাঢ় হয়। আদতে কচুয়াবাসী কি সেদিকেই যাচ্ছে?

আমাদের গ্রামটা একেবারেই উপজেলার সীমান্তে। উন্নয়নের দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে। আর যেখানে নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস। বেশির ভাগই আমার মতো খেটে খাওয়া মানুষ। শিক্ষার আলো খুব একটা নেই। থানা সদরে যেতে একসময় যাদের ১৭টি সাঁকো পার হতে হতো সেখানে উন্নয়ন কঠিন বৈকি। তার পরও এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে পথচলা থেমে নেই।

হালে সেখানে বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে পাকা রা্স্তা হয়েছে। সব ধরনের যানবাহন এ গ্রামের ওপর দিয়ে সাঁ সাঁ করে যায়। অনেকে উন্নয়নের পথের যাত্রী হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। কাছের মানুষরা অসুস্থ হলে সহজেই খবর পাওয়া যায়। সচক্ষে দেখার জন্য কাছে যেতে হয়। আর সে জন্য ছুটে যাওয়াই স্বাভাবিক।

বছরের শুরুতে মৃত্যুপথযাত্রী চাচিকে দেখতে গ্রামের বাড়ি যেতে হয়। চাচিকে দেখতে গিয়ে নতুন যন্ত্রণায় কাত হয়ে গেলাম। সড়কের নাজুক অবস্থা বিবেককে ভোঁতা করে দেয়। এককালের পাকা রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলাও দায়। চাঁদপুরের কচুয়ার প্রায় প্রতিটি রাস্তার অবস্থা এমনই সোচনীয়। এ পথে আর না-যাওয়ার ডাইভারের বাহানা মোটেও অযৌক্তিক নয়।

আমাদের পাশের নাছিরপুর গ্রামের ইঞ্জিনিয়ার দেওয়ান মুনিরুজ্জামান মানিক ভাইয়ের আমন্ত্রণে চাপকল বিতরণ অনুষ্ঠানে যেতে হয় তার বাড়িতে। সেখানেও যেতে রাস্তার দৈণ্য চোখে পড়ে। যুগ্ম সচিব ডা. আমিনুল ইসলামের বাবা এবং দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলমের শ্বশুর বয়োবৃদ্ধ পালগিগির লতিফ সাহেবের সঙ্গে দেখা করি বাড়ি গেলেই। রহিমানগর দিয়ে সেখানে যেতেও রাস্তায় করুণ দৃশ্য চোখে পড়ে।

কদিন পর ১১ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি পঞ্চম হত্যাকাণ্ড বার্ষিকী পালনের সব প্রস্তুতি শেষে জানতে পারি চাচি খুশি বেগম শেস নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন (ইন্না লিল্লাহি…রাজিউন)। ফলে দ্রুত দাফনের জন্য গ্রামের বাড়ি আবারও যেতে হয়। সড়কের দুরবস্থা আবারও ভোগায়। চাষিকে দাফন শেষে উল্টোপথে ঢাকায় আসতে হয়।

সর্বশেষ ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে শ্রীরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে যাওয়া হয়। গিয়ে দেখি, রাস্তাগুলোর নাজুক অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। আদৌ পরিবর্তন হবে কিনা কেউ সঠিকভাবে বলতে পারছেন না। রিকশাচালক থেকে শুরু করে সবাই সড়ক বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিদের গাল দিচ্ছেন।

গিয়ে মনে পড়ে গেল একদিন যেখানের একই অনুষ্ঠান পিছনের কাতারে দাঁড়িয়ে উপভোগ করতাম, আজ সেখানে প্রধান অতিথি! হিসাবের অত পা্র্থক্য বাস্তবে নিজের জীবনে ঘটলেও ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নের ছোঁয়া না-দেখে আরো অবাক হই। অথচ শিক্ষার মান ভালো। অভিজ্ঞ ও যোগ্য শিক্ষকমন্ডলী দ্বারা এটি পরিচালিত। শিক্ষার্থী সংখ্যাও প্রচুর।

সাবেক একজন এমএলএ ও একজন এমপির গ্রাম এটি। এখানেই জন্ম দেশের অন্যতম খ্যাতিমান প্রকৌশলী ফয়েজ আহমেদের। যার স্ত্রী মন্ত্রী ছিলেন। সে গ্রামের নামকরা উচ্চ বিদ্যালয়টি কলেজ হওয়ার দাবি রাখে সব বিচারেই। অথচ এটি অবহেলিতই থেকে গেছে। এমনটা তো হবার কথা নয়। এটির উন্নয়ন কাজের জন্য স্থানীয় এমপির একটি ডিউ লেটার জমা দেয়া থাকলেও সংশ্লিষ্টদের চরম উদাসীনতায় তা হয়তো লাল পিতায় বন্দী।

কচুয়া সদরের চার পাশের সড়কগুলোয় দুদর্শা দেখলে যে কারো মনে হবে, এখানে এগুলো দেখার কেউ নেই। নেই কোনো অভিভাবক। উল্টো এক চা দোকানী জানান, কচুয়া থেকে দক্ষিণ দিকে একটি সড়ক উন্নয়নের জন্য ৪০ লাখের কমবেশি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। আর কাজ শুরু না হতেই নাকি ১০ লাখ টাকা মধ্যম সারির জনৈক জনপ্রতিনিধির পকেটে চলে গেছে! কী করে সম্ভব?

সড়কগুলোর দুরবস্থা দেখে রসিকজনরা বলাবলি করেন- ‘যত বড় নেতা, তত বড় গর্ত।’ যে গর্ত কচুয়ার সর্বত্র বিরাজমান। যে গর্তে পড়ে যাত্রী ও যানবাহন নাকাল হচ্ছে, সে গর্তে পড়ে শ্রীরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের উন্নয়ন থমকে আছে। একইভাবে সড়ক উন্নয়নের টাকা চলে যাচ্ছে ব্যক্তির পকেটে। একই গর্তে পড়ে কচুয়ার যুব সমাজ বহুরূপী মাদকে আসক্ত হয়ে গোল্লায় যাচ্ছে।

কচুয়ার অবহেলিত সড়ক, মাদকের ছড়াছড়ি, গ্যাসের লঙ্কাকাণ্ড ও শ্রীরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়সহ অবহেলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ যার যার অবস্থান থেকে সর্বস্তরের সবার জরুরি হস্তক্ষেপ সময়ের দাবি। সরকার ও প্রশাসনে কচুয়ার যারাই যেখানে আছেন, সেখান থেকে একটু সুনজর দিলে আলোচিত সমস্যাগুলো সমাধান সহজেই করা সম্ভব।


লেখক : সাধারণ সম্পাদক- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন
ই-মেইল : [email protected]

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন