আগামীকাল কবি কায়সুল হকের ৮৫তম জন্মদিন

  28-03-2017 10:10PM

পিএনএস : আগামীকাল ২৯ মার্চ কবি কায়সুল হকের ৮৫তম জন্মদিন। কবি কায়সুল হক অবিভক্ত বাংলার মালদহ জেলায় মাতুলালয়ে ১৯৩৩ সালের ২৯ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস রংপুর। তিনি শৈশব, কৈশোর ও যৌবনকাল রংপুরে অতিবাহিত করেন।

১৯৪৮ সালে রংপুর জিলা স্কুল থেকে বৃত্তি নিয়ে স্কুল সেকেন্ডারি (ম্যাট্রিকুলেশন) উত্তীর্ণ হন। এরপর রংপুরে কারমাইকেল কলেজে আই.এস. সি-তে ভর্তি হন। কারমাইকেল কলেজে পড়ার সময়েই কবি-সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৪৯ সালে কারমাইকেল কলেজ বার্ষিকীতে 'উত্থিত হাত' নামে একটি কবিতা প্রকাশিত হয়েছিলো। প্রথম কোনো দৈনিক পত্রিকা হিসেবে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় প্রথম 'আজ' কবিতা প্রকাশিত হয়।

সাহিত্যচর্চার শুরুতেই কবি জীবনানন্দ দাশ, বুদ্ধদেব বসু, সঞ্জয় ভট্টাচার্য, অন্নদাশঙ্কর রায় প্রমুখের সঙ্গে তাঁর প্রথম দিকে পত্রালাপ এবং পরে ব্যক্তিগত পরিচয় হয়। বাংলাদেশের প্রায় সকল কবি সাহিত্যিকের সঙ্গে আমৃত্যু সুসম্পর্ক ছিলো। ১৯৫৩ সালে সুসাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায়ের প্রচেষ্টায় শান্তিনিকেতনে সাহিত্য মেলায় কবি কায়সুল হক পূর্ব বাংলা থেকে প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে যোগদান করেন।

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর সুসাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায়ের উদ্যোগে কলকাতায় আয়োজিত ভারত-বাংলাদেশ সংস্কৃতি ও মৈত্রী মেলায় অন্যতম প্রতিনিধি হিসেবে কবি কায়সুল হক যোগদান করেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলেনর সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। তিনি সম্পাদিত সাহিত্য পত্রিকাসমূহ : রংপুর জেলা পরিষদ পত্রিকা, কাফেলা, অধুনা, সবার পত্রিকা, কালান্তর ও শৈলী। ১৯৭০ সালে রংপুর থেকে কায়সুল হক ও আবু মোহাম্মদ মোজাম্মেল হকের যুগ্ম সম্পাদনায় সাহিত্য বিষয়ক পত্রিকা 'অন্বিষ্ট' প্রকাশিত হয়।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিনে আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র থেকে 'সংবাদ পরিক্রমা'য় দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় কায়সুল হকের 'তোমার খোকন সৈনিক এখন' কবিতা পাঠ করেন। ভারত সরকার কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান এবং রাষ্রসংঘ যেন পূর্ব বাংলার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে সে বিষয়ে জনমত সৃষ্টি করতে ভারত সরকারকে চাপ দেওয়ার জন্য ৪ এপ্রিল ১৯৭১ সুসাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায়কে এক পত্র দেন।

১৯৭২ সালে ঢাকায় জাতীয গ্রন্থকেন্দ্রের চাকরিতে সহকারী পরিচালক পদে যোগদান করেন এবং ১৯৯০ সালে উপপরিচালেকর পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। পঞ্চাশের দশকের ঢাকার বিউটি বোর্ডিং সাহিত্যচক্রের অন্যতম সক্রিয় সদস্য ছিলেন। রংপুরের সাহিত্যচর্চার প্রতিষ্ঠান ''কবিসভা' প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখেন। প্রতিষ্ঠার সময় থেকে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের চাকরিতে যোগদানের পূর্ব পর্যন্ত কবিসভার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

তাঁর রচিত গ্রন্থসমূহ : কবিতা- শব্দের সাঁকো ও রবীন্দ্রনাথের নিরুপম বাগান; প্রবন্ধের গ্রন্থ- স্বদেশ, সংস্কৃতি ও রবীন্দ্রনাথ, আলোর দিকে যাত্রা ও অনিন্দ্য চৈতন্য।

পুরস্কার প্রাপ্তি :ড. আসাদুজ্জামান সাহিত্য পুরস্কার ২০০০; বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০০১ ও সা'দত, বারিধারালি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৫। অমর একুশে উদযাপন পরিষদ, রংপুর কর্তৃক ভাষা আন্দোলনের স্বীকৃতিস্বরূপ সঙার্ধনা প্রদান এবং রংপুর থেকে প্রকাশিত 'নতুন সাহিত্য' পত্রিকার পক্ষ থেকে ২০০৭ সালে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

কবি কায়সুল হক ছিলেন নিজের সম্পর্কে অত্যন্ত নিস্পৃহ এবং উদাসীন। নিজে কম লেখালেখি করলেও লেখক সৃষ্টতেআগ্রহ ছিলো প্রবল। সমসাময়িক বন্ধুদের যেমন তেমনি অনুজ লেখকদের অনুপ্রাণিত ও উতসাহী করার কাজটিই বেশি করে গেছেন।

১৩ ফেবরুয়ারি ২০১৬/ ১ ফাল্গুন ১৪২২ শনিবার সকাল সাড়ে সাতটায়, ঢাকায় চিকিতসাধীন অবস্থায় প্রায় ৮৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন