ঢাকা ভেঙে নতুন বিভাগ হবে: প্রধানমন্ত্রী

  29-03-2017 09:45PM

পিএনএস : ঢাকা বিভাগ ভেঙে নতুন একটি বিভাগ হবে। নতুন সেই বিভাগ ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী জেলা নিয়ে গঠিত হবে।

আজ বুধবার ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে পুনরায় আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার সুযোগ করে দেওয়ার আহ্বান জানান।

শিক্ষার্থীদের প্রতি জঙ্গি, মাদক ও সন্ত্রাসের পথ পরিহার করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ আমাদের পথ নয়’। তিনি বলেন, যারা ছাত্রছাত্রী, তাদের লেখাপড়ার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। তাদের জঙ্গিবাদ, মাদক ও সন্ত্রাসের পথ পরিহার করতে হবে। অভিভাবক, শিক্ষক, আলেম সমাজ, রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো ছেলেমেয়ে যেন সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গির পথে যেতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষত অভিভাবকদের সতর্ক নজর রাখতে হবে, তাঁর ছেলে কোথায় যায়, কাদের সঙ্গে মেশে, কী করে—সেদিকে নজর রাখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী ঢাকা বিভাগকে ভেঙ্গে ফরিদপুরসহ ৫টি জেলা নিয়ে পৃথক একটি বিভাগ গঠনে সরকারের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘ইনশাল্লাহ ঢাকা বিভাগ ভেঙ্গে আমরা নতুন আরেকটা বিভাগ করবো। ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ি, শরিয়তপুর, গোপালগঞ্জ নিয়ে আরেকটি বিভাগ আমরা করবো সেই পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে।

জাতির পিতার পদাংক অনুসরণ করে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসেবে তাঁর সরকার নতুন নতুন বিভাগ করে দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা বিভাগ ভেঙ্গে ময়মনসিংহ বিভাগও আমরা ইতোমধ্যেই করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এই বিভাগ করার উদ্দেশ্য জনগণ যাতে বেশি সেবা পায়। জনগণ যাতে আরো বেশি কাজ পায় সেই সুযোগ আমরা সৃষ্টি করে দিচ্ছি।’ দক্ষিণাঞ্চল এবং পদ্মাপাড়ের মানুষ চিরদিন অবহেলিত ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্মাণাধীন পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে এই অঞ্চলের জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে ।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জনগণের সেবায় এবং তাদের ভাগ্যের উন্নয়নে কাজ করি, আর বিএনপি-জামায়াত জোট জঙ্গিবাদে উসকানি দেয়। আওয়ামী লীগ মানে উন্নয়ন, আওয়ামী লীগ মানে ভাগ্যের পরিবর্তন। বিএনপি সারের বদলে গুলি ছুড়েছে আর আমরা ক্ষমতায় এসে তিন দফা সারের দাম কমিয়ে দিয়েছি।’ বাংলাদেশের একটা মানুষও গৃহহীন থাকবে না’—এ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যার কোনো ঘর নেই, জমি নেই, ঠিকানা নেই—তাদের বিনা পয়সায় ঘর তুলে ঠিকানা করে দেওয়া হবে। প্রি-প্রাইমারি থেকে উচ্চতর শ্রেণি পর্যন্ত ৭৩ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। বিনা মূল্যে বই বিতরণ করা হয়েছে ৩৬ কোটির বেশি। আজ পড়াশোনা করতে কোনো পরিবারকে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে না। ‘মায়ের হাসি’ প্রকল্পের আওতায় উপবৃত্তির টাকা সরাসরি চলে যাচ্ছে মায়েদের মোবাইলে।

শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে পুনরায় ক্ষমতায় আনার সুযোগ করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ আগামী ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হবে।

ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহা জনসভায় সভাপতিত্ব করেন এবং আওয়ামী লীগের কেন্ত্রীয় যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রহমান সভা পরিচালনা করেন। বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, কাজী জাফর উল্লাহ এবং লে: কর্নেল (অব:) ফারুক খান এমপি, নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানসহ আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। সভায় প্রধানমন্ত্রীর জামাতা খন্দকার মাশরুর হোসেন মিতুকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, জাতীয় সংসদ সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং সুধী সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে ফরিদপুর জেলা শহর ও সমাবেশস্থল উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়। তোরণ, রং-বেরংয়ের ব্যানার, ফেস্টুন, প্লাকার্ড, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন রকম প্রতিকৃতিতে বর্ণিল হয়ে ওঠে পুরো শহর এবং সমাবেশ এলাকা। হাজার হাজার জনতা সকাল থেকে নেচে, গেয়ে বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজেন্দ্র কলেজ মাঠের সমাবেশে এসে যোগ দেয়। মিছিলে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মত। চৈত্রের প্রচন্ড দাবদাহ অগ্রাহ্য করে দুপুরের পর পরই জনসভাস্থলটি কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে জনসমুদ্রে রূপলাভ করে। প্রধানমন্ত্রীকে এক নজর দেখার জন্য সকল বয়সের মানুষদের রাস্তার দু’ধারে, বাড়ির ছাদ বা উঁচু স্থাপনার ওপরে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

এর আগে, বুধবার বেলা ১১টা ৩৬ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারটি ফরিদপুরের শেখ জামাল স্টেডিয়ামে অবতরণ করে। এরপর প্রধানমন্ত্রী ফরিদপুর সার্কিট হাউসের ভিআইপি মিলনায়তনে উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

এর আগে আরেকটি হেলিকপ্টারে প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ফরিদপুরে পৌঁছান। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে প্রধানমন্ত্রী ফরিদপুরে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের শহরতলির বদরপুরের বাড়ি আফসানা মঞ্জিলে আসেন। সেখানে তিনি জোহরের নামাজ আদায় এবং মধ্যাহ্নবিরতি পালন করেন। প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল খন্দকার মোশাররফ হোসেনের পুত্রবধূ। সে হিসেবে প্রধানমন্ত্রী মধ্যাহ্নবিরতির ওই সময়টুকু মেয়ের বাড়িতেই অবস্থান করেন। ওই বাড়িতে তিনি দুপুরের খাবার খান। নামাজ ও মধ্যাহ্নবিরতির পর বিকেলে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের মাঠে প্রধানমন্ত্রী ২০টি নির্মাণ প্রকল্পের ফলক উন্মোচন এবং ও ১২টি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী যেসব প্রকল্প উদ্বোধন করেন সেগুলো হচ্ছে- ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় নির্মাণ, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, পল্লীকবি জসিম উদ্দীন সংগ্রহশালা, ফরিদপুর ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজী, শিশু একাডেমী, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহা পরিদর্শকের কার্যালয় নির্মাণ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ফরিদপুর, ফরিদপুর ৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্ট, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের একাডেমিক কাম পরীক্ষা হল নির্মাণ, সদর উপজেলাধীন চর কমলাপুর খেয়াঘাট থেকে বিলমামুদপুর স্কুল সড়কে কুমার নদীর ওপর ৯৬ মিটার আরসিসি ব্রিজ নির্মাণ, ভাংগা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ, মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নয়ন, আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস ফরিদপুর, বিএসটিআই ভবন নির্মাণ, ভাংগা থানা ভবন নির্মাণ, মধুখালী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন নির্মাণ, সদর উপজেলা থেকে বাখুন্ডা জিসি হয়ে রসুলপুর ভায়া চরনিখুরদি সড়ক বিসি দ্বারা উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প, ফরিদপুর সদর উপজেলাধীন ডিক্রিরচর ইউনিয়নের মুন্সীডাঙ্গী কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ এবং ৩৩/১১ কেভি হারুকান্দি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র (ক্ষমতা ২০/২৬.৬৬ এমভিএ)।

এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী কুমার নদ পুন:খনন প্রকল্প, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আলফাডাঙ্গা, ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়, পুলিশ হাসপাতাল, পুলিশ অফিসার্স মেস, সালথা টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের একাডেমিক কাম প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, চন্দ্রপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ ফরিদপুরের ছাত্রী নিবাস নির্মাণ, চীফ জুডিশ্যিয়াল ম্যাজিস্ট্রৈট আদালত নির্মাণ, ১৫০০ আসন বিশিষ্ট মাল্টিপারপাস হলরুম নির্মাণ, সালথা ফায়ার সর্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, সদরপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ষ্টেশন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন