সুন্দরবনে মাছ ধরা বন্ধের চিন্তা

  22-04-2017 08:02AM


পিএনএস ডেস্ক: বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ সুন্দরবনে মাছ ধরা বন্ধের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে। তবে সোয়া ছয় হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত পুরো বনেই তা কার্যকর করা হবে কি না, সে বিষয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছে মন্ত্রণালয়। ফলে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। মাছ ধরা স্থগিতের পেছনে যুক্তি তুলে ধরে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, জেলেরা বনের জীববৈচিত্র্য নষ্ট করছে। অনেকে পোনা ধরছে, বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছে। সুন্দরবন এলাকায় লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় মাছের উপস্থিতিও কমে গেছে। সার্বিকভাবে এ বনের জীববৈচিত্র্য ও মত্স্যসম্পদ রক্ষায় মন্ত্রণালয় এমন পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছেন একাধিক কর্মকর্তা।

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নুরুল করিম বলেন, ‘সুন্দরবনে মাছ ধরা স্থগিতের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এতে জেলেদের জীবন-জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিষয়টি আমাদের মাথায় রয়েছে। তাই সীমিত আকারে, নাকি পুরোপুরি মাছ ধরা বন্ধ করে দেওয়া হবে সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। তিনি বলেন, সুন্দরবন এলাকায় মাছ ধরার কারণে সেখানকার জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। অনেকে সেখানে মাছ ধরার কথা বলে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। ’

মত্স্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সুন্দরবন এলাকায় মাছ কমে যাচ্ছে বলে বন বিভাগের একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনেও দেখা গেছে, সুন্দরবন এলাকায় লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় ২৭ প্রজাতির মাছ মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে। এসব মাছ মিঠা পানিতে থাকতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। প্রতিবছর যে হারে লবণাক্ততা বাড়ছে সুন্দরবন এলাকায়, তাতে ২০৫০ সাল নাগাদ মাগুর, শিং, কই, কাতলসহ ২৭ প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সুন্দরবনের মত্স্যসম্পদ নিয়ে যৌথভাবে কাজ করতে বন বিভাগকে কয়েক মাস আগে প্রস্তাব দিয়েছিল মত্স্য বিভাগ। এ প্রস্তাবে এখন পর্যন্ত বন বিভাগ সাড়া দেয়নি।

কী প্রক্রিয়ায় মাছ ধরা বন্ধ করা যায় সে বিষয়ে মতামত দিতে সম্প্রতি বন বিভাগকে নির্দেশ দেয় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। মত্স্যসম্পদ আহরণ স্থগিতের আইনগত দিকগুলোও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে গত সপ্তাহে প্রধান বন সংরক্ষক (সিসিএফ) সফিউল আলম চৌধুরী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘সুন্দরবনে মাছ ধরা ১৯৪৩ সাল ও ১৯৫৯ সালের দুটি আলাদা নির্দেশনার আলোকে পরিচালিত হচ্ছে। তবে মত্স্য আহরণ কার্যক্রম স্থগিত রাখার বিষয়ে আদেশ জারির কর্তৃপক্ষ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই। নিয়ম অনুযায়ী, মাছ ধরার পারমিট ইস্যুসহ সব ধরনের কার্যক্রম বিভাগীয় বন কর্মকর্তার মনোনীত সংশ্লিষ্ট স্টেশন কর্মকর্তারা করে থাকেন। তাই মাছ ধরা স্থগিতের বিষয়টি বিভাগীয় বন কর্মকর্তার ওপর বর্তায়। ’ চিঠিতে তিনি আরো উল্লেখ করেন, ‘বন বিভাগ থেকে বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট (বিএলসি) ছাড়া কোনো নৌকা সংরক্ষিত বনাঞ্চলে প্রবেশ করতে পারে না। ইন্টিগ্রেটেড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান ফর দ্য সুন্দরবন অনুযায়ী সুন্দরবন থেকে মাছ আহরণ কার্যক্রম চলছে। চলমান পদ্ধতিতে উল্লেখযোগ্য সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে না। তবে সুন্দরবনের মত্স্যসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে যেকোনো ধরনের নীতিনির্ধারণীমূলক সিদ্ধান্ত আসতে পারে। ’ বন বিভাগ সেটি কার্যকর করবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

সূত্র বলছে, সুন্দরবনে এর আগে কখনো মাছ ধরা বন্ধ করা হয়েছিল কি না, সুন্দরবনকে ঘিরে এখন কতসংখ্যক মত্স্যজীবী রয়েছে—এ ধরনের তথ্য খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষকের কাছে জানতে চেয়েছে বন বিভাগ। এসব বিষয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে খুলনা বন বিভাগ। তাতে বলা হয়েছে, সুন্দরবনকে ঘিরে এখন ৪০ হাজার জেলে রয়েছে। বন বিভাগ ১২ হাজার নৌকাকে মাছ ধরার জন্য নিবন্ধন দিয়েছে। প্রতিবছর মত্স্যসম্পদ থেকে বন বিভাগ প্রায় পাঁচ কোটি টাকার মতো রাজস্ব পেয়ে থাকে।

এ বিষয়ে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক আমির হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘সুন্দরবন এলাকায় এর আগে আগুন লাগার সময় একবার, তেলবাহী জাহাজডুবির সময় একবার মাছ ধরা সাময়িক স্থগিত রাখা হয়েছিল। তবে সেটি ছিল নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থানের জন্য। ’ তিনি বলেন, ‘সুন্দরবন এলাকায় মাছ ধরা স্থগিত করার আগে জেলেদের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করা জরুরি। ’

মাছ ধরা স্থগিত বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, ‘সুন্দরবনে ঢালাওভাবে মাছ ধরা স্থগিত করা ঠিক হবে না। তাতে জেলেদের জীবন-জীবিকা হুমকিতে পড়বে। আগে জেলেদের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে সীমিত আকারে মাছ ধরা স্থগিত করা যেতে পারে। যেখানে মাছের প্রজননকেন্দ্র এবং অভয়ারণ্য রয়েছে, সেসব জায়গায় মাছ ধরা পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। ’

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন