হাওরাঞ্চলের কৃষকদের পুনর্বাসন জরুরি

  23-04-2017 06:13PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : অতি বৃষ্টি, পাহাড়ী ঢল ও বাঁধ ভেঙ্গে হাওরাঞ্চলসহ সারাদেশে ফসলের ব্যাপাক ক্ষতি হয়েছে। উঠতি ফসল হারিয়ে কৃষক সমাজের মাথায় হাত। তারা চোখে সরষে ফুল দেখছেন। তারা ফসল ঘরে তুলতে না পেরে দিশেহরা। তাদের এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ অতীব প্রয়োজন।

সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনার কৃষকরা যখন তাদের আবাদ করা ধান ঘরে তোলার অপেক্ষায় তখনই অতি বৃষ্টি, পাহাড়ী ঢল ও বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় তাদের সব ধরনের ফসল ডুবে যায়। এর সঙ্গে ডুবে যায় তাদের স্বপ্ন ও আশা। ধানের পাশাপাশি পিঁয়াজ, রসুন, মরিচসহ নানা জাতের সবজি পানিতে ডুবে নষ্ট হয়।

চোখের সামনে তাদের হাড়ভাঙা কষ্ট ও পরিশ্রমের ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখের পানিতে নিজের বুক ভাসায় কৃষকসমাজ। আগামী দিনে কী করে তারা আহার জোগাবে, সে চিন্তায় রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। বউ-বাচ্চা নিয়ে কীভাবে তাদের দিন কাটবে, তা ভেবে কূল পাচ্ছেন না তারা।

ব্যাংক ঋণ নিয়ে এবং ধার-দেনা করে যারা ফসল ফলিয়ে ছিলেন যে কৃষকরা, তাদের অবস্থা আরো করুণ। দেনা এবং ফসলহানিতে তাদের চিন্তা আরো বেশি। নতুন ফসল আবাদ করে সে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার সুযোগও তাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। এই মৌসুমে তারা আর তাদের জমি আবাদযোগ্য করতে পারবে না পানির কারণে।
আকস্মিক বন্যায় ফসল হারা কৃষকদের পুনর্বাসনের দাবি উঠেছে সচেতন জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে। আরো দাবি উঠেছে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাকে দুর্গত ঘোষণার। ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে সে দাবিকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিন লাখ ৩০ হাজার পরিবারকে ১০০ দিন ৩০ কেজি করে চাল ও নগদ ৫০০ টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রয়োজনের তুলনায় যা একটি পরিবারের জন্য একেবারেই অপ্রতুল।

এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী বলেছেন, হাওরের পরিস্থিতি এতটা খারাপ হয়নি যে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করতে হবে। হাওরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ২৩ এপ্রিল এক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন ত্রাণমন্ত্রী।
মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর ভাষ্য, পরিস্থিতি এখনো তাঁদের নিয়ন্ত্রণে আছে। পরিস্থিতি মোকাবিলার সামর্থ্য তাঁদের রয়েছে। ত্রাণমন্ত্রী জানান, হাওরের ৩ লাখ ৩০ হাজার পরিবারকে আগামী ১০০ দিন প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হবে। আর ৫০০ করে নগদ টাকা দেয়া হবে। এ জন্য ইতিমধ্যে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন চাল ও ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

হাওর প্লাবিত হওয়ার পেছনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতি বা দুর্নীতি দায়ী কি না— এমন প্রশ্নে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব জাফর আহমেদ খান বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যানুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অতি বৃষ্টি হওয়ায় এই প্লাবন হয়েছে। হাওরের বাঁধ টপকে পানি ঢুকেছে। ফলে এই বাঁধ আরো উঁচু করা যায় কি না, তা ভাবা হচ্ছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্ ফসলের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তুলে ধরে বলেন, এখন পর্যন্ত দুই লাখ হেক্টর জমির ছয় লাখ মেট্রিক টন চাল নষ্ট হয়েছে। তবে এতে দেশের মোট খাদ্য উৎপাদনের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। কারণ, বৃষ্টি হওয়ায় দেশের অন্যান্য এলাকায় ধানের উৎপাদন বাড়বে।

যে যা-ই বলুন না কেন বাস্তবতা হলো, আমাদের দেশে ছুতানাতা একটা কিছু পেলেই সুযোগ নেয়ার চেষ্ট করে সুযোগসন্ধানীরা। ফসলহানি নিয়ে সেটা যেন না হতে পারে, সে ব্যাপারে সরকার ও প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনে চাল আমদানি করে ঘাটতি মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি রাখতে হবে। কেউ যেন এটা নিয়ে বাণিজ্য করতে না পারে, সেদিকে সতর্কদৃষ্টি রাখতে হবে।

অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে শেরপুরের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সেখানেও ফসলহানির ঘটনা কৃষকদের ভাবাচ্ছে। এসব এলাকায়ও একই ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ না করার কোনো বিকল্প নেই।। মনে রাখতে হবে যে কৃষকদের বদৌলতে আমাদের মুখের আহার ও জিডিপি বাড়ে, তাদের প্রতি সবার দায়বদ্ধতা রয়েছে। সে দায়বদ্ধতা থেকে হাওরাঞ্চলের বন্যাদুর্গত কৃষক ও কৃষক পরিবার রক্ষায় সবার এগিয়ে আসা সময়ে দাবি।
লেখক : সাধারণ সম্পাদক- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)
ই-মেইল : [email protected]

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন