প্রকৌশলী না হয়ে জেএমবির বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ?

  26-04-2017 07:08PM

পিএনএস ডেস্ক : এক যুগ আগে ২০০৫ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি হন মুশফিকুর রহমান। পড়াশোনা শেষ না করে বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতেন এই যুবক। জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আজ বুধবার সকালে রাজধানীর উত্তরায় নিজেদের বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ আইইডি ও দূরনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রসহ তাঁকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-১০-এর একটি দল।

র‍্যাব-১০-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর বলেন, মুশফিকুর রহমান ওরফে জেনী নামে এই যুবক জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বিশেষজ্ঞ। নাশকতার চেষ্টার মামলায় গত ২০ মার্চ গ্রেপ্তার হওয়া জেএমবি সদস্য ওয়ালী জামান ও আনোয়ার হলেন তাঁর সহযোগী। এই মামলায় এ পর্যন্ত মুশফিকুরসহ ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়ে জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর বলেন, মুশফিকুর যে ধরনের আইইডি তৈরি করতেন, প্রায় ১০০ মিটার দূরত্ব থেকে দূরনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটানো যেত। তিনি বড় ডিভাইস ও সার্কিট তৈরি করতে পারতেন। ঢাকা সেনানিবাসের পার্শ্ববর্তী একটি সরকারি স্থাপনায় নাশকতার পরিকল্পনা ছিল জেএমবির এই দলটির। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন মুশফিকুর।

র‍্যাব-১০-এর অধিনায়কের ভাষ্যমতে, বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে ভর্তি হলেও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে এখনো মুশফিকুর পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। তাঁর বাবা প্রকৌশলী মৃত রফিকুল ইসলাম ঢাকার মতিঝিল এলাকার দৃষ্টিনন্দন বেশ কিছু ভবনের নকশা করেছেন। র‍্যাবের এই কর্মকর্তার দাবি, ছেলের জঙ্গি কর্মকাণ্ডের কথা তাঁর মা অবগত ছিলেন।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, মুশফিকুরকে বাড্ডা থানার একটি নাশকতার চেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হবে। এ মামলায় এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া জেএমবির সদস্যদের স্বীকারোক্তিতে তাঁর নাম পাওয়া যায়। তবে কখন থেকে মুশফিকুর জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়েছেন, সে বিষয়ে তথ্য এখনো জানা যায়নি।

বুয়েটে ২০১৫ সালে গবেষণাপত্রে (থিসিস) বিদ্যুতের ‘স্মার্ট মিটার প্রজেক্ট’ নিয়ে কাজ শুরু করেন মুশফিকুর রহমান। বর্ধিত ফি জমা দিয়ে মুশফিকুর কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষে ছাত্রত্ব ধরে রেখেছিলেন বলে তাঁর শিক্ষকেরা জানান। মুশফিকুরের সহপাঠীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বুয়েটের শিক্ষক হয়ে গেছেন।

থিসিসে মুশফিকুরের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন আবদুল্লাহ আদনান। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ১৬০ ক্রেডিটের মধ্যে ১০৮ ক্রেডিট সম্পন্নের পর থিসিস নেওয়া যায়। থিসিসের ১৪টি ক্লাসের মধ্যে দুটিতে তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। ছাত্র হিসেবে কিছুটা খামখেয়ালি থাকলেও থিসিস ভালোভাবেই ২০১৬ সালে শেষ করেন তিনি। এরপর আবারও অনিয়মিত হয়ে যান মুশফিকুর।

মুশফিকুরের থিসিস প্রজেক্ট সম্পর্কে আবদুল্লাহ আদনান বলেন, বাসা-বাড়ির জন্য বিদ্যুতের মিটারের রিডিং দেখার জন্য এখন তো বাইরে থেকে লোক আসতে হয়। এই মিটারকে এমনভাবে স্মার্ট মিটারে রূপান্তর করা হয়েছে যে সার্ভারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিডিং চলে যাবে এবং সেখান থেকে বিল তৈরি হয় যাবে।

র‍্যাবের দাবির বিষয়ে মুশফিকুর রহমানের পরিবারের কোনো ভাষ্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন